ভারতের সাথে আইসিসির তীব্র বিরোধ!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৪:২১ পূর্বাহ্ণ
স্পোর্টস ডেস্কঃ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিসিআই সরাসরি অভিযোগ করেছে, বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা আইসিসি তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আইসিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন বৈষম্যের অভিযোগ তুলে বিসিসিআই সভাপতি অনুরাগ ঠাকুর এমনও হুমকি দিয়েছেন যে প্রয়োজনে আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকেও ভারত নাম তুলে নেওয়ার কথা ভাববে। মাত্র কয়েকমাস আগেও আইসিসিতে ভারতের বিপুল প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে অনেক চর্চা হত, কিন্তু এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে এই দুই সংস্থার মধ্যে চরম সংঘাত শুরু হয়েছে। কিন্তু ভারতেরই প্রতিনিধি শশাঙ্ক মনোহর আইসিসি প্রধানের পদে থাকার পরও কীভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হল? আসলে গত মাত্র দু’তিনমাসের মধ্যে বিসিসিআই ও আইসিসি-র মধ্যে সম্পর্কে যে ক্রমশ অবনতি হয়েছে তা প্রায় অভাবনীয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ফিনান্স কমিটিতে জায়গা পাননি ভারতের কোনও প্রতিনিধি, এমন কী আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের জন্য আইসিসি ইংল্যান্ডকে যে পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে তাতেও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ভারতীয় বোর্ড – কারণ এ বছরের ওয়ার্ল্ড টিটোয়েন্টি আয়োজনের জন্য তারা তার ছিটেফোঁটাও পায়নি। এই সব বৈষম্যের জন্য বিসিসিআই সরাসরি দায়ী করছে একজন ভারতীয়কেই – তিনি আইসিসি-র বর্তমান চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহর। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে করে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর খোলাখুলি বলেছেন, “আমরা মনে করি বোর্ডের যখন শশাঙ্ক মনোহরকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল, সেই সঙ্কটে তিনি একটা ডুবন্ত জাহাজের ক্যাপ্টেনের মতো পালিয়েছিলেন। “তবে সে যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন বিশ্ব ক্রিকেটে আমরা অবশ্যই আমাদের স্বার্থ দেখব, পাশাপাশি ক্রিকেটের গ্লোবাল লিডার হিসেবে আমাদের পুরো বিশ্বে ক্রিকেটের স্বার্থও দেখতে হবে।” আর এই ‘স্বার্থ দেখা’ নিয়েই আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের মধ্যে এখন পদে পদে সংঘাত হচ্ছে। ভারতীয় বোর্ড যেমন মনে করে বিশ্ব ক্রিকেটের নেতা হিসেবে আইসিসির লভ্যাংশের ২২ শতাংশ তাদের প্রাপ্য – কিন্তু আইসিসি ১৫ শতাংশের বেশি দিতে রাজি নয়। আইসিসির সাবেক প্রধান এন শ্রীনিবাসনের আমলেই এই ২২ শতাংশের ফর্মুলা প্রস্তাব করা হয়েছিল, ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া এই ‘বিগ থ্রি’কে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাবেও পড়েছিল সিলমোহর। কিন্তু শ্রীনিবাসনের জমানায় আইসিসিতে ভারত অনায়াসে যে গুরুত্ব পাচ্ছিল, হঠাৎ করে তা বন্ধ হয়ে গেল কীভাবে? ক্রিকেট ভাষ্যকার ইন্দ্রনীল রায় বিবিসিকে বলছিলেন, “নানা বিতর্কে জড়িয়ে শ্রীনিবাসন এখন ক্রিকেট প্রশাসনের বাইরে ঠিকই – কিন্তু তার জায়গায় যিনি এসেছেন সেই শশাঙ্ক মনোহর যে নিজের কর্তৃত্বকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে পারবেন সেই ক্ষমতা তার কোনও দিনই ছিল না!”
“আর ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া সেই সুযোগটাকে পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছে ও আইসিসিতে তাদের ক্ষমতা জাহির করছে। আগে যেমন জগমোহন ডালমিয়া আইসিসির প্রেসিডেন্ট হয়ে সেখানে শ্বেতাঙ্গ দেশগুলোর আধিপত্য খর্ব করেছিলেন, এখন ঠিক সেই ঘটনারই উলটপুরাণ হচ্ছে,” বলেন ইন্দ্রনীল রায়। উলটপুরাণের অভিযোগ অবশ্য যথারীতি মানছেন না শশাঙ্ক মনোহর। প্রাক্তন সহকর্মী অনুরাগ ঠাকুরের অভিযোগের প্রকাশ্যে কোনও জবাব দেননি তিনি, কিন্তু এটুকু বলেছেন তার শুধু ভারতের স্বার্থ দেখলে চলবে না – কারণ আইসিসিতে তিনি শুধু একা ভারতের নন, ১০৬টি সদস্য দেশেরই চেয়ারম্যান। তবে ভারতের সঙ্গে আইসিসির সংঘাত যে চট করে থামছে না, তার ইঙ্গিত মিলেছে এ সপ্তাহেই আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসনের কথাতেই, যখন তিনি জানিয়েছেন টেস্ট-খেলিয়ে দেশগুলোর মধ্যে দুটো স্তর চালু করার প্রস্তাব বা টু-টিয়ার টেস্ট চালু করার ভাবনা থেকে তারা পুরোপুরি সরে আসছেন তা নয়।তিনি বলেছেন, “আপনারা জানেন টু-টিয়ার টেস্ট সিস্টেম নিয়ে সবাই একমত হতে পারেন নি। কিন্তু আমরা মনে করি এই বিষয়টা নিয়ে আরও অনেক আলোচনা হতে হবে। নেপাল, আফগানিস্তান বা আয়ার্ল্যান্ডের মতো দলগুলো ভাল খেললে যাতে সেরা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ম্যাচের সুযোগ পায় সেটাও আমাদের দেখতে হবে।” ক্রিকেট মহলে এটা সবারই জানা, ভারতের বিরোধিতাতেই আপাতত আটকে দেওয়া গেছে এই টু-টিয়ার সিস্টেম। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আইসিসি এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছে এই লড়াই এখানেই শেষ হচ্ছে না। বস্তুত আরও নানা বিষয় নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে যে অচিরেই দ্বন্দ্ব শুরু হতে যাচ্ছে তা দু’পক্ষের কথাবার্তা থেকে এখনই স্পষ্ট।