শ্রীমঙ্গলে মহারাজার প্রতিষ্ঠিত কাচারী বাড়ি আজো ইতিহাসের সাক্ষী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০১৬, ১:৪৮ অপরাহ্ণ
শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা:
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানা সদরে হবিগঞ্জ রোড (ঢাকা-সিলেট) মহা সড়কের পাশে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন ত্রিপুরা মহারাজার স্থাপনা কাচারী বাড়ি। পাশেই রয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভূমি অফিস ও শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি বিশাল পুকুর আর কাচারী বাড়ির নাম অনুসারে নির্মিত হয়েছে “কাচারী জামে মসজিদ”। ১৮৯৭ সালে ত্রিপুরা মহারাজা এ কাচারিবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন ।
ত্রিপুরা মহারাজার স্থাপিত কাচারী বাড়িটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। শতাধিক বছরের পুরোনো কাচারি বাড়িটি ৩টি কক্ষ, ৮টি দরজা, ও ৯টি জানালা বিশিষ্ট ১ তলা ভবন যা প্রস্থে ৩০ ফুট ও দৈর্ঘে ২০ ফুট লম্বা। প্রতিটি দেয়াল ১২ ইঞ্চি চওড়া চুন শুড়কি দ্বারা নির্মিত।
বাড়িটি অযত্নে অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের সম্মুখীন। এই ভবনটি সংস্কার করা হলে ঐতিহ্যের দর্শন হয়ে নতুন প্রজন্মের নিকট ইতিহাসে শিক্ষণীয় বিষয় হওয়ার পাশাপাশি দর্শন কেন্দ্র হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
শতাধিক বছরের পুরোনো শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রাচীন নির্দশন ত্রিপুরা মহারাজার কাচারিবাড়ি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ত্রিপুরা মহারাজার স্মৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক এবং তার রাজত্বকালে নির্মিত কালের সাক্ষী এ ভবনটির আদিরূপ অক্ষুন্ন রেখে দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্পের বিকাশকে সামনে রেখে সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পর্যটন শিল্পের কথা ভেবে পর্যটকদের জন্য ঐতিয্যবাহী এ কাচারি বাড়িটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সরকারি বরাদ্ধ চেয়ে পত্র প্রেরণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ কাচারি বাড়ির সুনির্দিষ্ট ইতিহাস সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষনের জন্য এ সব কিছুই এখানে সংরক্ষণ করা হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. নুরুল হুদা জানান, সিলেট বিভাগে এরকম ঐতিয্যবাহী পুরোনো বাড়ি খুব কম আছে। ত্রিপুরা রাজার এ কাচারি বাড়িটি ১.৬৭ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে শতাব্দীর প্রাচীন একটি পাকাভবন, শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি পুকুর রয়েছে। ১৮৯৬ সালে এক ভূমিকম্পে এ অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হলে মতিগঞ্জের সদর দপ্তর বিলাসছড়ার হুমকির মুখে পতিত হওয়ায় তা শ্রীমঙ্গলে স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়কে কাচারিবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন ত্রিপুরা মহারাজা। তৎকালীন সময়ে মহারাজার পদস্থ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শৈলেন্দ্র গুহ শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের খাজনা আদায়ের জন্য সহকারি এ্যাস্টেট ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এ কাচারি বাড়িতে তখন খাজনা আদায় হত।
মো. নুরুল হুদা আরও জানান, ২০১৪ সালে ত্রিপুরা মহারাজার ১২০ বছরের প্রাচীন এ কাচারিবাড়িটি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে পাকা ভবনটিকে কিছুটা সংস্কার করে ভবনটিকে রঙ করা হয়েছে এবং একটি নেমপ্লেট সাটানো হয়েছে। সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. নুরুল হুদা আলাপকালে প্রতিনিধিকে বলেন, বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও দেশের অন্যতম পর্যটন উপজেলা এবং চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও এসব বিষয় মাথায় রেখে এ কাচারি বাড়িটি পর্যটকদের জন্য অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মতই আকর্ষনীয় করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।