কর্মচারীর পুত্র কাসেমের ১৪ হাজার কোটি’র সম্পদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৫৪ অপরাহ্ণ
নিউজ ডেস্ক:
শনিবার রাতে ফাঁসি হলো চট্টগ্রামের আল বদর কমান্ডার, ‘বাঙ্গালি খান’ নামে অভিহিত কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী সংগঠন জামায়াতের ‘খাজাঞ্চি’ হিসেবে পরিচিত মীর কাসেম আলীর উত্থান রূপকথাকেও যেন হার মানায়।
চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারীর পুত্র মীর কাসেম আলী মাত্র কয়েক বছরে গড়ে তোলেন বিশাল অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য। নামে বেনামে তার সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে ১৪ হাজার কোটি টাকার বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালা গ্রামে জন্ম নেন মীর কাসেম আলী। তার পিতা তাইয়েব আলী ছিলেন টেলিগ্রাফ অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। পিতার চাকরির সুবাদে তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে।
১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন মীর কাসেম। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম নগর ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর ছাত্র সংঘের পূর্ব পাকিস্তান ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা হিসেবে চট্টগ্রামের কুখ্যাত আল বদর বাহিনীর নেতৃত্ব দেন মীর কাসেম। চট্টগ্রাম শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে তোলেন টর্চার সেন্টার। এর মধ্যে অন্যতম ডালিম হোটেল বা মহামায়া ভবন।
স্বাধীনতার পর দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘকে নিষিদ্ধ করা হয়। শাস্তির ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান মীর কাসেমও।
এরপর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে জাতির পিতার নৃশংশ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে সংঘটিত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুবিধা নিয়ে দেশে ফেরেন মীর কাসেম।
১৯৭৭ সালে ছাত্র সংঘের পুরনো দোসরদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী ছাত্রশিবির। নিজে হন সভাপতি। ছাত্র শিবির প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে ফের দেশে রাজনীতি করার অনুমতি পায় জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশে ১৯৭৯ সালে পুনরায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৮০ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন মীর কাসেম। একই সঙ্গে ওই সময় তিনি ছিলেন রাবেতা আল আলম আল ইসলামির এ দেশীয় কোঅর্ডিনেটর। এই এনজিওটির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
মূলত এই মধ্যপ্রাচ্যের অর্থকেই কাজে লাগিয়ে নিজেদের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলে জামায়াত ও মীর কাসেম আলী।
দলের ‘ফান্ড রেইজার’ হিসেবে খুব শিগগিরই দলের শীর্ষ নীতি নির্ধারণী কমিটিতে উঠে আসেন মীর কাসেম।
বলা চলে জামায়াতের আর্থিক বিষয় আষয়গুলোর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিলো মীর কাসেম আলীর হাতে। ধীরে ধীরে সারা দেশে তিনি নিজের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের জাল বিস্তার করে চলেন।
জামায়াতের শক্ত সাংগঠনিক কাঠামো ও মীর কাসেমের বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক একে অপরের পরিপূরক হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তারের দিকে মনোযোগ দেন মীর কাসেম।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা ধরনের বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ট্যুরিজম থেকে শুরু করে টেলিকম, এ রকম নানা উদ্যোগে ছড়িয়ে ছিলো তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য।
বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত থাকলেও মূলত ১৯৮০ সালে এনজিও রাবেতা আলম আল ইসলামির হাত ধরেই মীর কাসেমের উত্থান।