জরিমানার টাকা না দিতে পেরে ওমানে আটকা পড়েছে ৭৩০০ বাংলাদেশি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০১৬, ৮:৩৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
ওমানের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীরা অ্যামনেস্টি চেয়ে সে দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে। তারা সংখ্যায় অন্তত ৭ হাজার ৩শ’ হবে। তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশিদের কোনো কাজ নেই। এবং তাদের ভিসার মেয়াদও ফুরিয়ে গেছে। এখন তারা সবাই বাড়িতে ফিরতে চায়। কিন্তু জরিমানার টাকা না দিতে পারার কারণে তারা দেশেও ফিরতে পারছেন না। তারা এখন এমন একটি সাধারণ ক্ষমা আশা করছেন, যাতে তারা কাজ পাবেন না। সে দেশে থাকতে পারবেন না। কিন্তু জরিমানার টাকা না দিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন।
গত ৩রা অক্টোবরে এই খবর দিয়েছে টাইমস অব ওমান। তারা অবৈধভাবে সে দেশে যত বেশি সময় ধরে থাকবে তত বেশি পরিমাণ জরিমানা গুনতে হবে। কাজ নেই, অর্থ নেই। অথচ তাদের ওপর চাপ জরিমানার অর্থ পরিশোধের। একজন বাংলাদেশি দূতাবাস কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন অ্যামনেস্টির ঘোষণা বাংলাদেশিদের জন্য খুব বেশি দরকার। কতিপয় শ্রমিক ইতিমধ্যে জরিমানার ফাঁদে পড়েছেন। ওমান ছেড়ে যাবার সময়টুকুর মঞ্জুরি মিলছে, জরিমানার অর্থ পরিশোধ করার অঙ্গীকার করে। মো. মিলন এবং আবদুল নাজির রাজ্জাক দুজন ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া বাংলাদেশি শ্রমিক। ৩রা অক্টোবর টাইমস অব ওমানকে তারা বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে কোথাও কোনো চাকরি মিলছে না। আমাদের বেশিরভাগ শ্রমিকেরই কোনো কাগজপত্র নেই। এর মধ্যে কিছু শ্রমিক খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বেশিরভাগ দিনই পেটে ক্ষুধা নিয়ে আমরা ঘুমাতে যাই। আমরা ওমানে আটকা পড়েছি। এখন শুধু অ্যামনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমাই আমাদের বাঁচাতে পারে। কারণ ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ অতিরিক্ত সময় থাকার জন্য জরিমানার অর্থ পরিশোধের ক্ষমতা আমাদের নেই।
ওমানের অ্যামনেস্টি হলো এমন একটি ব্যবস্থা, এর আওতায় ওমান সরকার অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের একটি বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। সেটা হলো- কাগজপত্র না থাকা এবং ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ অতিরিক্ত সময় অবস্থানের কারণে জরিমানার টাকা না দিয়ে দেশে ফিরে যাবার অধিকার লাভ করা।
ওমান বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে একজন ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ বিদেশি শ্রমিককে ২০ রিয়াল (৪ হাজার ৭৩ টাকা) জরিমানা দিতে হয়। এবং প্রতি মাসে ওমানে থাকার জরিমানার টাকা দেশটির জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি কাউন্টারে গিয়ে পরিশোধ করতে হয়। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ হলো ৩ হাজার ৮৭০ টাকা। মাসকাটের একজন আইন উপদেষ্টা দীপা সুধী বলেছেন, জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের কাউন্টারে প্রদেয় জরিমানার রিয়াল প্রতি মাসে গণনা করা হয়। কিন্তু ২৫ মাস পেরিয়ে গেলে কিংবা জরিমানার অঙ্ক ৫০০ রিয়ালে উন্নীত হলে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে জরিমানা আর গণনা করা হবে না। যদি কোনো শ্রমিক পলাতক অবস্থায় থাকে তখন তার কাছ থেকে অতিরিক্ত আরো ৪০০ রিয়াল পরিশোধ করতে হবে।
কোনো কাগজপত্র ছাড়াই মোহাম্মদ আছেন এখানে ২ বছর ধরে। তাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হলে প্রায় ৯৫৬ রিয়াল পরিশোধ করতে হবে। আবদুল নামে আরো একজন শ্রমিক যিনি গত ১০ মাস ধরে আছেন, তার জরিমানার অঙ্ক ৩৯০ রিয়াল। কিন্তু তাদের কারো কাছেই টাকা নেই।
একজন শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে ১১টা পর্যন্ত একটা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে থাকি। আশায় থাকি কেউ যেন কাজের জন্য ডাকে। আজকের দিনে কেউই ডাকেনি। অর্থ না থাকায় তাদের কাছে খাদ্য ও ওষুধ এখন বিরাট সমস্যা।
মোহাম্মদ এবং আবদুল উভয়ই বাংলাদেশ থেকে এজেন্টের মাধ্যমে তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে কিছু অর্থ সাহায্য পাচ্ছে। সেই অর্থ পুরোটা তারা পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগী একটা বড় অংশ নিয়ে নিচ্ছে। ২০ হাজার বাংলাদেশি টাকা পাঠানো হলে, শ্রমিকরা এখানে ৯৫ রিয়ালের বেশি পায় না। একজন পাকিস্তানি শ্রমিক বলেছেন, একই ধরনের পরিস্থিতি হাজার হাজার শ্রমিকের দিন কাটছে। এই পাকিস্তানি শ্রমিকটি কখনো তার স্পন্সরের দেখা পাননি।
বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি দরকার। তার কথায় যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই শত শত কর্মহীন শ্রমিক ওমানে দুরবস্থায় আছেন। এদের অধিকাংশই বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না, শুধুমাত্র জরিমানার টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হবার কারণে। সুতরাং একটি অ্যামনেস্টি ঘোষণা করা হলে, যারা ওভার স্টে করছে তারা দ্রুত দেশে ফিরে যেতে পারেন। আমরা সচেতন রয়েছি যে, এ ধরনের শ্রমিকের সংখ্যা কয়েক হাজার হবে। আমরা এখন পর্যন্ত ওমান সরকারের সহযোগিতায় শ্রমিকদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাদের জরিমানার টাকা ছাড়াই পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এটা সবার জন্য করা যাবে না।
সর্বশেষ অ্যামনেস্টি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৫ সালের ৩রা মে। প্রাথমিকভাবে এটা ৩ মাসের জন্য করা হয়েছিল। পরে তা ৬ মাসে উন্নীত করা হয়। জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে অ্যামনেস্টি কর্মসূচির আওতায় ২৩ হাজার ৬৫৩ জন শ্রমিক ওমান ত্যাগ করেছেন। ৬ মাস অ্যামনেস্টি কর্মসূচি চলাকালে ২৩ হাজার ১৮৬ জন বাংলাদেশি ওই সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ৭ হাজার ৩শ’ জন শ্রমিক সেই সুযোগ গ্রহণ করেননি। বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েলফেয়ার সেকশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা টাইমস অব ওমানকে বলেছেন, নিবন্ধনের পরে ৭ হাজার ৩শ’ শ্রমিক আর ফিরে আসেননি। বাংলাদেশি কমিউনিটির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এসব শ্রমিকের জন্য নতুন কোনো অ্যামনেস্টি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিবে। মো. সানাউল্লাহ নামের এই বাংলাদেশি সমজাকর্মী আরো উল্লেখ করেন যে, চাকরি ও খাদ্য সহায়তা নেই। অথচ তারা ওমানে আটকা পড়েছেন।