জঙ্গি তামিমের জন্য লজ্জিত সিলেটের বড়গ্রামবাসী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০১৬, ১:২৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রাম বড়গ্রাম। সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকা গ্রামটিই এখন আলোচনার শীর্ষে। কারণ এ গ্রামের সন্তান তামিম আহমেদ চৌধুরীকেই বলা হচ্ছে গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে; কিন্তু গ্রামের মানুষ বলছেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় নাম আসার পর তারা প্রথম তামিমকে চিনেছেন। তার কারণেই এখন গ্রামের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাই তারা বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মূল ‘হোতা’ তামিমকে দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করছেন।
দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের শফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে সোয়া মিয়ার ছেলে তামিম আহমদ চৌধুরী। তার বাবা চট্টগ্রাম শিপইয়ার্ডে চাকরি করতেন। সিলেটে জন্ম হলেও তামিমের শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। সেখানে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর বাবার সঙ্গে সে কানাডা চলে যায়। ১ জুলাই গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর আলোচনায় আসে তার নাম। তাকে ঘিরে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী। তবে এলাকার বাসিন্দাদের কেউ স্মরণ করতে পারেননি, তামিমকে তারা এলাকায় দেখেছেন কি-না।
জানা যায়, বছর দুয়েক আগে বড়গ্রামে যাতায়াতের জন্য মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়। এর আগে বর্ষায় যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। গ্রামের বাড়িতে তামিমের দুই চাচা পরিবার নিয়ে থাকেন। তাদের সঙ্গে তামিমের পরিবারের কোনো
যোগাযোগ নেই বলে জানান চাচি আঙ্গুরা খাতুন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমার বিয়ের আগে তামিমরা চট্টগ্রামে চলে যায়। সেখান থেকে কানাডা। ২১ বছর আগে তামিম একবার দেশের এসেছিল বলে শুনেছি। এখন তার নাম শুনলে ভয় লাগে।’
তামিমের চাচা কয়লা ব্যবসায়ী নুরুল ইমরান চৌধুরী বলেন, ‘তাকে ভাতিজা বলতেও ঘৃণা হচ্ছে। ছোটবেলায় তামিম খুব শাস্ত স্বভাবের ও মেধাবী ছিল। দেশে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর বিদেশ চলে যায়।’ কানাডা যাওয়ার পর থেকে ভাই শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই জানিয়ে বলেন, ‘আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছি। যারা মানুষ হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’ আরেক চাচা নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা ফাহিম আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘১৯৯৫ সালের দিকে তামিম একবার দেশে আসে। তখন তার বয়স ১৪-১৫ ছিল। ওই সময় দেখতে পেয়েছি, সে সবার থেকে একটু আলাদা থাকার চেষ্টা করত, শান্ত স্বভাবের ছিল। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই।’
গ্রামের বাসিন্দা বিজয় দাস বলেন, ‘জঙ্গি তামিমের নামের সঙ্গে আমাদের গ্রামের নাম জড়িয়ে গেছে। লোকজন ‘জঙ্গির এলাকা’ও বলছে। এসব শুনলে লজ্জা লাগে। সে জঙ্গি হলে, মানুষ হত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকলে আমরা গ্রেফতার করে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।’ একই কথা বলেন গ্রামের দুই কলেজ শিক্ষার্থী জাকারিয়া ও পারভেজ।
তানিমের স্বজনরা জানান, ২০০১ সালে তারা স্বপরিবারে দেশে এলেও গ্রামের বাড়িতে আসেননি। সিলেট নগরীতে বাসা ভাড়া করে তিন মাস থাকার পর আবার কানাডায় ফিরে যান। ব্যক্তিগত জীবনে তামিম বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক। ফেঞ্চুগঞ্জে নানাবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কোন এলাকায় তার নানাবাড়ি সে তথ্য কারও জানা নেই। এমনকি তামিম কোথায় বিয়ে করেছে, দেশে অবস্থানরত তার পরিবারের কেউ সে বিষয়টিও জানেন না।
দুবাগ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, ‘তামিমের দাদা মৃত আবদুল মজিদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাত্তরে স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্যদের নানাভাবে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে তার শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।’