তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বনাথ-সিলেট সদরের মধ্যে সংঘর্ষ : শতাধিক আহত,১৫ জন গুলিবিদ্ধ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৬:২৩ অপরাহ্ণ
বিশ্বনাথ সংবাদদাতাঃ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বনাথ ও সিলেট সদর উপজেলাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। এসময় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে প্রায় ৩ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০০ রাউন্ড শর্টগান ও ৩৪ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ঘটনা উভয় পক্ষে ১৫জন গুলিবিদ্ধ ও পুলিশসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গুরুতর আহদেরকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।সংঘর্ষের পর বিক্ষুব্ধ সিলেট সদর উপজেলাবাসী সুনামগঞ্জ গামী একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-জ ১১-০৮৪৫) ও একটি লেগুণা (সিলেট-থ ১১-২২৬৪) ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার বিকেলে লামাকাজী বাজার পয়েন্টে ফার্মেসীর সামনে অটোরিক্সা রাখা নিয়ে ফার্মেসীর মালিক সদর উপজেলার হাউসা গ্রামের আখতার হোসেন ও অটোরিক্সা ষ্ট্যান্ডের ম্যানেজার বিশ্বনাথ উপজেলার মির্জারগাঁও গ্রামের আব্দুশ শহিদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আখতার হোসেনের পক্ষ নিয়ে সদর উপজেলা ও আব্দুশ শহিদের পক্ষ নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলার এলাকাবাসীর মধ্যে গত ২দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছে। ফলে অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে লামাকাজী ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে পুলিশ মোতায়ের করা হয়।
সোমবার সকালে উভয় পক্ষ নদীর দুই তীরে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য দুই উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রশাসন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সম্বন্নয়ে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। এক পর্যায়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর কাছে এসে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য সমযোতা বৈঠকের প্রস্তাব দেন। তাতে বিশ্বনাথবাসীও সাড়া দেন। এরপর বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল সদর উপজেলাবাসীর কাছে যান। উভয় উপজেলার চেয়ারম্যান, উভয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ, রাজনৈতিক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সদর উপজেলাবাসীর কাছে আপোষ প্রস্তাব প্রদান করেন। উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দের কথাবার্তা চলাকালে সদর উপজেলাবাসীর একটি অংশ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর উপর হামলা করতে এমএ খান সেতুর উপর আসলে তা প্রতিরোধ করেন বিশ্বনাথবাসী। এসময় প্রায় দেড় ঘন্টা উভয় পক্ষের মধ্যে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এক পর্যায়ে বিশ্বনাথবাসীর প্রতিরোধে পিছু হটে সিলেট সদর উপজেলাবাসী। এসময় পুলিশ ব্রিজের মধ্যখানে অবস্থান নিয়ে দুই উপজেলাবাসীকে দু’দিকে সড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষের পূর্বে উভয় উপজেলায় অনুষ্ঠিত সমযোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার ফয়ছল মাহমূদ, সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (উত্তর সার্কেল) ধীরেন্দ্র মহা পাত্র, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর মাহবুবুল আলম, বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার, বিশ্বনাথ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম পিপিএম, গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া, উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক একেএম দুলাল, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নুর উদ্দিন, কান্দিগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, লামাকাজী ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া, দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমির আলী, রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর, খাজাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন, মোগলগাঁও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম টুনু, অলংকারীর ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল,
এদিকে, সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে বৈঠক করে সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, বিশ্বনাথবাসী সব সময় শান্তির পক্ষে। সিলেটবাসীও চান এলাকার পরিস্থিতি শান্ত থাকুক। সমাজের কিছু উশৃখল ব্যক্তির উসকানীমূলক আচরণের কারণে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।