ঈদ মানে শুন্যতা, ঈদ মানে না পাওয়ার কষ্ট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ
জুনেদ আহমদ, শাবি প্রতিনিধি:
ফজরের আযানের পর দল বেধে ছুটা-ছুটি,দলবেধে পুকুরে গোসল শেষ করে সামান্য মিষ্টি মুখ করে নতুন জামা কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আর নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ঢাক দিয়ে বলেনা সেমাই খেয়ে যাও। এখন আর নতুন জামা পরে সালাম করলে কেউ নতুন টাকার নোটগুলো হাতে উঠিয়ে দেয়না।
ঈদের দিন সবচে বেশি আমরা যে বাক্যটি উচ্চারণ করি, তা হচ্ছে ঈদ মোবারক’। সারাদিনে কম করে হলেও ৫০ বার ‘ঈদ মোবারক’ বলা হয়। বাংলাদেশে সাড়ে বারকোটি মুসলমান। যদি ধরে নিই ২ কোটি হচ্ছে বাচ্চা-কাচ্ছা, তবুও ঈদ মোবারক বলতে পারা লোকের সংখ্যা দশ কোটিরও বেশি। প্রত্যেকে যদি মাত্র ১০ বার করেও ঈদ মোবারক বলে, তাহলে শুধু বাংলাদেশেই ঈদের দিনে ঈদ মোবারক বলা হচ্ছে একশ কোটি! অথচ আমরা কি কখনো লক্ষ্য করে দেখেছি ঈদ কতজনের জন্য মোবারক হয়?
একটি ব্যাপার লক্ষ্য করুন, পশু কোরবানির ব্যাপারটি কিন্তু ধনী মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে, ফরয নয়। আপনি যদি ব্যক্তিগত জীবনে আপনার জন্য ফরয, এমন ব্যাপারগুলো সম্পর্কে উদাসীন হয়ে ওয়াজিব পূরণকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, তা আসলে ধর্মীয় দিক থেকে কতটা নৈতিক, তা নাহয় আপনিই বিবেচনা করুন। তবে কোরবানি এখন যতটা না ধর্মীয় দায়বোধ থেকে পালন করা হয়, তারচেয়ে অনেক বেশি পালন করা হয় মুসলিম সংস্কৃতির অংশ হিসেবে।
কোরবানি শব্দটির অর্থ হচ্ছেঃ উৎসর্গ, ত্যাগস্বীকার, বিসর্জন, পুণ্যলাভ বা সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের অধিকৃত মহার্ঘ্য কোন বস্তু ত্যাগ করা। কোরবানি কথাটার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাবহারটি আমি দেখি যখন কোন যোদ্ধা বা সৈনিক তাঁর মাতৃভূমির জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে। সৃষ্টিকর্তাকে ভালবেসে নিজের জন্য মূল্যবান কোন বস্তুকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে মূলত আমরা তাঁকে যে বার্তাটি প্রেরণ করি তা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমাদের ভালবাসা এতটাই প্রকট, যে যেই মুহূর্তে তিনি চাইবেন আমার জীবন তাঁর প্রতি উৎসর্গ করতে, ঠিক সেই মুহূর্তে এই পৃথিবীর লোভ ছেড়ে তাঁর উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে আমি এক বিন্দু দ্বিধাবোধ করবোনা।
শাবিপ্রবি লাইব্রেরী ভবনের গার্ড লিলু মিয়া(৫২) বলেন, ঈদ জিনিসটা যে কী তা বোঝার জন্য ছোটদের দিকে তাকাতে হয়,কেননা ছেলেবেলার প্রতিটি ঈদে সারাটা দিন অকারণেই মনটা খুশিতে ভরে থাকতো, ঈদের অনুভূতিটাকে মনে হত আমাদের পরিচিত সব অনুভূতি থেকে আলাদা, একটু পর পর মনে পড়ত ‘আজকে ঈদ…আজকে ঈদ!’
ঈদ মানে যদি হয়ে থাকে আনন্দ, ঈদের আনন্দ যদি হয়ে থাকে সার্বজনীন, তাহলে আনন্দের এই একটি দিনেও কেনো কিছু মানুষকে কষ্ট করতে হবে? আপনি জীবনে কখনো কোনো ভিক্ষুককে ঈদের দিনেও যদি ভিক্ষে করতে দেখে থাকেন, তাহলে আপনি আমার সাথে একমত না হয়ে পারেন না ঈদ অনেকের জন্য হলেও সকলের জন্য নয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ হচ্ছে প্রবাসিদের ঈদ কষ্ট, ফ্রান্স প্রবাসী মুতিউর রহমান মিলন পোস্ট করেন,বাবা মা বিহীন ঘর যেমন ঘর নয়। ঠিক তেমনি প্রবাসের ঈদ আসলে ঈদ নয়। তবুও বুকের ভিতর হাজারো কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে দেশের এবং প্রবাসের বন্ধুদের জানাই ‘ঈদ মোবারক’ ।
আমরা বলি ‘ঈদ মোবারক’। ‘মোবারক’ মানে বরকতময়। তাহলে শুধু পয়সাআলারা কেন বরকত পাবে? গরীব কেন পাবে না? ঈদ তখনই মোবারক হবে, যখন আমরা ধনী-গরীব, ছোট-বড় , সাদা কালো, সবাই প্রাণ খুলে হাসতে পারবো। ঈদ তখনই মোবারক হবে, যখন ঈদের দিনে অন্ততঃ কারো ঘরে খাবারের অভাব থাকবে না। চলুন আমরা সকলে মিলে ঈদকে সত্যিকার অর্থে মোবারক করে তুলি। তারপর আমরা বাংলাদেশের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে তৃপ্তির সাথে উচ্চারণ করি, ‘‘ঈদ মোবারক’’।