সাইফুর-ইলিয়াস-কমরকে ভূলে গেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২:০৯ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক, লন্ডন:
বিএনপির সিলেটের তিন নেতা সাইফুর, ইলিয়াস, ও কমর-কে ভুলেই গিয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশী রাজনীতিতে বরাবরই সিলেটিদের প্রাধান্য থাকে। তার উপর এই তিন নেতা বিএনপির নীতিনির্ধারক থাকায় যুক্তরাজ্যসহ বহির্বিশ্বের রাজনীতিতে তাদের পৃথক বলয় ছিল। সিলেটের রাজনীতিতে সাইফুর-ইলিয়াস দ্বন্ধ যুক্তরাজ্য বিএনপিতেও ছিল । সময়ের পরিবর্তনে তাদেরকে এখন ভুলেই গেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি।
সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের একজন ছিলেন । বাংলাদেশ তথা বহির্বিশ্বের রাজনীতিতে বিএনপির নেতা হতে নিতেন তার আশীর্বাদ। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রবীন এই নেতা মৃত্যুবরন করেন। গত কয়েকবছর নামমাত্র তার মৃত্যুবার্ষিকি পালন করা হলেও এবছর আর কেউ করেনি। সিলেট আন্তপ্রাণ এই নেতাকে ভুলে যাওয়ায় আক্ষেপ করেছেন অনেকেই । সাবেক ছাত্রনেতা সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ইলিয়াস আলীও ছিলেন বিএনপির নীতিনির্ধারকদের একজন। কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এই নেতা সাংগঠনিকভাবে গোটা দেশে বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাব খাটাতেন। তেমনি তার দিক নির্দেশনা শুনতো যুক্তরাজ্য বিএনপির বড় একটি অংশও । ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকায় গুম হয়ে যান বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতা । দেশে তার খুঁজে দলের সকল আন্দোলন সংগ্রাম যুক্তরাজ্য বিএনপিও পালন করে বিগত কয়েক বছর। বিএনপির যে কোন সভা সমাবেশে তার নামে স্লোগান উঠতো । তবে এখন আর তার নামে স্লোগান বা প্লেকার্ডে ‘উই উয়ান্ট ইলিয়াস আলী ব্যাক’ লেখা নিয়ে নেতাকর্মীদের মিছিল করতে দেখা যায়না । তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাজ্য বিএনপির এক নেতা জানান, ইলিয়াস আলীর নাম আমাদের হৃদয় থেকে কেউ কোনদিন মুছতে পারবেনা। তিনি গোটা সিলেট তথা বাংলাদেশের নেতা হওয়া সত্ত্বেও তার নির্বাচনী এলাকার কিছু মানুষ অতি উৎসাহী হয়ে তার নামে মুক্তি পরিষদ ঘঠন করে। সেখানে তারা অন্যান্য এলাকার নেতাকর্মীদের অবজ্ঞা করে উনাকে তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাদেরও কর্মসূচী কমে এসেছে। বর্তমান কমিটির অনেকেই একসময় ইলিয়াস অনুসারী হলেও তাদের নিয়োগ তারেক রহমান দ্বারা হওয়ায় তার কাছেও ইলিয়াস আলী আর গুরুত্বপুর্ন নয়।
কমর উদ্দিন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি হলেও দেশে দেশে বিএনপির কমিটি ও নেতাকর্মীদের মধ্য নিজের প্রভাব খাটাতেন। তার উপর লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে তার সম্পর্কের কারণে স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রভাব ছিল বেশী। ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল কমর উদ্দিন মৃত্যুবরন করেন। তার অনুসারীরা তার নামে স্মৃতি সংসদ করে প্রতিবছর তাকে স্মরন করলেও যুক্তরাজ্য বিএনপি তেমনভাবে মনে রাখেনি এই প্রবাসী নেতাকে। তার সংস্পর্শে অনেকেই যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা হয়েছেন কিন্তু তার নাম আর মনে রাখার প্রয়োজন মনে করেননা তারা।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারন সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ সুরমানিউজ টুয়েন্টিফোর.কমকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদেরকে ভূলার প্রশ্নই উঠেনা। যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচীতে সিলেটের এই তিন কৃতিসন্তানদের আমরা স্মরন করে থাকি। গত ৫ সেপ্টেম্বর আমরা সাইফুর রহমানের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছি। ইলিয়াস মুক্তি আন্দোলনে আমরা সামিল ছিলাম আগামীতেও থাকবো। তিনি একক কারো নেতা ছিলেননা। গোটা বাংলাদেশ তথা প্রবাসী নেতারা তার মুক্তি আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন।
যুক্তরাজ্য সেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন সুরমানিউজ টুয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, অস্বীকার করছিনা সময়ের বিবর্তনে তাদের আমরা ভূলতে বসেছি। তবে কিছু নেতাকর্মী আছে যারা এখনো তাদের অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরন করে। আমরা আমাদের প্রত্যেক বক্তব্যয় সিলেটের প্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর মুক্তির দাবী জানাই। স্মরন করি শ্রদ্ধেয় নেতা সাইফুর রহমানকে। আমরা ভূলে গেলে কি হবে,একজন সফল অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ হিসাবে ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।