দেশব্যাপী বোমা বিস্ফোরণের ১১ বছর: জঙ্গিরা এখনো বেপরোয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ আগস্ট ২০১৬, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলার এগারো বছরপূর্তি দিবস আজ। এগারো বছর পেরিয়ে গেলেও সবগুলো মামলার বিচার কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। জঙ্গিরা এখনো বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করছে। অনেক জঙ্গি আবার জামিন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছে।
এ ঘটনার জন্য দায়ি ‘জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)’ প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ হলেও ভিন্ন ভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নামে তারা গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সহিংশ কার্যক্রম। প্রকাশ্য এসে খুন করে যাচ্ছে প্রগতিবাদী, গণতান্ত্রিক, মুক্তচিন্তার মানুষদের। তারা হামলা চালিয়েছে রাজধানীর গুলশান, শোলাকিয়াসহ আরও অনেক স্থানে।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ ছাড়া বাংলাদেশের ৬৩ জেলার গুরুত্বপূর্ণ চার শতাধিক স্থানে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ছিলো, এসময় ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আতংক। আর এর মাধ্যমে শক্তিমত্তার জানান দেয়, ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন ‘জেএমবি’। ওই বোমা হামলায় দুই জন নিহত এবং দুই শতাধিক সাধারণ মানুষ আহত হন।
সিরিজ বোমা হামলার পাশাপাশি ওই সময় জঙ্গি এ সংগঠনটি সারা দেশে একটি লিফলেট ছড়িয়ে দেয়। ওই লিফলেটে দেশে কর্মরত বিচারকদের প্রতি দেশে ইসলামী হুকুম কায়েম করার আহ্বান জানায় তারা। আর তাদের এ আহ্বানে সাড়া না দিলে ‘জেএমবি’ কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে বলে লিফলেটে উল্লেখ করে।
জেএমবি সংগঠনের ভাষায়, ‘তাগুতি আইন বাদ দিয়ে বিচারকদের প্রতি ইসলামী আইনে বিচার শুরু করার কথা বলা হয়। জেএমবির লিফলেটে সতর্কবাণী উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তারপর আবার হামলা শুরু হবে।’ জঙ্গি সংগঠনটি মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ওই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে বিভিন্ন থানায় ১৬১টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ছয় শতাধিকের মতো জেএমবি সদস্যকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। এর মধ্যে ১০২টি মামলার বিচার কাজ শেষ হয়েছে। এসব মামলার রায়ে ৪৫ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ হয়। এর মধ্যে ২০০৭ সালে শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। অপরদিকে উচ্চ আদালতে আপিল করায় ফাঁসি কার্যকর আটকে আছে ৩৯ জঙ্গির। এছাড়া ১১৮ জন জঙ্গিকে যাবজ্জীবন ও ৯৯ জন জঙ্গিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়।
এছাড়া বিচারাধীন রয়েছে ৫৯টি মামলা। এসব মামলার দেড় শতাধিক আসামি জামিন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছে। পাশাপাশি মামলা দায়েরের পর থেকে অদ্যাবধি পলাতক রয়েছে ৫৮ জন আসামি।
গত ১১ বছরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জঙ্গিবিরোধী তৎপরতায় এ সংগঠন কোণঠাসা হলেও সম্ভব হয়নি তাদের নির্মূল করা। বিভিন্ন ঘটনায় মাঝেমধ্যেই নাম আসে ‘জেমমবির।’
২০০৫ সালে ওই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ঢাকার ৮টি আদালতে এখনও ১৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি মামলার কার্যক্রম অনেক দিন ধরে স্থবির হয়ে আছে। এর মূল কারণ সাক্ষীদের ধারাবাহিক অনুপস্থিতি। ঢাকার আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর ২৫৬ জন সাধারণ সাক্ষীর বিরুদ্ধে আদালত জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রেখেছেন।
এসব মামলায় সাক্ষী হিসেবে থাকা দেড়শতাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও রয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। সাধারণ সাক্ষীর পাশাপাশি এসব পুলিশ সদস্যও আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন না।
জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার পরেও সংগঠনের সদস্যরা ছদ্মবেশে দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ২০০৭ সালের ২৯ মে কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও কাশিমপুর কারাগারে শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল ও ইফতেকার হাসান মামুনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
তারপর সংগঠনের দায়িত্ব নেন বৃহত্তর সিলেটের মাওলানা সাইদুর রহমান। তিনি গ্রেফতার হলে পরবর্তী সময় মাওলানা সায়েম দলটির হাল ধরেন। আত্মগোপনে থাকা অনুসারীরা বিভিন্ন কারাগারে গিয়ে আটক জঙ্গি নেতাদের দিকনির্দেশনা নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।