আজ হবিগঞ্জের মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ আগস্ট ২০১৬, ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
আজ ১৮ আগস্ট। মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলের মাকালকান্দি গ্রামে মন্দিরে মনসা পূজা চলাকালীন নির্বিচারে শতাধিক হিন্দু নর-নারীকে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী।
প্রতি বছর এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। কিন্তু সরকারিভাবে এ দিন তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না।
স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহতদের প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের নগদ ১ হাজার টাকা এবং একটি করে সনদপত্র দেন। কিন্তু এরপর তারা আর কোনো সাহায্য সহায়তা পাননি।
জানা গেছে, বানিয়াচং উপজেলার উত্তর-পূর্ব কোণজুড়ে হিন্দু অধ্যুষিত একটি দুর্গম গ্রামের নাম মাকালকান্দি। মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ গ্রামটি ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অন্যতম নিশানা। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন হবিগঞ্জ সার্কিট হাউসে মহকুমা শান্তি কমিটির সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের এক সভায় বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ থানার হিন্দু প্রধান এলাকায় সশস্ত্র আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে তারা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ আগস্ট ভোরে ২৫/৩০টি নৌকায় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রসহ স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে মাকালকান্দি গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। জ্বালিয়ে দেয় শত শত ঘরবাড়ি। নারী, পুরুষ, শিশু বাছ বিচার না করে হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। মায়ের কোল থেকে শিশুকে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর হাওরের পানিতে ফেলে দেয়। বেশ কয়েকটি অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও হত্যা করে নরপশুরা।
ধ্বংসযজ্ঞের পর বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ডায়রিয়া, মহামারি ও অর্ধাহারে মারা যায় শিশু ও নারী-পুরুষ। শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এ গ্রামের বাড়িঘর থেকে ধান, স্বর্ণালংকার থেকে শুরু করে ঘরের পিলার পর্যন্ত নিয়ে যায় লুণ্ঠনকারীরা।
এ গ্রামে সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে যারা বেঁচে গেছেন তারাও পাননি নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা।
ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ওই গ্রামে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিহত ও আহতদের নাম মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকায় যেন স্থান পায়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার মোহাম্মদ আলী পাঠান জানান, সরকারি উদ্যোগে ওই গ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়ার চিন্তা চলছে। আশা করি দ্রুতই সরকারিভাবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা ইতোমধ্যেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।