জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব হারাচ্ছেন সিলেটের “তারকা” রাজনীতিকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ আগস্ট ২০১৬, ৩:০৭ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের রাজনীতিতে ক্রমশই বিস্মৃত অতীতে পরিণত হচ্ছেন সিলেটের জাতীয় রাজনীতির বরেণ্য নেতারা। বিএনপি-আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বে সিলেটের জননন্দিত নেতা প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.সাইফুর রহমান, প্রয়াত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ, প্রয়াত স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, প্রয়াত মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী, সর্বশেষ প্রয়াত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর মতো মাঠ পর্যায় থেকে জাতীয় রাজনীতিতে উঠে আসা রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের দাপুটে নেতারা চলে যাওয়ায় পর থেকে এ অঞ্চলে শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে ।
কিংবদন্তী এসব তারকা নেতারা হারিয়ে যাবার পাশাপাশি মাঠ থেকে উঠে আসা জনপ্রিয় নেতারাও একে একে নিস্প্রভ, নির্বাসিত আর সর্বশেষ ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়ে পড়ায় সিলেটের রাজনৈতিক শূণ্যতা আরো তীব্র হয়েছে। সিলেটের চার জেলার কোটি মানুষের মুখে মুখে আলোচনার পাশাপাশি প্রবাসে ছড়িয়ে থাকা বৃহত্তর সিলেটের মানুষের মধ্যেও এখন গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের এ শুন্যতা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেন সিলেটের আরেক তারকা রাজনীতিবিদ শমসের মবিন চৌধুরী। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি দল ছাড়লেও তাঁর পদত্যাগে জাতীয় রাজনীতিতে সিলেটের সর্বশেষ তারকার পতন ঘটে। বিএনপির নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতেও রাখা হয়নি সাবেক রাষ্ট্রদূত এই নেতাকে।
১/১১র সংস্কার ঝড়ে দলের অভ্যন্তরে সংস্কারবাদী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সিলেটের কোটি মানুষের নেতা এম সাইফুর রহমান। নানা নাটকীয়তার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিলেট সদর ও মৌলভীবাজার সদর এ দুটি আসনে ফের বিএনপির মনোনয়নও পান তিনি। কিন্তু জীবনের শেষ নির্বাচনে দুটি আসনেই হেরে যান এ বরেণ্য রাজনীতিক। পরে আশুগঞ্জের খড়িয়ালায় মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন প্রদীপ নিভে যায় সাইফুর রহমানের। তার বড় ছেলে বিএনপির রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় থাকলেও পিতা সাইফুর রহমানের গগনচুম্বি জনপ্রিয়তার কাছে তিনি নিতান্তই ম্লান, অনুজ্জল।
বিএনপির সংস্কারপন্থী অংশের আরেক নেতা, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সাবেক সদস্য, যুক্তরাজ্যের সাবেক হাই কমিশনার মোফাজ্জল করিমও এখন রাজনীতিতে একেবারেই নিষ্ক্রিয়।
ফরিদ গাজীর পুত্র কয়েস গাজীও এখন অনেকটা নির্বাসিত এলাকার রাজনীতির মারপ্যাচে। গ্রেনেড হামলায় নিহত ৯৬’র আওয়ামীলীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিবরিয়ার পুত্র রেজা কিবরিয়াও গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে হেরে অনেকটা অভিমান নিয়েই প্রবাসী জীবন যাপন করছেন।
বিগত ওয়ান ইলেভেনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে সিলেটী নেতাদের মধ্যে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি ছিলেন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারীয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। পরে জাতীয় নির্বাচনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সুনামগঞ্জের নিজ সংসদীয় এলাকা দিরাই-শাল্লা থেকে দলীয় মনোননয়ন পেয়ে জয়ী হলেও আওয়ামী লীগের গত কাউন্সিলে তিনি মূল্যায়ন পাননি । আর জীবনে প্রথমবারের মত মন্ত্রীত্বের স্বাদ পেয়ে রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় পদত্যাগের পর দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে থাকলেও তার ক্লিনম্যান রাজনীতিকের ইমেজ এখন অনেকটাই ম্লান।
সংস্কারপন্থী হবার অপরাধে এখন রাজনীতির অঙ্গন থেকে অনেকটাই নির্বাসিত সিলেটের আরেক তারকা নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। সংস্কারপন্থী হবার অভিযোগে গত জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক এ সাংসদ। রাজনীতির ময়দান থেকে সুলতান মনসুরের এ নির্বাসনে হতাশায় ভুগছেন সুলতানের সমর্থকরাও।