ইইউ’র প্রথম বৃটেন-বিহীন সম্মেলন
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৭:২৫,অপরাহ্ন ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬
লন্ডন অফিস:
স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিসলাভায় মিলিত হতে যাচ্ছেন ইইউ নেতারা। এই বিশেষ ‘অনানুষ্ঠানিক’ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি সদস্যরাষ্ট্র অর্থাৎ বৃটেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ইইউ থেকে বৃটেনের প্রস্থান (ব্রেক্সিট) পরবর্তী ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে সম্মেলনটি ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানের চ্যালেঞ্জ উৎরাতে কী সংস্কার অবশ্যই নেয়া উচিৎ, তাও আলোচিত হবে সম্মেলনে। এ খবর দিয়েছে স্কাই নিউজ।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে এক সোজাসাপ্টা চিঠিতে ইউরোপীয় নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন যে, অভিবাসন সংকট হবে সম্মেলনের শীর্ষ এজেন্ডা। কারণ ইইউ নাগরিকরা মনে করছেন গত গ্রীষ্মে এ সংকট ‘সহনীয়তার চূড়া’য় পৌঁছেছে। তবে সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভবিষ্যৎ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন না নেতারা। তাদের বক্তব্য, আলোচনা শুরু হতে পারে কেবলমাত্র তখন, যখন বৃটেন আর্টিকেল ৫০-এর অধীনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করবে। তবে একদিনের এ সম্মেলনে ব্রেক্সিট প্রসঙ্গ আসবেই। ধারণা করা হচ্ছে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত মোকাবিলা ও শরণার্থী ইস্যুতে মতবিরোধ দেখা দেবে।
লন্ডন সহ ইইউ’র বহু রাজধানী সফর শেষে খোলা চিঠিতে ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, নিজেদের ঘাটতির মুখোমুখি হতে হবে ইইউকে। তার ভাষ্য, ‘যুক্তরাজ্যের গণভোটে নেতিবাচক ফলাফল শুধুমাত্র বৃটিশ ইস্যু এমনটা ভাবা হবে সর্বনাশা ভুল। প্রতিদিন লাখো ইউরোপিয়ান নিজেদেরকে যে প্রশ্নগুলো করে থাকেন, সেসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা হলো ব্রেক্সিট ভোটাভুট। এসব প্রশ্ন হলো নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, তাদের অঞ্চল, নিজ স্বার্থ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রা সুরক্ষা স¤পর্কিত।’ টাস্ক আরও লিখেন, ‘ইউরোপের জনগণ জানতে চান রাজনৈতিক এলিটরা কী সেসব ঘটনা ও প্রক্রিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম কিনা, যেগুলো তাদেরকে বিহ্বল, দিকভ্রান্ত ও মাঝেমাঝে আতঙ্কিত করে। শুধু যুক্তরাজ্যেই নয় আজকে অনেক মানুষ মনে করছে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার পথে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যতা।’
ব্রাতিসলাভার সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন টাস্ক। ইইউ সূত্রগুলো জানিয়েছে, অভিবাসন সংকট, সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি ও বিশ্বায়নের দরুন মানুষের মধ্যকার বিচ্ছিন্নতাবোধ হবে এজেন্ডার প্রধান তিনটি বিষয়। গত সপ্তাহে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাৎ করেন টাস্ক। আলোচনার ব্যাপারে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে।
ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কারের সুক্ষ্ম হস্তক্ষেপের পর টাস্ক ইইউর ভবিষ্যৎ নিয়ে আগ বাড়ালেন। জাঙ্কার বুধবার ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যদের (এমইপি) প্রতি বার্ষিক স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষনে বলেন ইইউ এক ‘অস্তিত্বের সংকটে’র মুখোমুখি। তবে তার বক্তব্যে ইইউ প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনের আহ্বান ছিল, যার দরুন ব্যপক সমালোচনাও তৈরি হয়। কারণ, এ পদক্ষেপটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত। অবশ্য জাঙ্কার স্লোভাকিয়া সহ মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে শরণার্থী ইস্যু নিয়ে বিদ্যমান উত্তেজনা নিরসনের চেষ্টা চালান। স্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট রবার্ট ফিসো এ সম্মেলনের আয়োজক।
পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও চেক রিপাবলিককে নিয়ে গঠিত ‘ভিসেগার্ড’ বা ভি৪ গ্রুপ ইউরোপে পৌঁছানো উদ্ধাস্তু মানুষের জন্য ইইউর দেশভিত্তিক কোটা সিস্টেমের বিরোধীতা করেছে। কিছু দেশ আবার এ সিস্টেম বাস্তবায়নে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
তবে আলোচনায় ইইউ জুড়ে অবাধ চলাচলের ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়ার প্রসঙ্গ থাকবে না। তবে ইইউ’র বহিঃসীমান্ত বাহিনী ও কোস্টগার্ড সহ কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সম্মত হতে পারে ইইউ। পাশাপাশি তুরস্ক সীমান্তবর্তী বুলগেরিয়ার জন্য আরও সহায়তার সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে। অবশ্য ইইউর একজন জ্যেষ্ঠ সূত্র জানিয়েছেন সম্মেলনে কঠিন অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কি সত্যিকারের ইস্যুগুলোর মুখোমুখি হতে চাই নাকি সুন্দর শব্দমালার পেছনে লুকাতে চাই? ব্রাতিসলাভায় সৎ আলোচনা আমরা এড়াতে পারি না। নেতারা সমস্যা খুঁজে বের করার যে সভা করবেন তা খুব দারুণ না হলেও, হতে হবে অকপট ও মুক্ত। তবে আমার আশা এ সভা শালীনভাবে হবে।’