লাইসেন্সবিহীন ফামের্সী ও ভূয়া ডাক্তার : ওসমানীনগরে প্রতারণার শিকার আড়াই লক্ষাধিক মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:২৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা হিসাবে খ্যাত ওসমানীনগরে লাইসেন্সবিহীন ফামের্সী ও ভূয়া ডাক্তারদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন উপজেলার বসবাসকারী প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলায় সরকারী কোন হাসপাতাল ও পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান না থাকায় বর্তমানে ভূয়া এমবিবিএস নামধারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। এলাকার বিভিন্ন হাট বাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী। ২০১১ সালের শেষের দিকে র্যাব-৯ উপজেলার বাণিজ্যিক প্রান কেন্দ্র গোয়ালাবাজারে অভিযান চালিয়ে ভূয়া এমবিবিএস ডিগ্রীধারী এস এম সেলিমসহ দুই প্রতারক চিকিৎসককে আটকের পর বেশ কিছু দিন উপজেলায় ভূয়া ডাক্তাররা গাঁ ডাকা দিয়েছিলেন। সম্প্রতি আবারও এসএম সেলিমসহ ঐ সব ভূয়া ডাক্তাররা এলাকার কিছু প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয়ে বানিজ্যিক প্রানকেন্দ্র গোয়ালা বাজারস্থ হাজি মার্কেটে নিজে মেডিসিনের বিজ্ঞ ডাক্তার হিসাবে চটকদার সাইনবোর্ড টানিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছেন। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার এলাকায় চেম্বার বসিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপন ও নিদিষ্ট দালালদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে সেবার নামে প্রতারণার ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন একাধিক ভূয়া ডাক্তার। অভিযোগ উঠেছে সিলেটের সিভিল সার্জন, বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক এ উপজেলায় লাইন্সেস বিহীন ফার্মেসী ও ভূয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কখনও কোন অভিযান পরিচালনা না হওয়ার ফলে এইসব ভূয়া ডাক্তারদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছে সাধারণ মানূষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠন থাকলেও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম না থাকায় অনেক কর্মকর্তা এখানে আসতে নারাজ। আর চাকুরীর তাগিদে আসলেও কয়েকদিন থেকে তারা অন্যস্থানে চলে যান। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়ছে লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসীর সংখ্যা। এর মধ্যে গোটি কয়েক ফামের্সী ছাড়া অধিকাংশ ফার্মেসীর লাইসেন্স নেই বলে নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লাইসেন্স বিহীন এসব ফামের্সীগুলোতে কোন প্রকান নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রেসক্রিপশন ছাড়াই দেদারছে বিক্রি হচ্ছে বিদেশী ঔষধ গাইনোকোসাইট, টার্গেট, সেনেগ্রা, ইডিগ্রা, ইন্ডিয়ান ডানো ইনজেকশন, ম্যথারজিন ট্যাবলেট, কাশির সিরাপ ফ্যানারগেন, কার্বলিন, হপকপ, নিকোলিড, কপরিড, ডেক্স প্রোটেন, ড্রাইডিল, টমিপেন, অফকপ, তুসকা, একপ সিরাপ ও ঘুমের ওষুধ ইজিয়াম, সেডিল, ইপাম, নকটিন, টেনিল, ফ্রিজিয়াম, সেডেক্স, সিডাকসিন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় বিক্রেতাদের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে। প্রকাশ্যে প্রেসক্রিপশন বিহীন এসব ওষুধ বিক্রি করে অসাধু ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা দ্বিগুন মূল্যও আদায় করছেন। এসব ফার্মেসিগুলোতে ডাক্তার হিসেবে যারা রোগীদের সেবা দেন তাদের মধ্যে একাধিক ডাক্তারাও ভূয়া এমবিবিএস ডিগ্রীধারী বা এলএমএফ, ডিএমএফ, এমপিবিডি, গাইনী ও মেডিসিনে অভিজ্ঞ দাবি করে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভুয়া ডাক্তাররা এলাকায় নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তাদের কাছে গিয়ে অপচিকিত্সার শিকার রোগীদের কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও ডাক্তাররা তাদের গড়া সিন্ডিকেট দলের সদস্যদের দিয়ে প্রতিবাদকারীদের বিভিন্ন মাধ্যমে হয়রানি করা হয়। অন্যদিকে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হলে প্রতারকদের দালালদের নিয়ে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি আপস করে থাকে।
এ ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত আলী বলেন, এ উপজেলায় এখন কোন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পদায়ন হয়নি। ফলে লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসী ও ভূয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে সমস্যা হচ্ছে।