নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন, অসহায় ক্রেতারা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০১৬, ১২:১৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
নিত্যপণ্যের বাজারে কিছু পণ্যের অস্বাভাবিক দাম নেয়া হচ্ছে। ভোজ্য তেল, চিনি, লবণ, ডাল ও রসুনের দাম অস্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে কোরবানির ঈদের আগেই বেড়েছে আদা ও পেয়াজের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। মাত্র সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে বেড়েছে এসব পণ্যের দাম। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটিই জানা গেছে। কোরবানির ঈদে পেয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বছরে পেয়াজের চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় ১৩ লাখ ৫৮ হাজার টন। গেল ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চার লাখ ৫২ হাজার টন পেয়াজের ঋণপত্র খোলা হয়। আর আমদানি হয় ৪ লাখ ৬ হাজার টন। ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের হিসাবে, দেশে রসুনের চাহিদা বছরে ৫ লাখ টন। এর সিংহভাগই দেশে উৎপাদিত হয়। যার পরিমাণ ৩ লাখ ৯২ হাজার টন। বাকিটা আমদানি হয় মূলত চীন থেকে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রসুন উৎপাদিত হয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার টন। সম্প্রতি দেশে ১৩ হাজার টন রসুন আমদানি হয়েছে। এরপরও রসুনের দাম বেড়েছে। ট্যারিফ কমিশনের মতে, গত ৬ই মে চীনে রসুনের দাম ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৮৫০ ডলার, যা এপ্রিলের তুলনায় ৬০ ডলার বা ৫ শতাংশ বেশি। টনপ্রতি ১ হাজার ৮৫০ ডলার দর ধরে এর সঙ্গে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও অন্য খরচসহ টনপ্রতি ২০০০ ডলার আমদানি মূল্য ধরলেও দেখা যায়, প্রতি কেজি রসুনের দাম দাঁড়ায় ১৬০ টাকা। দেশে আদার চাহিদা বছরে ৩ লাখ টন। গত বছর দেশে উৎপাদিত হয়েছে দুই লাখ ২৬ হাজার টন। আর গত দুই মাসে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়ে দেশে আদা এসেছে ১১ হাজার টন। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গেলো সপ্তাহে মশুর ডাল ১৩৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। বোতলজাত সয়াবিন লিটারে বেড়েছে ২ টাকা। চিনির দাম গত সপ্তাহে ৭৩ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। পেঁয়াজে বেড়েছে ৩ টাকা। আর রসুন গেল সপ্তাহে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। এ ছাড়া অন্য নিত্যপণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। পণ্যের দাম বৃদ্ধির ব্যাখ্যায় ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায়, বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। পাইকারি বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ক্রেতাদের কোরবানি ঈদ পর্যন্ত এমন দামেই পণ্য কিনতে হবে বলে জানান বিক্রেতারা। বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায়। এক মাস আগে প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছিল ১০০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা। আর রমজানের আগে কেজি প্রতি দর ছিল ২০০ টাকার ওপরে। অথচ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হিসাবে দেখা যায়, গত মার্চ মাসে দেশে প্রতি কেজি রসুন আমদানি হয়েছিল গড়ে ১১৬ টাকা দরে। এপ্রিল মাসে আমদানি হয়েছে ১৩৪ টাকা দরে। এ ছাড়া গত জানুয়ারিতে প্রতি কেজি রসুন গড়ে ৯৯ টাকা ও ফেব্রুয়ারিতে ১০২ টাকা দরে আমদানি হয়েছিল। সব মিলিয়ে গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে প্রতি কেজি রসুন আমদানি হয়েছে গড়ে ১১১ টাকা দরে। অথচ এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কাছাকাছি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় এখন চীনা রসুনের দাম প্রায় ১২২ শতাংশ বেশি।
প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকায়। কী কারণে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ছে তা বলতে পারছে না খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণে দেখছেন না।
খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি মসুর ডাল ১৪৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া অ্যাংকর (বুটের) ডাল ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, খেসাড়ির ডাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় ডালের দাম প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।
বাজারে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৪৫ টাকা থেকে ৪৬৫ টাকায়। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯২ টাকা থেকে ৯৮ টাকায়। তবে সরকারি সংস্থা টিসিবি প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করছে ৮০ টাকায়। টিসিবি হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় এখন তেলের দাম প্রায় ৬ শতাংশ বেশি।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে চিনির দাম। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা থেকে ৭৫ টাকায়। তা আবার কোথাও কোথাও ৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। অথচ এক সপ্তাহে আগে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা থেকে ৭২ টাকায়। টিসিবির হিসেবেই এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ।