সিলেটে রহস্যঘেরা মিজানুরের মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
ঈদের আগের রাত। নগরীর হাউজিং এস্টেট ফরিদবাগ এলাকা। রাত তখন ৯টা। হঠাৎ ফরিদবাগ রোড দিয়ে আগুনের কুণ্ডলী মতো বস্তু দৌড়াচ্ছিল। অনেকেই ‘ভূত’ মনে করে রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু না, আগুনের কুণ্ডলীর ভেতর থেকে আওয়াজ আসছিল। উপস্থিত লোকজনের অনুমান হলো এটি আগুনের কুণ্ডলী নয়, গায়ে আগুন নিয়ে কোনো মানুষ দৌড়াচ্ছে। ওই মানুষটিকে বাঁচাতে অনেকেই ছুটে গেলেন। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনে। এরপর ড্রেনের পানিতে যখন আগুন নিভে গেল, তখন দেখা গেল এলাকার যুবক মিজানুর কুণ্ডলী পাকানো আগুনে দগ্ধ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ডাক্তাররা জানালেন, মিজানুরের শরীরের সিংহভাগই পুড়ে গেছে। তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। পরে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মিজানুরকে নেওয়া হলো ঢাকা মেডিকেলে। মৃত্যুর সঙ্গে প্রায় ৫ দিন লড়ে মিজানুর শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। তার মৃত্যু নিয়ে এলাকায় এখন নানা রহস্য। প্রথমে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল মিজানুর নিজের শরীরে দুই লিটার কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছেন। গতকাল মারা যাওয়ার পর বলা হচ্ছে, গ্যাস সিলিন্ডারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সে মারা গেছেন। ওদিকে, গতকাল বাদ জোহর হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদে জানাজা শেষে মিজানুরের লাশ দাফন করা হয়েছে। মিজানুর রহমানের বয়স তিরিশের কাছাকাছি। সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেট ফরিদবাগ ৬ নম্বর বাসার বাসিন্দা সে। তার পিতা মৃত শফিকুর রহমান। মিজানুর একজন ক্রিকেটার ছিল। সিলেটের স্টেডিয়াম এলাকায় তার পরিচিতি ছিল। পাশাপাশি সে আম্বরখানা হুরায়া ম্যানশনের নিচ তলায় ফলের ব্যবসায়ী ছিল। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ঈদের আগের রাতে তারা হঠাৎ দেখেন রাস্তা দিয়ে আগুনের কুণ্ডলী দৌড়াচ্ছে। পরে তারা বুঝতে পারেন কোনো মানুষ শরীরে আগুন দেওয়া অবস্থায় দৌড়াচ্ছে। এরপর তারা অনেকটা জোর করেই তাকে ড্রেনের পানিতে ফেলেন। পরে মিজানুরের পরিবারের লোকজন এলাকাবাসীকে জানান নিজেই দুই লিটার কোরোসিন ঢেলে শরীরে আগুন দেয় মিজানুর। এরপর ওই আগুন নিয়ে দৌড় দেয়। একপর্যায়ে তাকে ড্রেনে ফেলা হলে আগুন নিভে যায়। কিন্তু তার আগেই মিজানুরের শরীরের সিংহভাগ অংশ পুড়ে যায়। এদিকে, ড্রেন থেকে উদ্ধার করে মিজানুর রহমান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাকে ঢাকায় রেফার করেন। ওই রাতেই মিজানুরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মিজানুর শুক্রবার সন্ধ্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। গতকাল সকালে মিজানুরের লাশ বাসায় নিয়ে আসা হয়। পরে সিলেটের দরগাস্থ কবরস্থানে দাফন করা হয়। গতকাল বিকালে মিজানুরের ভাই শামীম আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, মিজানুরের শরীরে আগুন দেওয়ার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। ফিরে এসে ঘটনাটি শুনেছেন। এরপর তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মিজানুর নিজে নিজের শরীরে আগুন দিয়েছিল বলে তিনি শুনেছেন। নগরীর ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী মানবজমিনকে জানান, মিজানুর গ্যাস সিলিন্ডারে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন। ঘটনার পরপরই তিনি এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না। সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, ওই এলাকায় কেউ দগ্ধ হওয়ার খবর তার কাছে আসেনি। তবে, কেউ দগ্ধ হলে লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া দাফন করা আইনত নয়। ঢাকা মেডিকেলে মারা গেলে সেখানেও লাশের ময়না তদন্ত হতে পারে। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন বলে জানান। তবে, মিজানুরের ভাই শামীম আহমদ জানিয়েছেন, লাশের ময়না তদন্ত হয়নি। মারা যাওয়ার পর তারা লাশ সিলেটে নিয়ে আসেন।-মানবজমিন