মাধবপুরে ট্রিপল মার্ডার: দেশে ফেরা নিয়ে আতঙ্কে আরিফ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১০:২১ অপরাহ্ণ
মাধবপুর প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের বীরসিংহপাড়ায় ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় মাকে হারিয়ে একদিকে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে আরিফ। অন্যদিকে দেশে ফিরলে তার নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে আতঙ্কে। মাকে শেষবারের মত একবার দেখতেও পারেনি আরিফ। সদুর জার্মান থেকে স্বজনদের মাধ্যমে যখন খবর পান তার চাচা তাহের উদ্দিন মা, বোন ও প্রতিবেশীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে, তখন আরিফ কর্মস্তলে ব্যস্ত। প্রথমে তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি। পরে যখন অনলাইন ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মা, বোনকে হত্যার খবর দেখতে পান, তখন বুকফাটা আর্তনাদ শুরু করেন। চাচার ছুরিকাঘাতে আপন ছোট ভাই সুজাত মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ঘাতকের স্বজনরা সুজাতকে মারার পরিকল্পনা করছে ।
আরিফের পিতা গিয়াস উদ্দিন সৌদি থেকে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দেশে ফিরে হবিগঞ্জ বিচারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ছোট ছেলের দেখভাল আর মামলা নিয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে অনেকটা হাফিয়ে উঠেছেন গিয়াস উদ্দিন। স্ত্রী ও কন্যার মৃত্যুতে এমনিতেই ভেঙ্গে পড়েছেন গিয়াস উদ্দিন। এখন তিনি চোখে অন্ধকার দেখছেন। আহত ছোট ভাই ও পিতার পাশে দাঁড়াতে দেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন আরিফ। কারণ ঘাতকের লোকজন তার উপরও হামলা করতে পারে। এই ভয়ে তিনি মা, বোন হত্যার শোক বুকে নিয়ে পড়ে আছেন সদুর জার্মানে। এ প্রতিনিধিকে আরিফ জার্মান থেকে ফোনে জানান, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আরিফের ৭ চাচা মিলে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আরিফকে গুম করে ফেলতে চেয়েছিল। তাদের পরিকল্পনার কথা আরিফের মা শুনে ছেলেকে নানা বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
নানার বাড়ি থেকেই আরিফকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাই আরিফের উপর প্রতিশোধ নিতে না পেরে তার চাচা মা ও বোনকে হত্যা করে। এতে তার ছোট ভাই সুজাত আহত হয়। আরিফ জানান, তার চাচা প্রায়ই তার মাকে হুমকি দিত যে, আরিফ দেশে আসলে তাকে হত্যা করবে। ঘাতকরা তার ভাইকে হত্যা করে মামলার ইতি ঘটাতে পারে। কারণ ট্রিপল মার্ডারের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী তার ছোট ভাই সুজাত।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন- এই ঘটনার পর দেশে আসলে ঘাতকের লোকজন তার উপরও হামলা করতে পারে। তাই তিনি জীবনের নিরাপত্তার জন্য দেশে আসতে পারছেন না। তবে ফোনে তার পিতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
গত ২৩ আগস্ট উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের বীরসিংহপাড়া গ্রামে জমিজমা ও টাকা পয়সা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ওই গ্রামের তাহের মিয়া তার ভাবি ,ভাতিজি ও প্রতিবেশী এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ সময় তার ভাতিজা সুজাত এগিয়ে আসলে ঘাতক চাচা তার উপরও হামলা করে। এতে সুজাত গুরুতর আহত হলে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা সোহরাওয়াদী হাসপাতালে ভর্তি করেন। সুজাত সোহরাওয়াদী হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় থানা ও আদালতে মোট ৪ টি মামলা হয়েছে।