মৌলভীবাজারে বৃদ্ধা খুনের নেপথ্যে প্রবাসী ছেলের স্ত্রীর ‘পরকীয়া’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:০৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রামের নিজ বাড়িতে ঈদের দিবাগত রাতে খুন হওয়া লন্ডন প্রবাসী ফাতির আলীর স্ত্রী মায়ারুন নেছা (৬৬) পুত্র মকসুদুল আলম সিপনের চতুর্থ স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে খুন হয়েছেন। বৃহস্পতিবার আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে পুত্রবধূ ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঈদের দিবাগত রাতের যে কোন এক সময় নিজ বাড়ির শোবার ঘরে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করা হয় মায়ারুন নেছাকে। পুলিশ পরদিন বুধবার সকালে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহতের পুত্রবধু ফাহিমা বেগম (৩০)কে আটক করে। বৃহস্পতিবার বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাসান জামানের আদালতে পুত্রবধূ ফাহিমা শ্বাশুড়িকে হত্যা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর পূর্বে বিয়ানীবাজার উপজেলার দাসউরা গ্রামের আব্দুস শহিদের মেয়ে ফাহিমার সাথে বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রামের ফাতির আলীর ছেলে মকসুদুল আলম সিপনের বিয়ে হয়। ফাহিমা ছিলো সিপনের চতুর্থ স্ত্রী। এর আগের অন্য তিনজন স্ত্রীদের সাথে তার তালাক হয়। বিয়ের কয়েকদিন পর স্বামীর এক বন্ধুর সাথে ফাহিমার পরিচয় হয়। স্বামীর ওই বন্ধু তাদের বাড়িতে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতো। বিয়ের কয়েক মাস পর সিপন লন্ডনে চলে গেলে ফাহিমার সাথে স্বামীর জনৈক বন্ধু মুঠোফোনে প্রায়ই কথা হতো।
গত ২৭ মার্চ সিপনের মা মায়ারুন নেছা লন্ডন থেকে দেশে আসেন। চান্দগ্রামের ওই বাড়িতে সিপনের প্রথম পক্ষের দুই ছেলে ও চতুর্থ স্ত্রী ফাহিমা থাকতেন। ঘটনার রাতে ওই ব্যক্তি ফাহিমাকে ফোন করে তার বাড়িতে আসেন। বাড়িতে অপরিচিত ব্যক্তির উপস্থিতির বিষয়টি টের পান শ্বাশুড়ি মায়ারুন নেছা। শ্বাশুড়ি অপরিচিত ব্যক্তির উপস্থিতির বিষয়টি টের পাওয়ায় ও পরিকিয়ার বিষয়টি জানাজানি হবার ভয়ে ওই ব্যক্তি নিজ শোবার ঘরে মায়ারুন নেছাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অমিতাভ দাস তালুকদার জানান, গৃহবধূ ফাহিমার স্বামীর অবর্তমানে এক ব্যক্তির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার রাতে ওই ব্যক্তি ফাহিমাকে ফোন করে তার বাড়িতে আসে। শ্বাশুড়ি বিষয়টি টের পাওয়ায় তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, তদন্তে ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পরকীয়ার ঘটনা জানাজানি হবার ভয়ে শ্বাশুড়িকে হত্যার ঘটনাটি প্রকাশ পায়। গৃহবধূ ফাহিমা হত্যায় জড়িত জনৈক ওই ব্যক্তির নাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে গণমাধ্যমের কাছে ওই ব্যক্তির নাম জানায়নি পুলিশ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঈদের দিবাগত রাত আনুমানিক তিনটা থেকে পুত্রবধু বিভিন্ন স্থানে একেক রকম তথ্য জানিয়ে ফোন করেন। কোন জায়গায় তার শ্বাশুড়ি ষ্ট্রোক করেছেন, কোন জায়গায় ডাকাতদের হামলায় মারা গেছেন আবার কোথাও শ্বাশুড়ির শরীর খারাপ জানিয়ে ফোন করেন।
স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে ভোরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এসময় পুলিশ ডাকাতির ও মালামাল লুটের কোন কোন আলামত পায়নি। পুত্রবধুর ভাষ্যমতে ২জন ডাকাত কলাপসিবল গেট ও দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবশে করে থাকে কচটেপ দিয়ে তার মুখ পেঁচিয়ে রাখে ও শাশুড়িকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। কিন্তু কলাপসিবল গেট ও দরজা ভাঙার কোন আলামত পাওয়া যায়নি। এ সময় পুত্রবধুর অসংলগ্ন কথাবার্তায় ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যা মনে করে প্রাথমিকভাবে পুলিশ সন্দেহজনক হিসেবে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ সহিদুর রহমান জানান, গৃহবধূ ফাহিমা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় গৃহবধূকে আসামী করে ২জনের নামে মামলা হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর আদালত হত্যাকাণ্ডের সহযোগী হিসেবে ফাহিমাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।