গাজীপুর বয়লার বিস্ফোরণে আরো একজনের মৃত্যু, মৃতের সংখ্যা ৩৪
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৩:৪৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক :
গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ এ দাঁড়ালো। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত টাম্পাকো কারখানার লেদ সেকশনের ইনচার্জ মনোয়ার হোসেন (৪০) শরীয়তপুরের নড়িয়ার আনাখন্দ এলাকার মমতাজ উদ্দিন দেওয়ানের ছেলে।
মনোয়ারের ভাতিজা রবিউল বাশার সুজন জানান, শনিবার দুর্ঘটনার দিন কারখানার ধসে পড়া দেওয়ালে চাপা পড়েন তার চাচা। উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসা পেতে বিলম্ব হওয়ায় তাকে ধানমণ্ডির নর্দান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়ে অচেতন ছিলেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতে তার মৃত্যু হয়।
ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ সংবাদমাধ্যমকে জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে মনোয়ার হোসেনের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ট্যাম্পাকোর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টঙ্গী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন ভক্ত।ভস্মীভূত কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে সোমবার দুপুর একটার দিকে একটি এবং দুইটার দিকে অপর একটি লাশ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ জনে দাঁড়ায়। পরে নিখোঁজ তালিকার দুই শ্রমিকের লাশ শনাক্ত করেন তাদের স্বজনরা।
এর আগে রোববার দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম থেকে এ ঘটনায় ৯ জন নিখোঁজ থাকার কথা জানানো হয়। সোমবার সকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জন শ্রমিকের নাম নিখোঁজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নিখোঁজদের ওই তালিকায় বাকিরা হলেন- চাঁদপুরের কচুয়ার তেগরিয়া গ্রামের ইউনুস পাটোয়ারীর ছেলে সিনিয়র অপারেটর নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (৪৫), কুমিল্লার মুরাদনগরের টনকী গ্রামের মো. তোফায়েল হোসেনের প্রিন্টিং অপারেটর মাসুম আহমেদ (৩০), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের মেছেরা গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে ফ্লোর হেলপার মো. রফিকুল ইসলাম (৪০), মাগুরা সদরের চনপুর ইডারন গ্রামের আ. মালেক মোল্লার ছেলে সহকারী অপারেটর আজিমুদ্দিন (৩৬), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের উকুলকি গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে সহকারী অপারেটর জহিরুল ইসলাম (৩৭), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের শিবপুর গ্রামের মো. আবু তাহেরের ছেলে হেলপার রিয়াদ হোসেন মুরাদ (৩২), সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঝিগারবাড়িয়া গ্রামের সুলতান গাজীর ছেলে স্কুটিং অপারেটর মো. আনিছুর রহমান (৩০), রিদপুরের বোয়ালমারী থানার ভীমনগর এলাকার মোজাম মোল্লার ছেলে চুন্নু মোল্লা (২২), কারখানার অপারেটর রেদোয়ান আহমদ (৩৭) ও অপারেটর সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার আলীনগর এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে জয়নুল ইসলাম (৩৫)।
নিহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৭ জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন- রিপন দাশ, আনিসুর রহমান (৪০), আব্দুল হান্নান (৬৫), ইদ্রিস আলী (৪০), জাহাঙ্গীর আলম (২৪), মামুন (২৮), রোজিনা (২০), মিজান (২৮-৩০), সাইদুর রহমান (৫০), মাইনুদ্দিন (৩৫), আল মামুন (৪০), হাসান সিদ্দিকি (৩০), সোলেমান (৩২), এনামুল হক (২৮), রাশেদ (২৫), শঙ্কর সরকার (২৫), গোপাল দাস (২৫), রফিকুল ইসলাম (২৮), সুভাষ চন্দ্র প্রসাদ (৩৫),আশিক (১২), দেলোয়ার হোসেন (৫০), আনোয়ার হোসেন (৪০), ওয়াহিদুজ্জামান স্বপন (৩৫), তাহমিনা আক্তার (২০), রাজেশ বাবু (২২), মনোয়ার হোসেন (৪০) এবং ইসমাইল হোসেন (৪৫)।
অন্যদিকে রোববার গভীর রাতে এ ঘটনায় নিহত শ্রমিক জুয়েলের বাবা আবদুল কাদের বাদী হয়ে কারখানাটির মালিক ও বিএনপির সাবেক এমপি মকবুল আহমেদ লেচু মিয়াসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে টঙ্গী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকাল ৬টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস নামের একটি প্যাকেজিং কারখানায় রাতের শিফটে কাজ করার সময় বয়লার বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন।