হজের খুৎবায় ঐক্যের আহ্বান
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০৫:৫২,অপরাহ্ন ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
রোববার হজের মূল অনুষ্ঠান মক্কার আরাফাতের ময়দানে খুৎবায় পৃথিবীর নানা প্রান্তের, নানা বর্ণের লাখো মুসলিমের সমাবেশে এই আহ্বান জানানো হয়।
আইএসের মতো উগ্র গোষ্ঠীকে নিয়ে মুসলিম দেশগুলোর সমস্যার মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ইরানের বর্জনের প্রেক্ষাপটে খুৎবা নিয়ে আসেন শেখ আবদুল রহমান আল-সুদাইস।
মসজিদুল হারামের এই ইমাম বলেন, নিজেদের মধ্যে যে সমস্যাগুলো রয়েছে, তার সমাধান করতে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের এক হতে হবে।
ইরানের বর্জনে বিশ্ব মুসলিমদের বার্ষিক সম্মিলন হজে এবার বিভেদের ছায়া পড়েছে। গত বার হজের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে মিনায় পদদলনে হতাহতের ঘটনার জন্য দুই দেশ পরস্পরকে দোষ দিয়ে আসছে।
সুন্নিপ্রধান রাষ্ট্র সৌদি আরব ওই ঘটনার জন্য শিয়াপ্রধান দেশ ইরানের হাজিদের দায়ী করলে তেহরানের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির জন্য রিয়াদকে দায়ী করা হয়।
এরপরা দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টির মধ্যে ইরান হজ বর্জনের ঘোষণা দেয়। সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আবার বিষয়টি তুললে সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শেখ ইরানিদের মুসলমানিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দুই রাষ্ট্রের মধ্যে এই টানাপড়েন চলার মধ্যে ইরান ছাড়া বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব থেকে ২০ লাখের বেশি মুসলিম এবার সৌদি আরবে হজে মিলিত হয়েছেন।
অসুস্থতার কারণে গ্রান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শেখের অনুপস্থিতিতে খুৎবা দিতে আসা কাবা শরিফের ইমাম আল-সুদাইস হজের মতো ধর্মীর অনুষ্ঠানকে ‘রাজনীতির বাইরে’ রাখতে সব মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানান।
সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশ না করতে এবং গুজব না ছাড়াতেও সংবাদ মাধ্যমকে পরামর্শ দেন তিনি।
আইএসের মতো ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বিষয়ে সচেতন থাকতে মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আল-সুদাইস বলেন, সন্ত্রাসবাদীদের কোনো ধর্ম নেই, কোনো দেশ নেই।
সন্ত্রাসবাদীরা যেন তরুণদের বিভ্রান্ত করতে না পারে, সেজন্য মুসলিম পণ্ডিত, ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে পরিবার প্রধানদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয় খুৎবায়।
অসুস্থতার কারণে খুৎবা না পড়লেও আরাফাতের ময়দানে একটি চেয়ারে বসেই খুৎবা শোনেন গ্রান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শেখ। মক্কার গভর্নর প্রিন্স খালিদ আল-ফয়সালও ছিলেন তার পাশে।
ময়দানজুড়ে শুভ্রপোশাকে মুসল্লিদের কণ্ঠে দিনভর ধ্বনিত হচ্ছিল-‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক’ ধ্বনি।
এর অর্থ হল, “আমি হাজির। হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই; সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।”
আরাফাতের ময়দানে রোববার খুৎবা এবং ইবাদতে মশগুল মুসলিমরা সোমবার মক্কায় ফিরে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন।
সৌদি আরবের সংবাদ মাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ১৬৪টি দেশের প্রায় ২০ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবার হজ করছেন, যাদের মধ্যে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি।
এই মুসলমানরা শুক্রবার মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) জুমার নামাজ পড়েন। পরে মক্কা থেকে তারা জড়ো হন ১০ কিলোমিটার দূরে তাঁবুনগরী মিনায়।
শনিবার মিনায় ইবাদতে রাত কাটানোর পাশাপাশি আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তারা জিকির করেন, নামাজ পড়েন জামায়াতের সঙ্গে।
রোববার আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে সন্ধ্যায় মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন তারা। মুজদালিফায় রাতে থাকার সময় তারা পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ছোড়া হবে।
সোমবার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুড়বেন। এরপর কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে হাজি হবেন তারা।
আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আবহাওয়া আরামদায়ক না হলেও হজ করতে আসা মুসলমানরা তা আমলে নিচ্ছেন না।
ভারত থেকে হজে যাওয়া তালাত আহমাদ বলেন, “এই অভিজ্ঞতা অসাধারণ। আমি রোমাঞ্চিত।”
এর আগে দুইবার ওমরাহ করলেও এই প্রথম হজ করছেন বলে জানান তালাত।
গতবারের দুটি দুর্ঘটনার পর মরক্কো থেকে আসা ৫৪ বছর বয়সী নাসের বেনফিত্তাহ এবারের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
হজ মওসুমের শুরুতেই গতবছর ১১ সেপ্টেম্বর মসজিদুল হারামের সংস্কার কাজের জন্য রাখা একটি ক্রেইন উল্টে ১১১ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে ২৫ জন ছিলেন বাংলাদেশি।
এরপর হজের শেষ মুহূর্তে ২৪ সেপ্টেম্বর মিনায় প্রতীকী শয়তানকে পাথর ছুড়তে যাওয়ার সময় ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।
বিভিন্ন দেশ তাদের নিহত নাগরিকদের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে নিহতের মোট সংখ্যা ২ হাজার ২৩৬ জনের বেশি।
তবে ঘটনার পর দুই দিনে ৭৬৯ জনের লাশ উদ্ধারের খবর দেওয়ার পর সৌদি আরব সরকার আর সেই তালিকা হালনাগাদ করেনি।
পদদলনে নিহতদের মধ্যে ১৩৭ জনকে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল সে সময়।
মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতের ময়দানে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। ১৪ শ’ বছরেরও বেশি সময় আগে এখানেই ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তার বিদায় হজের ভাষণ।
ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ।