ওসমানী প্রস্তুত তবে…
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
রানওয়ের নিরাপত্তার জন্য আরো ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে চায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে, যে রানওয়ে রয়েছে সেটি দিয়ে এখনই বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ অবতরণ করতে পারছে। একেবারেই উন্নতমানের সুবিধা যে রয়েছে তা নয়, তবে বিশ্বের মধ্যম আয়ের দেশের বিমানবন্দরের মতো মানের সেবা দিতে প্রস্তুত সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কিন্তু দুর্ভাগ্য সিলেটবাসীর। বিমানবন্দর প্রস্তুত থাকলে আন্তর্জাতিক মানের বাইরের উড়োজাহাজ কোম্পানি এখান থেকে সরাসরি যাওয়া-আসা করতে পারছে না। তারা আসতেও প্রস্তুত। বাদ সেধেছে দেশীয় কোম্পানি বিমান। তারা ওসমানীতে বাইরের কোম্পানিকে গ্রাউন্ড সার্ভিস দিচ্ছে না। ইতিমধ্যে ফ্লাই দুবাই, এয়ার এরাবিয়াসহ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানির উড়োজাহাজ গ্রাউন্ড সার্ভিসের ব্যাপারে আলোচনা চালালেও বিমানের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি। ভৌগোলিক কারণেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। একদিকে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী বসবাস করে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ফলে তাদের যাতায়াতের জন্য একমাত্র পথই হচ্ছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পাশাপাশি ভারতের সেভেন সিস্টারের শিলং, আসামের কিছু অংশের কাছাকাছি হচ্ছে এই বিমানবন্দর। কয়েক মাস আগে ভারতে কানেকটিভিটি সামিটে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের আলোচনায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গুরুত্ব উঠে এসেছে। এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের সঙ্গে মেঘালয়ের ব্যবসায়ীরা এই বিমানবন্দর ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় ওই দেশের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যাতায়াতের সুবিধার্থে তারা ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে বহির্বিশ্বে যাতায়াতের রুট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সেই বিষয়টি এখনো আলোচনায় রয়েছে। মেঘালয় কিংবা আসামের কিছু অংশের প্যাসেঞ্জার ছাড়াও সিলেটের প্যাসেঞ্জারের সংখ্যা কম নয়। ট্রাভেলস এজেন্সির মালিকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সিলেটের ৫ থেকে ৭শ যাত্রী বহির্বিশ্বে যাতায়াত করেন। তবে, দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের সিলেটিরা বাংলাদেশ বিমানে সরাসরি লন্ডন, দোহা, দুবাই, রিয়াদসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসতে পারছেন। যাওয়ার সময় তাদের ঢাকা ছুঁয়েই যেতে হয় কর্মস্থল বিদেশে। এতে আসার ক্ষেত্রে কোনো ভোগান্তি না থাকলেও যাওয়ার ক্ষেত্রে সিলেটি যাত্রীদের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। এ নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই প্রবাসী যাত্রীদের। পাশাপাশি যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা সিলেট থেকে কানেকটিং ফ্লাইটও পান না। এজন্য অনেককেই বাধ্য হয়েই সড়ক পথে যেতে হয়। সিলেটের ট্রাভেলস এজেন্সির মালিকরা জানিয়েছেন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় প্রায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানী বিমানবন্দরে নির্মিত হয়েছে রিফুয়েলিং সিস্টেম। ওই সিস্টেম চালু হওয়ার পর দুবাই থেকে সরাসরি ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট গেল বছর ওসমানীতে অবতরণ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ গ্রাউন্ড সার্ভিস না দেয়ায় বাধ্য হয়ে ঢাকা গিয়ে এ সার্ভিসটি নিতে হয়েছে। ওই সময় এয়ার এরাবিয়া আসতে চাইলেও গ্রাউন্ড সার্ভিস জটিলতার কারণে আসতে পারেনি। তারা জানিয়েছেন, এয়ার এরাবিয়া, ফ্লাই দুবাইসহ কয়েকটি বিদেশি উড়োজাহাজ কোম্পানি ঢাকা না ছুঁয়ে সিলেট থেকে সরাসরি বহির্বিশ্বে ফ্লাইট চালুর প্রস্তাব জানিয়ে আলোচনা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান থেকে অসহযোগিতার কারণে সেটি হয়নি। ফলে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশি কোম্পানির উড়োজাহাজ আসার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। এই বিমানবন্দরেই বাংলাদেশ বিমানের বড় আকারের এয়ারবাস বোয়িং ৭৭৭ বিমান এসে অবতরণ করছে। মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রায় সব দিনই ৫-৬টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এসে নামছে। কিন্তু সব উড়োজাহাজই হচ্ছে বাংলাদেশ বিমানের। অভ্যন্তরীণ রুটে কেবল বেসরকারি মালিকানাধীন ছোট কয়েকটি উড়োজাহাজ চলাচল করে। ওদিকে, এবার সিলেটের হজযাত্রীরা সরাসরি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রিয়াদের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পেরেছেন। গেল কয়েক দিনে ওসমানী থেকে ৪টি হজ ফ্লাইট সিলেট ছেড়ে চলে গেছে। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিমান রাজনীতির বৃত্তে বন্দি হয়ে পড়েছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস আগে রানওয়েকে আরো নিরাপদ করতে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ উদ্দিন আরো ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণের দাবি জানিয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেছেন। পত্রটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও পৌঁছানোর কথা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরো রানওয়ে বাড়াতে হবে। যেটি রয়েছে সেটিতেও এসে অবতরণ করছে বোয়িং ৭৭৭। তবে, রানওয়ের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য আরো কিছু জমি প্রয়োজন। এ কারণে এ প্রস্তাব সিভিল এভিয়েশনের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার কথা রয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্টরা। এ মুহূর্তে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। বিজিবির ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় রয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ, সিভিল এভিয়েশনসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতরা প্রায় সময় অতিরিক্ত ডিউটি পালন করে থাকেন। ভেতরে ও বাইরের নিরাপত্তায় যাত্রীদের মনে স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে, যাত্রী, উড়োজাহাজ, রানওয়ে সবকিছুর জন্য ওসমানীতে যে লোকবল রয়েছে সেটি পর্যাপ্ত নয়। প্রয়োজনের এক-চতুর্থাংশ লোকবল দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি ওসমানীতে একটি ‘স্মার্ট রেস্টুরেন্ট’, পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক এটিএম বুথ, স্পেশাল ভিআইপি লাউন্স প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য উন্নত দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে এগুলো রয়েছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাফিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন ব্যস্ত বিমানবন্দর হয়ে পড়েছে। হাইসিকিউরিটি নিশ্চিত করা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন যাত্রী সেবায় কোনো গাফলতি করছে না বলে জানান তিনি।
শিপার এনজিএ চালু: সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য বিশেষ সার্ভিস চালু করেছে শিপার এয়ারওয়েজ। ওসমানী বিমানবন্দরের ভেতরে যাত্রীদের সহায়তা প্রদানের জন্য ১লা সেপ্টেম্বর থেকে এই সেবা চালু হয়েছে। ‘শিপার মিট গ্রিট অ্যান্ড এসিস্ট’ নামের ওই কোম্পানি বিমানবন্দরের ভেতরে যাত্রীদের নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। আসার পথে কিংবা যাওয়ার পথে যাত্রীরা ৩০০ টাকার বিনিময়ে এই সার্ভিস গ্রহণ করতে পারবেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও মহিলা যাত্রীরা এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। গতকাল শিপার এনজিএ’র পরিচালক খন্দকার ইসরার আহমদ রকি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও একইভাবে বেসরকারি তত্ত্বাবধানে সার্ভিস চালু ছিল। এখন সিলেটে আমরা শুরু করেছি। অসুস্থ, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষকে সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। সিলেটি যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই এই সেবা চালু করা হয়েছে।’- মানবজমিন