নিউ ইয়র্কে শেখ হাসিনার সভামঞ্চ ত্যাগের পর মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৮:৩৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
নিউ ইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মারামারিতে জড়ালেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারামারি, হৈ চৈ ও চেয়ার ছোড়াছুড়িতে উপস্থিত শিশুসহ নারী-পুরুষেরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এদিক-ওদিক দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে ‘ধর-ধর-সিদ্দিক ধর’, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ-সিদ্দিক তুই গেলি কই’ ইত্যাদি স্লোগানের মধ্যে বেশ কয়েক মিনিট ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
চেয়ার ছোড়াছুড়ির মধ্যে কয়েকজন নারীকে মিলনায়তনের মেঝেতে পড়ে যেতে দেখা যায়।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতের এ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেয়ে পুলিশ ডাকেন হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের নিরাপত্তা রক্ষীরা।
জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণের পরই রাত সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠানস্থলে আসেন শেখ হাসিনা। চার ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর পর উপস্থাপক স্বাগত বক্তব্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের নাম ঘোষণা করেন। মঞ্চের কাছাকাছি থাকা আজাদ যখন মাইক হাতে নিতে যান, সে সময় মঞ্চে শেখ হাসিনার পাশ থেকে উঠে এসে মাইক কেড়ে নেন সভাপতি সিদ্দিকুর। নিজেই মিনিটখানেকের স্বাগত বক্তব্য দিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বক্তব্যের আহ্বান জানান।
এ ঘটনার পরই মিলনায়তনে শুরু হয় উত্তেজনা। তবে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেওয়ায় সে সময় তা সংঘর্ষে গড়ায়নি। টানা ৫০ মিনিট বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। তার বক্তব্যে মাঝামাঝিতে মিলনায়তনের পেছনের অংশে গোলযোগ দেখা দিলে নিরাপত্তা রক্ষী এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ঢাকা থেকে আসা এসএসএফ সদস্যদের মধ্যস্থতায় তা মিটে যায়।
তবে বক্তব্য শেষে শেখ হাসিনা মঞ্চ ত্যাগের পরই ভিন্নরূপ নেয় পুরো মিলনায়তন। ছাত্রলীগের একদল কর্মীর মধ্যে কথা কাটাকাটির পর শুরু হয় মারপিট। দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে। মিলনায়তন ভরে যাওয়ায় অনুষ্ঠান চলাকালে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক প্রবাসীও এ সময় ভেতরে ঢুকে আয়োজকদের উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন।
এক পর্যায়ে এই গণ্ডগোল মিলনায়তনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হোটেলে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের অতিথিরাও সন্ত্রস্ত হয়ে এদিক-সেদিক ছোটেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবছর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন যোগদানকালে শেখ হাসিনাকে নিউ ইয়র্কে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে মিলনায়তনে একবার উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এসএসএফ সদস্যরা।
প্রতিবারই মঞ্চে বসেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারা। সর্বশেষ গত বছরই ৭৮ জন বসেছিলেন মঞ্চের পেছনে দুই সারিতে, বক্তব্য দেন তাদের ৩২ জন।
সে সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী যৌথভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। কয়েক মাস আগে সাজ্জাদকে অব্যাহতি দেওয়ার পর সংগঠনের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সামাদকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
শেখ হাসিনার এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনিই উপস্থাপনা করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। মঞ্চে স্থানীয় কাউকে না বসানোর বিষয়েও সমঝোতায় পৌঁছান অভ্যন্তরীণ কোন্দলে থাকা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারা।
সে অনুযায়ী শেখ হাসিনার পাশে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এবং উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী চৌধুরী বসেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগের নেতাদের বসানো হয় মঞ্চের সামনে দর্শক সারির পাশ দিয়ে। শেখ হাসিনার সফরসঙ্গীদের জন্য নির্দিষ্ট আসন রাখা হয়নি। ভিড়ের কারণে তাদের অনেকে মিলনায়তনেই ঢুকতে পারেননি।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান, নিউ ইয়র্কের ডেপুটি কন্সাল জেনারেল শাহেদ আহমেদ, সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী আতাউর রহমানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের শীর্ষ কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদেরও ঠেলাঠেলির মধ্যে মিলনায়তনে প্রবেশ করতে হয়।
মিলনায়তনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাজারখানেক প্রবাসীকে বাইরে অবস্থান করতে হয়। এসব নিয়ে শুরু থেকেই ক্ষোভ ছিল উপস্থিতদের মধ্যে।
“তবে শেখ হাসিনার প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি মিলনায়তনে থাকা পর্যন্ত কেউ কোনো উচ্চবাচ্য করেননি। আর এ সুযোগেই সিদ্দিকুর রহমান তার স্বৈরাচারি আচরণ পুরোদমে অব্যাহত রাখেন,” বলেছেন এক যুবলীগ কর্মী।
এম এ রহিম নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, “সারাবছর যারা দলের জন্যে কাজ করেন, তাদেরকেও নেত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো না। অন্যবার হোটেলে নেতা-কর্মীরা খণ্ড-খণ্ডভাবে সাক্ষাতের সুযোগ পান। এবার সেটিও করা হয়নি।”
তিন বছর মেয়াদের যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি এরইমধ্যে পাঁচ বছর পার করেছে। সম্মেলন আকাঙ্ক্ষী নেতা-কর্মীরা দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউ ইয়র্ক সফরের অপেক্ষায় ছিলেন।
তবে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ‘কারসাজিতে’ নেত্রীর সঙ্গে কেউই সাক্ষাতের সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ করেন নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার।
ছয় দশক ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনায় এমন হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি আগে কখনো দেখা যায়নি।