সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ‘জঙ্গিবাদে’ জাহিদুল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১:৫০ পূর্বাহ্ণ
নিউজ ডেস্ক :
ঢাকার রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত ‘জঙ্গি’ সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা, যিনি দুই বছর আগে কানাডা থেকে ফেরার পর চাকরি ছেড়েছিলেন। শুক্রবার রাতে গোলাগুলিতে মৃত্যু হওয়ার পর পুলিশ তার নাম মুরাদ ওরফে ওমর ওরফে জাহাঙ্গীর বললেও তার আসল নাম মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। বাড়ি কুমিল্লা সদরের পাঁচথুবীর পশ্চিম চাঁন্দপুর প্রাইমারি স্কুল রোডে। তার বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক নুরুল ইসলাম।
জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন। পুলিশ বলছে, সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা ‘নব্য জেএমবি’র শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ছিলেন। তিনি এই জঙ্গি গোষ্ঠীর সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারীদের জাহিদুলই প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন বলে সন্দেহ তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। জাহিদুলের ভাই জহিরুল ইসলাম ঢাকায় একটি ইলেকট্রনিক পণ্যের আউটলেটে বিক্রয় কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
তিনি রবিবার রাতে দেশে একটি শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টালকে বলেন, তার ভাই সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন। ২০১৪ সালে চাকরিতে থাকার সময় কানাডা গিয়েছিলেন। “পরে ভাল লাগছে না বলে চাকরি ছেড়ে দেন।” গত তিন থেকে চার মাস ভাইয়ের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না বলে দাবি করেন জহিরুল।
গত ১৭ অগাস্ট নারায়ণগঞ্জের একটি বাড়িতে পুলিশি অভিযানে নিহত তামিম চৌধুরী ছিলেন কানাডা প্রবাসী। গুলশান হামলার ‘হোতা’ তামিম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জেএমবিকে নতুন করে সংগঠিত করেছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
কানাডায় জন্ম নেওয়া তামিমের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানিবাজার উপজেলায়। তার দাদা প্রয়াত আব্দুল মজিদ চৌধুরী একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে স্থানীয়দের তথ্য।
জাহিদের বাবা নুরুল ইসলাম ১৯৮৫ সালে কুমিল্লায় বাড়ি করলেও তাদের আদি নিবাস সিলেট বলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান। তিনি বলছেন, জাহিদুল সর্বশেষ প্রায় সাত মাস আগে কুমিল্লার বাড়িতে এসেছিলেন।
নুরুল ইসলাম গত রোজার সময় মসজিদে বসে ছেলের সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে কানাডা যাওয়ার কথা বলেছিলেন বলে স্থানীয়দের কয়েকজন জানান।
জাহিদের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান ওই নিউজ পোর্টালকে বলেন, “মেজর মুরাদ বা জাহাঙ্গীর নামে কেউ সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাননি। তবে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে জাহিদুল ইসলাম নামের একজন মেজর অবসরে যান।”
তিনি বলেন, জাহিদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি সেনা কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করে দেখছে।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন শুক্রবার অভিযানের পর জানান, সাবেক এই সেনা সদস্য সংগঠনে মেজর মুরাদ নামে পরিচিত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তামিমদের আস্তানায় অভিযানের আগে তিনিও ওই বাসায় ছিলেন। “ধারণা করা হচ্ছে, অভিযানের আগে সে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।”
ওই অভিযানে তামিমসহ তিন জঙ্গি নিহত হওয়ার পরদিন জাহিদ পরিবার নিয়ে রূপনগরের বাসা থেকে সরে পড়ে বলে জানান ছানোয়ার। এরপর গোয়েন্দা বাসাটিতে গিয়ে তাকে না পেয়ে ফিরে আসে। পরে শুক্রবার তার বাসায় আসার কথা জানতে পেরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
রূপনগরের ৩৩ নম্বর সড়কের ছয়তলা বাড়ির ষষ্ঠতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন জাহিদুল। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত পল্লবী থানাধীন মিরপুর সেনানিবাস উল্লেখ রয়েছে। তার জন্মতারিখ দেওয়া আছে ১৯৭৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। পেশা হিসেবে সরকারি চাকরি লেখা রয়েছে।
জাহিদের স্ত্রীর নাম জেবুন্নাহার। দুই মেয়ে রয়েছে তাদের। বিএমএ ৪৩ লং কোর্সে যোগ দিয়ে জাহিদুল ২০০০ সালে সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন বলে গণমাধ্যমের খবর।
জঙ্গি কর্মকাণ্ড তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলছেন, জাহিদ বেশিরভাগ সময় একটি মটরসাইকেল ব্যবহার করতেন। এতে করেই জঙ্গি আস্তানায় যাতায়াত ছিল তার। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিভিন্ন সময় তিনি জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেন।
শুক্রবার রাতে অভিযানের সময় গুলিতে নিহত হওয়ার আগে জাহিদ পিস্তুল ও ছুরি নিয়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন বলে অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান জানান।
তার হামলায় রূপনগর থানার ওসি শহীদ আলম, পরিদর্শক শাহীন ফকির ও একজন এএসআই আহত হন। তাদের মধ্যে শহীদ ও শাহীন এখনও হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে কুমিল্লায় জাহিদের বাড়িতে গিয়ে ভাড়াটিয়া ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি বলে কোতয়ালি মডেল থানার এসআই শাহীন জানান। স্থানীয়রা ছবি দেখে জাহিদকে শনাক্ত করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার জাহিদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকেন জাহিদের বাবা-মা। তবে তাদের কেউ বাসায় নেই। প্রথম ও তৃতীয় তলা ভাড়া দেওয়া।
ভাড়াটিয়া আবদুল বারেক, জয়নাল আবেদীন ও তন্বী আক্তার জানান, বাড়িওয়ালার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে জাহিদকে তারা তেমন একটা দেখেননি।
জাহিদের বাবা নুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল রব জানিয়েছেন।
সূত্র: বিডি নিউজ