বিএনপি নেতা শাহজাহানের অর্ধকোটি টাকার সংবর্ধনা, তৃণমূলের ক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৯:৫৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় মো. শাহজাহান প্রায় অর্ধ কোটি টাকা খরচ করে নোয়াখালীতে সংবর্ধনা নেয়ায় দলের নেতাকর্মীদের নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে। দলের এই বিপর্যয় মুহূর্তে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে রেখে যেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজের জন্মদিন পালন করেনি। এমন কি যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার পর সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নেতাকর্মীদের ফুলও গ্রহণ করেননি। সেখানে নবনির্বাচিত ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের একমাত্র মো. শাহজাহান সহস্রাধিক গাড়িবহর নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে সংবর্ধনা নিয়েছেন। নোয়াখালীতে প্রায় ১০ হাজার লোকের মেজবানের আয়োজন করেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, মো শাহজাহান নিজের ছেলের বিয়েতে দুই হাজার লোককে খাওয়াননি। কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর লাখ লাখ টাকা খরচ করে হাজার হাজার লোকের মেজবান আয়োজন করায় তার টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে বলছেন, সম্প্রতি উপজেলা ও ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য ও কমিটি বাণিজ্য নিয়ে মো. শাহজাহানসহ বিএনপির দপ্তরের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিল সেটা স্পষ্ট হয়েছে। এছাড়া বিগত আন্দোলনের মামলা-হামলার শিকার হাজার হাজার নেতাকর্মী এখনও প্রকাশ্যে আসতে পারেননি। গ্রেপ্তারের ভয়ে ফেরারি জীবন-যাপন করছেন তারা। সেখানে তার এভাবে সংবর্ধনা নেয়ায় নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এদিকে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর বেলাল আহমেদও একইভাবে সংবর্ধনা নিয়েছেন। নিজ দলের নেতা মুন্না হত্যার মামলার প্রধান আসামি হওয়ায় দীর্ঘ ১১ বছর ছাগলনাইয়ায় ঢুকতে পারেননি বেলাল। গত কয়েক বছর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি অনুষ্ঠানে তাকে স্টেজে উঠতে দেননি ছাগলনাইয়ার নেতাকর্মীরা। জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে আসা বেলাল দলের সহদপ্তর সম্পাদক হওয়ার পর হঠাৎ করে লাখ লাখ টাকা খরচ করায় তার টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, সম্প্রতি ঘোষিত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে মো. শাহজাহানকে ভাইস চেয়ারম্যান ও একই সিন্ডিকেটের নেতা বেলাল আহমেদকে সহ দপ্তর সম্পাদক করা হয়। এরপর গত শুক্রবার নোয়াখালী জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নামে সংবর্ধনার আয়োজন করেন তারা। শতাধিক তোরণ, ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয় এলাকা। ওই দিন সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর কলেজে তাদের সহস্রাধিক গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে ফুলেল সংবর্ধনা দেয়া হয়। রোববার মাইজদী শহরের হোয়াইট হলে ১০ হাজার লোকের মেজবানের আয়োজন করেন মো. শাহজাহান। দলের এই দুঃসময়ে অর্ধ কোটি টাকা খরচ করে সংবর্ধনা ও মেজবানের আয়োজন করায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা, ইউপি নির্বাচনের মনোনয়ন বাণিজ্য ও দলের কমিটি বাণিজ্যেও সাড়ে চার কোটি টাকা লেনদেনের হিসাব বিবরণী বিএনপির এক দপ্তর সম্পাদকের একাউন্টে পাওয়া যায়। ওই তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর বেরিয়ে আসে মনোনয়ন বাণিজ্যেও সিন্ডিকেটের নাম। সিন্ডিকেটের ওই তালিকায় ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ে দায়িত্বপালনকারী মো. শাহজাহান ও বেলাল আহমেদের নাম ছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে তাদের বাণিজ্যের খবর প্রকাশিত হলে খালেদা জিয়াকে তারা বলেন সরকারের এজেন্টরা এসব খবর প্রকাশ করিয়েছে। প্রায় ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির কোন নেতা এই প্রথম এত টাকা খরচ করে সংবর্ধনা ও মেজবানের আয়োজন করেন। এতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা মো. শাহজাহান ও বেলালের টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।