সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কে কাজ না করেই ৪৫ কোটি টাকার বিল উত্তোলন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ আগস্ট ২০১৬, ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক :
সিলেট (আম্বরখানা)-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে মোভিলাইজেশন বাবদ ৪৫ কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেছে ওই মহাসড়কের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে দৃশ্যমান কোন কাজ না করেও বিশাল অংকের টাকা উত্তোলন করায় জনমনে সন্দেহ বিরাজ করছে।
এ সড়কটির উভয় পাশে বিদ্যুতের লাইন এখনও চলমান, গাছপালা বিদ্যমান ও সড়কটির সীমানা নির্ধারন এখনো হয়নি। চুক্তিপত্রে ওয়ার্ক অর্ডার থেকে সড়কটি হস্থান্তর পর্যন্ত আগ পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে রাখার কথা থাকলেও তা হচ্ছেনা।
বিশেষ করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খাগাইল থেকে বিমানবন্দর বাইপাস পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। এছাড়া সদর উপজেলার ধূপাগুলে একই গর্তে ৫টি গাড়ী ডোবার মত পুকুরও রয়েছে। সড়কটিতে রোধের দিনে পানি স্প্রে করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত পানি স্প্রে করতে দেখা যায়নি ঠিকাদারী ওই প্রতিষ্ঠানকে।
অনেকেই জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার পুর্বে ওই সড়কটিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যান চলাচলের উপযোগী করে রেখেছিলেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ৩১ মে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কটিকে জাতীয় মহাসড়কে উন্নিতকরণ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদিত হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর করে সড়ক, মহাসড়ক বিভাগ ও স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদিত হওয়ার প্রায় আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও ওই মহাসড়কে সংস্কারে আশানুরূপ উন্নয়ন পরিকল্পিত না হওয়ায় উত্তর সিলেটের অধিবাসীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
দেশের বৃহৎ পাথর কোয়ারী সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ ও অন্যতম কোয়ারী গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি। ওই দুইটি পাথর কোয়ারীকে কেন্দ্র করে আম্বরখানা-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কটি হয়ে উঠেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়ক। বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার ট্রাক প্রতি দিন পাথর পরিবহনের জন্য ওই দুইটি কোয়ারীতে চলাচল করে। সড়কের ধারণ ক্ষমতা থেকে কয়েকশত গুণ বেশি পাথর বহনের ফলে দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে সড়কটির বেহাল অবস্থা হয়ে দাড়ায়।
ভোগান্তিতে পড়েন গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলার কয়েক লক্ষ অধিবাসী। সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী, বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর জীবনে ওই সড়কের পাদুর্ভাব পড়ে। নিয়মিত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সময় মত উপস্থিত হতে ব্যর্থ হন।
এছাড়া আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও পড়েন চরম বিপাকে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে গভীর গর্ত ও খনাখন্দে ভরপুর থাকায় ব্যবসায়ী, যাত্রী, চালকসহ এলাকার অধিবাসীরা সর্বস্ব হারাতে হয় সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দলের হাতে। সড়কের বেহাল দশা হওয়ায় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছার পূর্বেই ডাকাতরা পালাতে সক্ষম হয়। সর্বশেষ উপায়ান্তর না দেখে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ উত্তর সিলেটের অধিবাসীদের সাথে নিয়ে সড়কটি সংস্কারের জন্য আন্দোলনে যান।
আন্দোলনের ফসল হিসাবে গত ৩১ শে মে ৪৪১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩১ দশমিক ৭৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড দু’টি পেকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা। প্রথম প্যাকেজের চুক্তি মূল্য ১৯০.০৫ কোটি টাকা, যা দেবে বাংলাদেশ সরকার।
প্যাকেজের আওতায় ১৩.৩৩ কিলোমিটার সড়ক বাঁধ, ১৩.৩৩ কিলোমিটার রিজিট পেভমেন্ট, ১৬১৯৯৬ বর্গমিটার রক্ষাপ্রদ কাজ, ২৪২৭৫৭ মিটার কম্পেকটেড স্টোন কলাম, ২৬১২ মিটার ফুটপাতসহ ড্রেন, ৪৪৪৪ মিটার টো-ওয়াল এবং আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল কাজ করা হবে। দ্বিতীয় প্যাকেজে একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২২৫.৪০ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬.৭২ কিলোমিটার সড়ক বাঁধ, ১৬.৭২ কিলোমিটার সড়ক ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ, ৭৫ মিটার ১টি সেতু নির্মাণ, ২টি কালভার্ট নির্মাণ (৬ মিটার), ২২০০৮৪ বর্গমিটার রক্ষাপদ কাজ, ২৬১২৮৮ মিটার কম্পেকটেড স্টোন কলাম, ২৬৭৪০ মিটার ফুটপাতসহ ড্রেন, ১০৪৩০ মিটার টো ওয়াল এবং আরসিসি রিটেনিং ওয়াল কাজ করবে। এ ব্যাপারে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ আবু হানিফ জানান, সড়কটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে রাখার চেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে।
সড়কটির বর্তমান অবস্থা নাজুক থাকায় পাথরবাহী ট্রাক বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে যান জটের সৃষ্টি করায় সংস্কার কাজ ব্যহত হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ লাইন সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আলোচনা চলছে। গাছপালা কাটার জন্য টেন্ডার আহবানের প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া এ সড়কের ধোপাগুলা অংশে ১৪ আগষ্ট ২০ আগষ্ট পর্যন্ত সংস্কার কাজ চলবে। ওই ৭ দিন সকল প্রকার মালবাহি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তিনি স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড মোভিলাইজেশন বিল বাবদ ৪৫ কোটি উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।