দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৭:৩০ অপরাহ্ণ
তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, মৌলভীবাজার: আইলে ভাদও, নাও পড়ে খাদও। অর্থাৎ ভাদ্র মাস এলে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নদীর বা খাদের কিনারায় পড়ে থাকে। হাওর এলাকায় এই প্রবাদটি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। চলতি বছর এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি তীরের মানুষ এবার স্মরণকালের দীর্ঘতম বন্যার কবলে পড়েছে। ভাদ্র মাস তো দুরের কথা আশ্বিণ মাসেও বন্যায় টুইটুম্বুর হাওর এলাকা। চলতি বছর বৈশাখ মাসের শুরুতেই ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে অকাল বন্যা দেখা দেয় হাকালুকি হাওর এলাকায়। সেই বন্যা আষাঢ় শ্রাবণ মাসে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ভাদ্র মাসে প্রকৃতির নিয়মে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কথা থাকলেও অবনতি ঘটে। ভাদ্র মাস পেরিয়ে আশ্বিন মাস, এখনও বন্যা পরিস্থিতি আগের মতই।
সরেজমিন হাকালুকি হাওরে দক্ষিণ তীর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কাড়েরা গ্রামের রেজিয়া, রেশমা, সবুজ, কানেহাত গ্রামের রফুল মিয়া, চান মিয়া, রজাক, চিলারকান্দি গ্রামের সমছু মিয়া, বশির মিয়া, জুনাব আলী, মখতই জানান, ইতোমধ্যে টানা বন্যার ৬মাস চলছে। দুটি ঈদ গেছে, মানুষ বন্যার কারণে রীতিমত ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি। তাদের জীবনে এত দীর্ঘদিন বন্যা দেখেননি। তাদের মতে, ভাদ্র মাসের ১৩ তারিখ শীতের জন্ম। আশ্বিন মাসে শীত আর কুয়াশা থাকে। কিন্তু এবার প্রকৃতি যেন বিরূপ আকার ধারণ করেছে। আশ্বিন মাসের মধ্যে বন্যার পানি না কমলে আগামী বোরো মৌসুমে এর প্রভাব পড়বে।হাকালুকি হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের মত কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়ন ছাড়াও বরমচাল, ভাটেরা ও ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় নাকাল। এছাড়াও হাওর তীরের জুড়ী উপজেলার জায়ফর নগর ও পশ্চিম জুড়ী। বড়লেখা উপজেলার বর্নি ও সুজানগর ইউনিয়নের মানুষ বন্যা কবলিত। এসব বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্দশার যেন শেষ নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা যায় স্কুল কলেজে। মানুষ দুর্ভোগের পাশাপাশি গবাদি পশুদেরও খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাদ্যাভাবে গবাদি পশুর মড়ক দেখা দিয়েছে। হাওর তীরের মৃত গবাদি পশুকে পানিতে ভাসিয়ে দেন স্থানীয় লোকজন। ফলে এসব গবাদি পশু পচে দুষিত হচ্ছে পানি। ফলে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হাওর তীরের মানুষ।