হজক্যাম্পে যাত্রীদের আকুতি, আমারে পার কইরা দ্যান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ আগস্ট ২০১৬, ১:৩৭ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একের পর এক ফ্লাইট বাতিলের ঘটনায় সীমাহীন বিড়ম্বনায় পড়েছেন হজযাত্রীরা। কেউ সাতদিন কেউ পাঁচদিন অপেক্ষায় আছেন কাঙ্ক্ষিত ফ্লাইটের। আবার কেউ ফিরে গেছেন বাড়িতে। যারা আশকোনা হজক্যাম্পে দিনরাত ফ্লাইটের আশায় প্রহর গুনছেন তারা যাকে পাচ্ছেন তার কাছেই আকুতি জানাচ্ছেন পবিত্র মক্কা-মদিনা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য। তাদের একজন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আবদুল হাই। ২০শে আগস্ট একই উপজেলার সিরাজুল ইসলাম, মোজাহারুল হকসহ কয়েকজন মিলে ঢাকায় আসেন। কিন্তু হজক্যাম্পে উঠে জানতে পারেন তাদের কারোরই ভিসা হয়নি। ভিসা এবং ফ্লাইট অনিশ্চয়তায় বেশ হতাশ হয়ে পড়েছেন আবদুল হাই। করুণ সুরে বলেন, ‘আমারে পার কইরা দ্যান’। বাড়িতে সবাই কান্নাকাটি করছে। আবদুল হাই বলেন, ভিসা না হলে আমাদেরকে আনা হলো কেন? পরিবার পরিজন, আত্মীয়-স্বজন থেকে বিদায় নিয়ে এসে এখন হজক্যাম্পে বসে আছি। নানা হয়রানির শিকার হচ্ছি। পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে এমন হওয়ার কথা ছিল না। সিরাজুল ইসলাম, মোজাহারুল হকসহ আবদুল হাইর সঙ্গীদের আক্ষেপও একই রকম। হজযাত্রীদের দুর্ভোগের কথা শোনার সময় পাশে বসা ছিলেন মোয়াল্লেম আইনুল হক। তিনি বলেন, সৌদি অ্যাম্বাসি ভিসা ইস্যু করতে দেরি করায় হজযাত্রীরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। বৃদ্ধ মা রাবেয়া খানমকে নিয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন নেত্রকোনার আবদুল কাদের মিয়া। ১৫ই আগস্ট ফ্লাইট হবে এই কথা শুনে ঢাকায় আসেন। কিন্তু সেদিন ফ্লাইট হয়নি। তারিখ পড়ে ১৯শে আগস্ট। কিন্তু ওই দিনও প্রত্যাশিত ফ্লাইটের দেখা পাননি মা-ছেলে। গতকাল আবার ফ্লাইট হবে এই আশায় হজক্যাম্পে আসেন। তবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভিসা টিকিট কিছুই হাতে পাননি তারা। গতকাল সরজমিন হজক্যাম্পে গিয়ে হজযাত্রীদের এমন নানামুখী বিড়ম্বনার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সহকারি হজ অফিসার মো. আবদুল মালেক বিমানের ফ্লাইট বিপর্যয়ের অবসান হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, গতকাল বাংলাদেশ বিমানের দুটি ফ্লাইটে সাত যাত্রীর সিট খালি ছিল। ২/১ দিনের মধ্যে এই বিপর্যয়ের পুরোপুরি অবসান হবে। নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে গতকাল দুপুরে হজক্যাম্পে আসেন শাহজাহান। ২৬শে আগস্ট তার ফ্লাইট। কিন্তু এত আগে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজেন্সির মালিক বলছেন, তাই এসেছি। ভিসা- টিকিট পেয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তারা খবর দিয়েছে, চলে এসেছি। সকালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে এসেছেন আবদুল্লাহসহ ৪ হজযাত্রী। সারাদিন হজক্যাম্পের মসজিদে ছিলেন। বিকালে মসজিদ থেকে তাদের বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে এখানে ওখানে সময় কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু মোয়াল্লেমের দেখা না পাওয়ায় ক্যাম্পের ভেতরে হজযাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষে ঢুকতে পারছিলেন না তারা। ফ্লাইট ভিসা হয়েছে কিনা এ খবরও নিশ্চিত নন এসব হজযাত্রীর। কথা হয় শত বছর বয়সী বৃদ্ধ আবদুর রহমানের সঙ্গে। নওগাঁর শ্রীরামপুর থেকে এসেছেন তিনি। কবে ফ্লাইট, ভিসা টিকিট কোথায় জানতে চাইলে এই হজযাত্রী বলেন, সব কিছুই মোয়াল্লেম জানে। আমাকে আসতে বলেছেন, তাই এসেছি। এদিকে ভিসা জটিলতা এবং ফ্লাইট বির্যয়ের কারণে হজক্যাম্পের বেশির ভাগ ডরমেটরি খালি পড়ে আছে। কোনো কোনো ডরমেটরিতে ২/১ জন হজযাত্রী দেখা গেলেও বেশির ভাগ ডরমেটরিতে একজনও নেই। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীরা বলেন, কেউ বাড়ি ফিরে গেছে। কেউবা ফ্লাই করেছে। তবে হজের মওসুমে এমন দৃশ্য সাধারণত দেখা যায় না বলে স্বীকার করেন কর্মীরা। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে রোববার রাতে হজ এজেন্সি মালিক এবং হাব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয় হজ পরিচালক, অফিসার সহ সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সন্তোষজনক কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানা যায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের হিসাবে গত ৪ঠা আগস্ট থেকে শুরু হওয়া হজ ফ্লাইটের মধ্যে ১৬টি ফ্লাইট বাতিল হয়। সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের বাতিল হয় দুটি ফ্লাইট। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাব এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় বেশ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। বিভক্তি দেখা দেয় হাব সদস্যদের মাঝেও। তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে নানা অভিযোগ তুলছেন। ভিসা হওয়া সত্ত্বেও হজযাত্রীদের ফ্লাইট না দেয়ার অভিযোগ মন্ত্রণালয়ের। অপরদিকে রিপ্লেসমেন্টসহ হজ অফিসের ধীরগতির অভিযোগ করছে হাব। এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও হজ পরিচালকের অপসারণ চেয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দেয়। এর বিপরীতে টিকিট সিন্ডিকেট ও ট্রলিব্যাগে দুর্নীতি ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার কারণে হাবের কমিটি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগের দাবি হজ ওমরা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর। অন্যদিকে ফ্লাইট বিপর্যয় ঠেকাতে গত বৃহস্পতিবার বিমান মন্ত্রণালয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানিয়েছিলেন, শনিবার থেকে কোনো হজ ফ্লাইট খালি যাবে না। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। অপরদিকে নতুন করে ২০ হাজার কোটা বরাদ্দের মাধ্যমে হজযাত্রী পাঠানোর দাবি জানিয়েছে হাব সমন্বয় পরিষদ। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানায়। দাবি আদায়ে আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট পালন করার কর্মসূচি আছে তাদের। সংগঠনের আহ্বায়ক রুহুল আমিন মিন্টু বলেন, হাবের দুর্নীতিবাজ কমিটি বাতিল এবং নতুন ২০ হাজার কোটা বরাদ্দ না দিলে আমরা আরো কঠিন কর্মসূচি দেবো।