এবারও নিখোঁজ ইলিয়াস পরিবারের নিয়ম রক্ষার ঈদ!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মুসলমানদের জন্য ঘরে ঘরে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ঈদ। ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা থাকে পুরো দেশ। প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে চলে মানুষ। শত ব্যবস্থতার মাঝেও পরিবারের সাথে ঈদের সময়টুকু কাটাবেন এমনটাই প্রত্যাশা। প্রিয়জনরাও পথ চেয়ে বসে থাকেন প্রিয় মানুষটির জন্য, কখন আসবে সে। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে ৪বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম.ইলিয়াস আলী। একই সাথে সাথে নিখোঁজ রয়েছেন গাড়ী চালক আনছার আলীও। এরই মধ্যে কেটে গেছে ৮টি ঈদ। এখনও প্রিয় মানুষটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। র্যাব-পুলিশ কেউ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। থেমে গেছে উদ্ধার তৎপরতাও। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আত্মীয় স্বজনসহ পরিবারের সদস্যরাও জানেন না কোথায় আছেন তিনি। জীবিত না মৃত এ তথ্যও দিতে পারেনি রাষ্ট্র কিংবা সরকার। দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এল আরেকটি ঈদ। আর মাত্র একদিন পর বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে উদযাপিত হবে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল আযহা। ঈদের আমেজ নেই বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সাংসদ নিখোঁজ এম.ইলিয়াস আলীর পরিবারে। পরিবারের প্রিয় মানুষটি ছাড়া এ পরিবারের সকল সদস্যকে ৮বারের মত পালন করতে হবে ঈদ উৎসব। এ যেন ইলিয়াস পরিবারের নিরানন্দ ঈদ। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার পরিবারে নিয়ম রক্ষার্থে গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামধানা গ্রামে ঈদ উদ্যাপন করে আসছেন পরিবারের সকল সদস্যরা। এমনটি জানিয়েছেন ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা। ঈদকে ঘিরে ইলিয়াস পরিবারে এখনও কোন আনন্দ অনুভূতি নেই। ইলিয়াস আলীকে ঘিরেই তাদের ঈদের সব আনন্দ, যা এখন কেবলই স্মৃতি। ইলিয়াস আলীর পথ চেয়ে তার জনম দুঃখি মা, স্ত্রী-সন্তানেরা। এ নিয়ে ৮টি ঈদ কাটাতে যাচ্ছেন তার পরিবার। প্রায় সাড়ে ৪বছর আগে পরিবারের সদস্যদের কাছে ঈদ ছিল রঙ্গিন। আজ যা বর্ণহীন। আপনজন ছাড়া ঈদ যে কতটা নিরানন্দের তা শুধু ভোক্তভোগীরাই জানেন। প্রতিবছর ঈদে ইলিয়াস আলীর ছেলে-মেয়ে নিয়ে কেনাকাটার জন্য শপিং মহলে যেতেন। কখনও সন্তানের পছন্দে আবার কখনও নিজের পছন্দে জামা কিনে দিতেন নিজ হাতে। ছেলেদের সাথে নিয়ে গ্রামের বাড়ীর ঈদগাহে ঈদ জামায়াত আদায় করতেন এবং গ্রামের সকল মানুষের সাথে ঈদের কৌশল বিনিময় করতেন ইলিয়াস আলী। আজ এগুলো শুধু স্মৃতি। প্রিয় বাবার অনুপস্থিতিতে অনেকটা নিশ্চুপ ও শান্ত হয়ে গেছে ইলিয়াসকন্যা সাইয়ারা নাওয়াল। গত রোজার ঈদে সাইয়ারার বিশ্বাস ছিল তারা বাবা ফিলে আসবেন হয়তো সে বিশ্বাস ঈদে ছোট মেয়েটির মধ্যে কাজ করেছে। কথা হলো ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনার সাথে। তিনি জানালেন আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ বলতে কিছুই নেই। নিয়মরক্ষার্থে ও শুধু শাশুড়ীর সঙ্গে দেখা করতে বিশ্বনাথে আসা হয়। সেখানে কিছু দুস্থ পরিবারের মধ্যে যাকাতের কাপড় বন্ঠন করি ও পশু কুরবানি করি। আমরা ভাল নেই কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। তাই আমরাও কোনরকম জীবন পার করছি।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানী থেকে ব্যক্তিগত গাড়ীচালক আনসার আলীসহ রহস্য জনকভাবে ‘নিখোঁজ’ হন তিনি।