ব্রিটেনে উচ্চ শিক্ষা লাভে সরকারী সহায়তা বন্ধ : স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৫:৫১ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ ব্রিটেনে ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তার সরকারি দুয়ার একবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বিশেষ করে বাংলাদেশী সহ দরিদ্র-বঞ্চিত এলাকার শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে ।গত ১ আগস্ট থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। বর্তমান সরকারের এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ফলে সকল শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে সরকারি আর্থিক সহায়তা লাভের সুযোগটি হারাবেন। ব্রিটেনের স্কুল কলেজগুলোতে বিগত বছরের পরিক্ষায় বাংলাদেশীদের সাফল্য ছিল শতভাগ। উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় অনেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন এদেশের নামীদামী ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার। তাদের স্বপ্ন থমকে গেছে ব্রিটিশ সরকারের এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্তে।
বিনা খরচে উচ্চশিক্ষা লাভের ঐহিত্য দীর্ঘদিন অব্যাহত ছিলো ব্রিটেনে। ব্রিটিশ নাগরিক ইউনিভার্সিটি পড়ুয়াদের জন্য কোন কোর্স ফি ছিলো না। শুধু তা-ই নয়, উচ্চশিক্ষা অর্জনের সময়টিতে জীবনযাপনে ব্যয় মেটাতে শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের একটি বার্ষিক অনুদানের ব্যবস্থা ছিলো। শিক্ষার্থীর পারিবারের আয়নির্ভর এই অনুদান বিশেষ করে সমাজের অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া এবং দরিদ্র-বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য ছিলো বিরাট এক ভরসা। বছরে এর পরিমাণ ছিলো তিন হাজার পাউণ্ডের মতো। এই ব্যবস্থাটিকে স্বল্পআয়ের পরিবারের জন্য সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের একটি পদক্ষেপ হিসেবেও দেখা হতো। সন্দেহ নেই, গ্রান্ট বন্ধের এই নতুন সিদ্ধান্তে সমাজের তুলনামূলক দরিদ্র এবং স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে এবং পরিণামে তা দীর্ঘমেয়াদে বিদম্যান সামাজিক বৈষম্যকে আরও গভীর ও গুরুতর করে তুলবে।
বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেকেই বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন যে শুধুমাত্র ইংল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের জন্য এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার ফলে এটি বাঙালি কমিউনিটিতে ব্যাপক একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ, ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটির বেশিরভাগেরই বসবাস ইংল্যাণ্ডে। বিগত কয়েক দেড়-দুই দশক ধরে বাঙালি কমিউনিটিতে উচ্চশিক্ষা অর্জন আর সাফল্যের যে অগ্রগতি তা বাধাগ্রস্ত করে তুলতে পারে সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্ত তা বলা বাহুল্য।
রাজনীতির নানা ফেরে মাত্র কদিন আগে এদেশের আকস্মিক প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন টেরেসা মে। প্রধানমন্ত্রী হয়েই জর্জ অসবর্নকে তিনি দায়িত্ব থেকে সরালেন বটে কিন্তু গত ২০১৫ সালের বাজেট প্রস্তাবে জর্জ অসবর্নের পেশ করা বৈষম্যমূলক প্রস্তাবই বাস্তবায়ন করলেন নতুন প্রধানমন্ত্রী মে। ফলে এটি বলা যেতে পারে যে, দায়িত্ব নেওয়ার কালে তিনি সমাজের ‘বার্নিং ইনইক্যুয়ালিটি’ মোকাবেলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা তাঁর সরকারের এই গ্রান্ট বাতিলের পদক্ষেপ সমাজের একটি বিরাট অংশের জন্য প্রহসন হিসেবেই বিবেচিত হবে।
গত বছর এই গ্রান্ট বাতিলের ঘোষণা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলো। সে সময় স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এবং বিরোধী রাজনীতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের তীব্র বিরোধিতা থাকলেও এ সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত যখন কার্যকর হচ্ছে তখন দুঃখজনকভাবে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপিরা তাদের নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। তাদের সকল মনযোগ এখন নিবদ্ধ জেরিমি করবিন ঠেকাও প্রকল্পে।
টেরেসা মে সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের গ্রান্ট বন্ধ করে দিয়ে সেই পরিমাণ কিংবা তারও বেশি অর্থ ঋণ হিসেবে শিক্ষার্থীদের দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর সোজা অর্থ হচ্ছে- ইতিমধ্যে বিশাল অঙ্কের টিউশন ফির ঋণের বোঝার ওপর আরও নতুন এক বোঝা তাদের ঘাড়ে জবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়া হলো। পরিণামে দরিদ্র পরিবারগুলোর সন্তানদেরও আজীবন দরিদ্র থাকার একটি বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
কমিউনিটি নেতা হান্নান মিয়া বলেন, অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা বছরে ৯ হাজার পাউন্ডের টিউশন ফির দিয়ে তিন-চার বছর পর রীতিমতো এক মর্গেজের বোঝা মাথায় নিয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়। এ অবস্থায় মোটামুটি বেতনের চাকুরি পেলেও শিক্ষাজীবনের লোন মেটাতেই একজন শিক্ষার্থীর জীবনের উল্লেখযোগ্য একটি সময় পেরিয়ে যাবে। এর ওপর যখন একজন শিক্ষার্থী দেখবে, সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে তার আরও ১৫/২০ হাজার পাউণ্ডের বোঝা বেড়ে যাবে তখন তা স্বাভাবিতভাবেই তাকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথে নিরুৎসাহিত করবে।
সরকারের এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের বিরোধিতায় দাঁড়াতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদেরকেই। এক্ষেত্রে কমিউনিটির সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সমাজ আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পারেন।