সিলেটে ৪দিনের ব্যবধানে ৩জন খুন
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ আগস্ট ২০১৬, ১২:৩৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটে কিছুতেই থামছে না খুনের মিছিল। একের পর এক এসব খুনের ঘটনায় এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক গেথে গেলেও কিছুতেই থামছে না অপমৃত্যুর এই সংখ্যা। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে সিলেটে খুন হয়েছেন তিনজন। এরমধ্যে সর্বশেষ গতকাল (শনিবার) রাত ১১ টার দিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুন হন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তাজুল ইসলাম। এদিকে গত শুক্রবার রাত সাড়ে দশটার দিকে লালাবাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন হন মো. আজির মিয়া (৪৫) নামের একজন ব্যবসায়ী। তাছাড়া গত মঙ্গলবার নগরীর জিন্দাবাজারে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী মামুন আহমদ (২২) খুন হয়েছিলেন।
এই তিন খুনের ঘটনার দু’টিতে এখন পর্যন্ত আসামী বা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অবশ্য সাবেক কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুর স্বামী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা তাজুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে নারীসহ পাঁচজনকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এর মধ্যে খুলিয়াটুলা এলাকার মখরম আলীর ছেলে গুলজার আহমদ (৫২) ও তার ছোট ভাই দুলাল আহমদ (৪০) তাজুলের ছেলে রায়হান হত্যায়ও অভিযুক্ত। আর বাকী দুই খুনের ঘটনায় পুলিশ বলছে তারা আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে।
যে কারনে খুন হন মামুন: সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে আহত ব্যবসায়ী মামুন আহমদের (২২) মৃত্যু হয় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই ঈশান আহমদ।
মামুন আহমদ জিন্দাবাজারের এ্যালিগেন্ট শপিং সিটির মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে মোটরসাইকেল পার্কিং নিয়ে বাকবিতন্ডার জেরে মামুন ছুরিকাঘাতের শিকার হন। জেলা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সহ-সভাপতি সুলেমান চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। রাত ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালেই তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
যে কারনে খুন হন আজির: দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজারে সন্ত্রাসী হামলায় মো. আজির মিয়া (৪৫) নামের এক ফার্মেসী ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয় শুক্রবার রাত সাড়ে দশটার দিকে লালাবাজার ব্রিজে বাড়ি ফিরার পথে হামলার শিকার হন তিনি। আজির বিশ্বনাথ উপজেলার টেংরা গ্রামের মৃত মোফাচ্ছর আলীর ছেলে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় ব্যবসায়ী ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। প্রায় তিন ঘন্টা অবরোধ চলার পর রাত পৌণে ২টার দিকে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার বাদ আসর গ্রামের বাড়িতে জানাযার নামাজ শেষে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আজির উদ্দিনের ফার্মেসীর ডা. নাদির হোসেন চৌধুরীর কারের সাথে গত বুধবার রাতে স্থানীয় ভরাউটা গ্রামের আল ইছলাহ নেতা আজাদের প্রাইভেট কারের ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে আজির উদ্দিনের সাথে আজাদের বাকবিতন্ডা হয়। রোববার বিষয়টি সমাধানের দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল।
শুক্রবার বাড়ী ফিরার পথে লালাবাজার সেতুতে হামলা করা হয় আজিরকে। এ হামলার সাথে আজাদ, তার ভাই ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ, সহযোগী সাইফুলসহ আরো কয়েকজন মিলে আজির উদ্দিনের উপর হামলার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আজির উদ্দিনকে উদ্ধার করলেও এর আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
যেভাবে খুন হন তাজুল: কুয়ারপাড়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুর স্বামী ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তাজুল ইসলাম খুন হন। শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারেই তার মৃত্যু হয়।
এর আগে রাত ১০ টায় বাসায় ফেরার পথে মোটরসাইকেল আরোহী তিন যুবক তাকে কুপিয়ে গুরতর আহত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- শনিবার রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরার পথে কুয়ারপাড় গরম দেওয়ান মাজারের সামনে মোটর সাইকেল (সিলেট এ-৬৮৮৭) আরোহী তিন যুবক তাজুলকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ১১টার দিকে অপারেশন থিয়েটারেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তাজুল। তাজুলের ছেলে রায়হান ইসলামকেও সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে খুন করেছিল।