সিলেটে নব আবিষ্কৃত বৃহত্তম মনোরম জলারবন ‘মায়াবন’
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৪৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে উঁচু-নিচু পাহাড়ে ঘেরা ঢেউ খেলানো চা বাগান নিমিষেই পর্যটকের মন কেড়ে নেয়। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সিলেটকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে সীমান্ত উপজেলা গোয়াইনঘাটের নয়নাভিরাম পর্যটন স্পটগুলো।
বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, জাফলং আর রাতারগুল-এই জায়গাগুলো আগে থেকেই পর্যটকদের পছন্দের নাম। এবার পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করছে নব আবিষ্কৃত বৃহত্তম মনোরম জলারবন ‘মায়াবন’। ভরা বর্ষায় ছোট ডিঙি নৌকায় বৈঠা বেয়ে বনের ভেতর গেলেই পাখির কলকাকলি মুগ্ধতা ছড়ায়। এবারের ঈদের ছুটিতে মায়াবনের মায়াবী ইন্দ্রজালে পর্যটকদের আকর্ষণ ছিল বেশ লক্ষণীয়।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের চেয়ে ৩ গুণ বেশি বিস্তীর্ণ এই লোকেশনে ঈদের দিন বিকেল থেকে পর্যটকদের সমাগম লক্ষ করা গেছে। মায়াবনে প্রবেশের পর অন্তত ৪-৫ ঘণ্টার আগে কেউ বের হতে চান না। যোগাযোগ মাধ্যম সহজতর ও বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, লালাখাল ও জাফলংয়ের যাত্রাপথে অবস্থানের কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মায়াবন ছিল পর্যটকদের পদচারণায় মুখর।
মায়াবনে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। বর্ষায় মায়াবনের জলাভূমির মধ্যে কোমর ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি হিজল, জাম, বরুণ, করচ গাছের বিশাল বাগানটি এতই ঘন যে ভেতরের দিকে সূর্যের আলো গাছের পাতা ভেদ করে জল ছুঁতে পারে না। মায়াবনের গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়ায় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী আর পাখি। মাঝে মাঝে মৃদু বাতাসে জলাভূমির ছোট ঢেউ আছড়ে পড়ে গাছের সঙ্গে। হিরণ্ময় নীরবতার মাঝে সেসব শব্দে পর্যটকদের মুগ্ধ করছে মায়াবন। এখানে রয়েছে মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ঘুঘু, ফিঙে, বালিহাঁস, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি। বন্যপ্রাণীর মধ্যে আছে বানর, উদবিড়াল, কাঠবিড়ালি, মেছোবাঘ ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রজাতির গুইসাপ ও নানা ধরনের সাপের অভয়াশ্রমও এই বন।
উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নে জুগিরকান্দি হাওরে অবস্থিত এই নয়নাভিরাম বনের নাম স্থানীয়ভাবে দেওয়া হয়েছে ‘মায়াবন’। জুগিরকান্দি মৌজা মালিকানায় প্রায় ১ হাজার একর ভূমিজুড়ে বিস্তীর্ণ এই বন তার রূপের মায়াবী ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করছে। মায়াবনের নিবিড় প্রকৃতি মনকে নিয়ে যায় রূপকথার অজানা দেশে। বনের দক্ষিণ পাশে রয়েছে সারী-গোয়াইনঘাট পাকা সড়ক, উত্তরে সারী ও পিয়াইন নদীর মিলনস্থল। পূর্ব দিকে বিশাল বিলের মধ্যে শাপলা ও পদ্ম ফুলের সমারোহ। পশ্চিম দিকে দেশের অন্যতম মূর্তা বাগান।
সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক হয়ে ৩৭ কিমি অতিক্রম করার পর সারীঘাট হয়ে যেতে হয় মায়াবনে। সারী-গোয়াইনঘাট সড়ক দিয়ে সারীঘাট থেকে ৮ কিমি অতিক্রম করে বেখরা ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে নৌকা নিতে হয়। এখান থেকে ভাড়ায় চালিত পানসিতে (ছোট নৌকা) চড়ে বেখরা খাল হয়ে খালের দুই তীরজুড়ে শ্যামল চাদরে আবৃত বাংলার রূপ দেখতে দেখতে মিনিট দশেকের মধ্যেই প্রবেশ করা যায় মায়াবনে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা এখন পর্যটন নগরীতে পরিণত হয়েছে। বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা দিতে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ গোয়াইনঘাটবাসী সার্বক্ষণিক আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সালাহউদ্দিন বলেন, গোয়াইনঘাটে আসা পর্যটকদের কোনো অসুবিধা যাতে না হয় সেজন্য পুলিশসহ প্রশাসনও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। গতকাল আলীরগাঁও ইউনিয়নের যুগিরকান্দি এলাকাবাসীর সঙ্গে বসে নব আবিষ্কৃত পর্যটন এরিয়া মায়াবনে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।