যেভাবে ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের ঈদুল আযহা উদযাপন
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৩:০১ পূর্বাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ ঈদুল আযহা মানেই বেশ কয়েক দিন আগ থেকেই জায়গায় জায়গায় পশুর হাট, ট্রাকভর্তি গরু-ছাগল আনা নেওয়ার দৃশ্য। সঙ্গে আছে পশুর হাটের কারণে সৃষ্ট যানজটে মানুষের ভোগান্তি, সামর্থ্যের মধ্যে পছন্দের গরু কিনতে হাট থেকে হাটে ঘোরাঘুরি। এসবের মধ্যে আবার দেখা মেলে হঠাৎ গরুর রশি ধরে লোকদের বাড়ি ফেরার দৃশ্য। চলে জনে জনে আলোচনা কে কী কোরবানি দিচ্ছেন? কবে কিনছেন কোরবানির পশু? অবশেষে ঈদের দিন নামাজ শেষে পশু কোরবানি। অতঃপর কাটাকাটির পর চলে ভূরিভোজ। এটাই বাংলাদেশের কোরবানির ঈদের চিরায়ত দৃশ্য। আগামী সোমবার যুক্তরাজ্যে ঈদুল আযহা পালিত হবে। কিন্তু ভিন্ন জাতির ভিন্ন সংস্কৃতির যুক্তরাজ্যের মুসলমানরা কী একইভাবে কোরবানি দিবেন ? মোটেই না। এখানে পশুর হাট বসানোর সুযোগ যেমন নেই, তেমনি চাইলেও কেউ যেখানে সেখানে পশু জবাই দিতে পারবেন না। এখানকার মানুষ কোরবানির পশুর গোশত দেখেন, কিন্তু পশু দেখেন না। তাই বলে যে এখানকার মুসলমানদের মধ্যে কোরবানি দেওয়ায় অতৃপ্তি আছে, তা কিন্তু নয়। যুক্তরাজ্যে কেবল কিছু সুনির্দিষ্ট স্থানে (স্লটার হাউস বা ফার্ম হাউস) পশু জবাইয়ের অনুমতি রয়েছে। যে কারণে সাধারণ মানুষ চাইলেই পছন্দমতো পশু কিনে ইচ্ছেমতো স্থানে জবাই দিতে পারেন না। হালাল মাংস বিক্রি করে এমন দোকানগুলো মানুষের কাছ থেকে কোরবানির আদেশ (অর্ডার) নেয়। দোকানগুলো তাদের মাংস সরবরাহকারীর (সাপ্লায়ার) মাধ্যমে গ্রাহকের চাহিদামতো পশু কোরবানি দেয়। পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত হোয়াই চ্যাপেল ও ব্রিক লেন এলাকার বাংলাদেশি মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে কোরবানির বেশ জমজমাট ভাব দেখা গেল। মাংসের দোকানের মালিকরা বললেন, ‘অন্যের কোরবানির দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি ধর্মীয় দিক থেকে বেশ স্পর্শকাতর। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে কার কী নামে কোরবানি হবে, কে কয় ভাগ দিচ্ছেন এবং তাদের যোগাযোগের নম্বর লিখে রাখতে হচ্ছে।’ ঈদের দু এক সপ্তাহ আগ থেকে তাঁরা কোরবানির অর্ডার নেওয়া শুরু করেন। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩০ লাখ মুসলমানের বসবাস। দোকান মালিকেরা জানান, ভেড়া ও গরুর সমস্ত ওজন মেপে দাম নির্ধারণ হয়। প্রতিটি ভেড়া জন্য ১৪০ থেকে ১৬০ পাউন্ড (প্রায় ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা) এবং গরুর এক ভাগের জন্য দু শ থেকে আড়াই শ পাউন্ড (২৪ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা) পর্যন্ত মূল্য নিচ্ছেন তাঁরা। ভেড়া কোরবানির মাংস ঈদের দিন বিকেলেই গ্রাহক পেয়ে যান। কিন্তু গরুর মাংস আসে ঈদের পরের দিন। দোকানিরা জানান, একসঙ্গে এতগুলো পশুর চাহিদা মেটাতে তাঁরা রমফোর্ড, অক্সফোর্ড, বার্মিংহাম ল্যাঙ্কাশায়ার ও লেস্টারশায়ারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ফার্মহাউসগুলোতে পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করে থাকেন । তাই যথাযথ প্রক্রিয়া শেষ করে মাংস গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে কিছুটা সময় লাগে। তবে কিছু কিছু দোকান আছে যারা ঈদের নামাজ শেষ হওয়া মাত্রই গ্রাহকদের কোরবানির মাংস দেওয়া শুরু করে। যেহেতু ঈদের নামাজের আগে পশু কোরবানির বিধান নেই, তাই এসব দোকান যথাযথভাবে কোরবানির দায়িত্ব পালন করছে কি না-তা নিয়ে অনেকের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। বাঙালি দোকানগুলোর পাশাপাশি পাকিস্তানি, তুরস্ক কিংবা অন্যান্য দেশীয় হালাল মাংসের দোকানগুলোও পশু কোরবানির অর্ডার নিয়ে থাকে। যুক্তরাজ্যে মুসলমানদের উপস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ‘টেসকো’ কিংবা ‘আসডা’র মতো বহুজাতিক সুপারমার্কেটগুলোতে হালাল মাংসের কাউন্টার রাখা হয়েছে। এসব সুপারমার্কেট গুলোও বেশ কয়েক বছর যাবৎ পশু কোরবানির অর্ডার নিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা এখানে কোরবানি না দিয়ে বাংলাদেশে পশু কোরবানির ব্যবস্থা করেন। আবার অনেকে আছেন যাঁরা আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের মধ্যে কোরবানির কাঁচা মাংসও বিলান। যুক্তরাজ্যে কোরবানি দেওয়ার রীতি যতই ভিন্ন হোক, বাঙালি মুসলিমদের দলবেঁধে নামাজ পড়া, নামাজ শেষে কোলাকুলি কিংবা ঈদের আগের দিনের সূর্য অস্ত যাওয়া মাত্রই মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠানোর আমেজটা অটুট আছে ঠিক বাংলাদেশের মতোই।