প্রসঙ্গ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ:উসমানপুর ইউনিয়ন এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১০:১৭ অপরাহ্ণ
সুহেল আহমেদ চৌধুরীঃ সম্প্রতি ফেইসবুকে একটি খবর প্রকাশ হয়েছে উসমানপুর ইউনিয়ন কে ওসমানীনগর উপজেলা থেকে কেটে বালাগঞ্জ উপজেলার সাথে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। খবরটিতে আর কিছু তথ্য সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি । প্রকৃত ঘটনা হল সরকার জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে জেলা পরিষদে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সেই মোতাবেক সিলেট জেলা কে ১৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে একজন করে সদস্য নির্বাচিত করা হবে । আর ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন কলেজ অব ইলেক্টোরাল এর সদস্যরা। এই কলেজ অব ইলেক্টোরালের সদস্য হবেন প্রতিটি জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি কর্পোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর; উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান; পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যরা।
যেহেতু পুরো সিলেট জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে, তাই ভোটার সংখ্যা সমন্বয় রাখার প্রয়োজনে অল্প বিস্তর সংযোজন বিয়োজন করতে হয়েছে এবং তা কেবল জেলা পরিষদের নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য। সিলেট জেলায় এখন ১৫টি উপজেলা রয়েছে, গঠিত ওয়ার্ড অনুযায়ী ৭ নাম্বার ওয়ার্ড বালাগঞ্জ উপজেলা এবং ৮ নং ওয়ার্ড ওসমানীনগর উপজেলা। উসমানপুর ইউনিয়ন যেহেতু ওসমানীনগর উপজেলায় নিয়মানুযায়ী ৮নং ওয়ার্ডে থাকার কথা ছিল কিন্তু ভোটার সংখ্যা সমন্বয় করতে উসমানপুর ইউনিয়ন কে ৭ নং ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
উসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে একটি আবেদন করা হয়েছে যেন উসমানপুর ইউনিয়ন কে ৮নং ওয়ার্ডের সাথে রাখা হয়। আজকে এ নিয়ে উসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদে একটি সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভা হয়েছে।
তাই প্রকৃত তথ্য জানার জন্য দ্বারস্থ হলাম স্থানীয় সরকারের যুগ্ম সচিব মোঃ মতিউর রহমান (যিনি সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী ছিলেন) ওসমানীনগর উপজেলা ইউএনও মোহাম্মদ শওকত আলী এবং উছমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল আজাদ ফারুক প্রমুখের কাছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য হল এই বিভাজন কেবল জেলা পরিষদ নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য।
অনির্ধারিত মেয়াদে ২০১১ সাল থেকে দেশের ৬১ জেলা পরিষদে এখন দলীয় নেতারা প্রশাসক পদে রয়েছেন। মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য হওয়া কিছু পরিষদে পুনর্নিয়োগ হয়েছে। জেলা পরিষদে প্রশাসক যুগের অবসান করে জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচন করার লক্ষ্যে শিগগিরই সব জেলা পরিষদে নির্বাচন দেয়ার চিন্তা করছে সরকার। সে লক্ষ্যে গত ৩০ আগস্ট মন্ত্রী সভায় এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন হয়। এই নির্বাচনের লক্ষ্যে ওয়ার্ড গঠন সাময়ীক বিভাজন।
জেলা পরিষদ আইন ২০০০ অনুযায়ী পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে ০১ (এক) জন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের ০৫ (পাঁচ) জন মহিলা সদস্য সমন্বয়ে পরিষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছিল। সে আইনে জেলা পরিষদ আইনে উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন সচিব প্রেষণে পরিষদে ন্যস্ত রাখার বিধান ছিল। জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান না থাকায় তার অনুপস্থিতিতে স্থানীয় সরকার কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ শাখার প্রজ্ঞাপন জারী হওয়ায় জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এর (৮২) ধারা মোতাবেক জেলা পরিষদ সমূহে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। জেলা পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার কর্তৃক নিযুক্ত প্রশাসকগণ জেলা পরিষদের কার্যাবলী সম্পাদন করবেন।
১৭৮২ সালের ৩ জানুয়ারি সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ছিল ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ঐ বছরেরই ১২ সেপ্টেম্বর নিসৃষ্ট আসাম প্রদেশের সাথে সিলেটকে সংযুক্ত করা হয়।
১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত(১৯০৫-১৯১১ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ সময়ের কালটুকু বাদ দিয়ে) সিলেট আসামের অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এর সাথে সম্পৃক্ত হয়। তখন প্রশাসনিক ভাবে সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।
১৯৮৩-৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠন এর সময় বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ০৪ (চার) টি নতুন জেলায় বিভক্ত করা হয়। এই নতুন জেলাগুলো হল : সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার।
১৯৯৫ সালের ১ আগস্ট সিলেট দেশের ষষ্ঠ বিভাগ হিসেবে মর্যাদা পায় এবং মূলত বৃহত্তর সিলেট জেলার সীমানাই নতুন সিলেট বিভাগের আওতাভুক্ত করা হয়।