‘জম জম’: বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট খাবার পানি
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২৪:০১,অপরাহ্ন ২৪ আগস্ট ২০১৬
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
শুরুতেই একটা গেম খেলার মধ্যে দিয়ে খবরটি শুরু করা হয়েছে। গেমটা হলো এমন- বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট খাবার পানির নাম কি?
১. ভস আর্টেসিয়ান
২. সেইন্ট জেরন
৩. এভিয়ান
৪. ফিজি আর্টেসিয়ান
সারা বিশ্বের সবচেয়ে নামিদামি বোতলজাত পানির ব্রান্ড হিসেবে এসবেরই কোন একটার নাম মাথায় আসতে পারে। কিন্তু উপরের নামগুলোর মধ্যে কোন একটি বেছে নিলে ভুল করবেন। কারণ, সঠিক উত্তর এর মধ্যে নেই। তাহলে?
সঠিক উত্তরটি হলো, বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট খাবার পানির নাম ‘জম জম’। এই ‘জম জম’ পানিই সবার শীর্ষে। কারণ, সারা বিশ্বের প্রায় ১৭০ কোটি মুসলমান এই পানি পানের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। ‘জম জম’ পানিতে নানাবিধ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারীতা আছে। এই পানি দুর্গন্ধমুক্ত, স্বচ্ছ এবং আলাদা স্বাদযুক্ত। ‘জম জম’ পানি শুধুমাত্র মসজিদুল হারামের কেন্দ্রস্থলেই পাওয়া যায়। হজ্ব বা ওমরা করতে সৌদি আরবে এসে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা অবশ্যই সাথে করে এই পবিত্র পানি নিয়ে যান।
হাজীদের জন্য ৫ লিটার এবং ১০ লিটারের কন্টেইনারে জম জম পানি নেয়ার ব্যবস্থা আছে। মসজিদুল হারাম থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে পানি বোতলজাত করার ব্যবস্থা আছে। খনি থেকে পাইপের মাধ্যমে বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজি জম জম প্রকল্পে পানি সরবরাহ করা হয়। এই জম জম এর পানি নিয়ে ধর্মীয় গুরুত্বও আছে। শুকনো মরুভূমিতে শিশু ইসমাইল (আ:) এর পায়ের আঘাতে এই পানি বেরিয়ে আসে। ইসমাইল (আ:) এর মা তখন পানির খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝের জায়গাটিতে ছুটোছুটি করছিলেন। বিশ্বাস করা হয় যে, আল্লাহর নির্দেশেই পরীক্ষার জন্য ইসমাইল (আ:) এবং তার মাকে ঐ মরুভূমিতে ছেড়ে গিয়েছিলেন নবী ইব্রাহিম (আ:)। তাদেরকে ছেড়ে গিয়ে ইব্রাহিম (আ:) তার স্ত্রী এবং সন্তানের মঙ্গলের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করছিলেন।
শিশু সন্তানকে রেখে সিতি হাজার (ইসমাইল (আ:) এর মা) দুটি পাহাড়ের মাঝখানে ৭ বার ছুটোছুটি করেন। তারপর তিনি যখন ইসমাইল (আ:) এর কাছে ফেরেন, তখন পানির ফুয়ারা দেখতে পান। খুশীতে তিনি চিৎকার করে বলে উঠেন, ‘জম জম’ এবং পানির চতুর্দিকে পাথর দিয়ে ঘিরে দিতে থাকেন। তখন থেকেই এই পানির নাম হয়ে যায় ‘জম জম’। জম জম অর্থ ‘থাকো থাকো’। পানির জন্য সিতি হাজারের ৭ বার সাফা এবং মারওয়া পাহাড় প্রদক্ষিণ করা ধর্মীয় রীতিতে পরিণত হয়। ওমরা এবং হজ্ব করতে গেলে সবাই এখন ঐ দুটি পাহাড়ে ৭ বার প্রদক্ষিণ করে।
দাউদ সাঈদ বাদাউদ নামে এক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ২০১০ সালে এই জম জম প্রকল্প চালু হয়। প্রতিদিন ২ লাখ বোতল (১০ লিটার) পর্যন্ত পানি উত্তোলন করা যায়। জম জম পানি বোতলজাত করার জন্য ৪টি পাইপলাইন আছে। এই পাইপলাইনগুলো বিভিন্ন ধরণের বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়। পানি বিশুদ্ধ হয় কিন্তু এর গুনাগুণ অক্ষুন্ন থাকে। এমনকি পানির লাইনগুলো একটা আলট্রা ভায়োলেট চেম্বারের ভেতর দিয়েও যায় যেখানে আলট্রা ভায়োলেট রশ্নির মাধ্যমে পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া নিধন করা হয়।
এই প্রকল্প স্বয়ংক্রিয় হলেও, মানুষকে এই পবিত্র পানির স্বাদ দিতে ২৯০ জন কাজ করে। এর বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয় ৬০ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল। জম জম পানির ১০ লিটারের বোতল ৫ সৌদি রিয়াল দিয়ে বিক্রি হয়। মসজিদুল হারাম এবং মদীনায় এই পানি বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এই প্রকল্প থেকে কোন মুনাফা হয় না। কারণ, জম জম পানি যে দামে বিক্রি করা হয়, উৎপাদন খরচ তার চেয়ে বেশি। তবে কেউ চাইলেই এই পবিত্র পানি যত ইচ্ছে পরিমাণে কিনতে পারবে না। একজন ব্যক্তি প্রতি ১৫ দিনে সর্বোচ্চ ২০ লিটার জম জম পানি কিনতে পারবে।