স্থায়ী কমিটির দুই শূন্যপদ: থাকছেন কি ইলিয়াস ?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০১৬, ১২:০২ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৭ ও ১৮ নম্বর ঘর দুটি ফাঁকা। এ নিয়ে ভেতরে-বাইরে চলছে নানা গুঞ্জন। কে আসছেন এ দুই পদে, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিএনপির ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির মধ্যে নাম ঘোষণা করা হয়েছে ১৭ জনের। ওই দুই পদ কাকে রেখে কাকে দেবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি প্রধান। তাই এই দুটি পদ শূন্য রেখেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক ও যুববিষয়ক পদও ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে সিলেট তথা কেন্দ্রের দাপুটে নেতা নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর জন্য দলে কোন পদ রাখা হয়নি। এতে সিলেটে তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে ইলিয়াসের কাছের মানুষদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা। সিলেট বিএনপিতে একসময় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এম ইলিয়াস আলীর। কেন্দ্রেও ছিল দাপুটে অবস্থান। ইলিয়াস ছিলেন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিলেট জেলা সভাপতি।
বিএনপি কেন্দ্রীয় সম্মেলন শেষে সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবনকে। আর দীর্ঘ দিন আহ্বায়ক কমিটি পর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয় সিলেট জেলা বিএনপির কমিটি। এ দুই কাউন্সিলের পর ইলিয়াস আলীর পদবিতে যুক্ত হয়েছে ‘সাবেক’ শব্দটি। সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিলে ইলিয়াস আলীর স্থলাভিষিক্ত হন আবুল কাহের শামীম।
সিলেটের তৃণমূল বিএনপি বুক ভরা আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিল পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সিলেটের জনপ্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলীর মূল্যায়ন করা হবে। এ অবস্থায় বিএনপির কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নাম নেই এম ইলিয়াস আলীর। প্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর নাম কমিটিতে না পেয়ে তার কাছের মানুষরা নাখোশ হয়েছেন। তাদের মতে- বিএনপির রাজনীতিতে ইলিয়াস যুগের ইতি ঘটলো। সর্বসাম্প্রতিক অবস্থাদৃষ্টে প্রশ্ন উঠেছে তিনি কি বিএনপির রাজনীতিতে ‘নিখোঁজ’ হতে চলেছেন? গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বিশাল বহরের কমিটির নাম প্রকাশ করেছিলেন তার শীর্ষ দিকেই ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর নাম খুঁজেছিলেন তারা। কিন্তু ৫০২ সদস্যের এই কমিটিতে ‘নিখোঁজ’ এই নেতার নাম নেই। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হিসেবে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অভিষিক্ত হয়েছেন ইলিয়াস পত্মী তাহসিনা রুশদীর লুনা। এদিকে স্থায়ী কমিটির দুটি পদ খালি থাকায় এখনো আশায় বসে আছেন সিলেটের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের বিশ্বাসে বিএনপি প্রধান এই দুই পদের একটিতে জনপ্রিয় এই নেতার নাম সংযুক্ত করবেন। এ নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে নেতাকর্মীদের। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে সিলেটের প্রায় ৩০ নেতা স্থান পেয়েছেন। স্থায়ী কমিটিতে সিলেটের কেউ স্থান পাননি। সিলেটের স্থানীয় বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন অতীতে যেভাবে স্থায়ী কমিটিতে ছিলেন অনেক মর্যাদাপূর্ণ ব্যাক্তিরা। সেই দিক থেকে চিন্তা করে নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীকে স্থান দেওয়া হতে পারে।
দাপুটে নেতা নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলন, সীমান্তে ভারতের আগ্রাসনের প্রতিবাদে লংমার্চ ও আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে খালেদা জিয়ার জনসভায় লাখো জনতার জমায়েত করে সিলেটের রাজনীতিতে নিজেকে ঈর্ষণীয় অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই আলোচিত। বিএনপির ভ্যানগার্ডখ্যাত ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত কমিটির শীর্ষ নেতা ছিলেন এই ইলিয়াস আলী। ধাপে ধাপে তিনি পেরিয়ে এসেছেন রাজনীতির নানা অধ্যায়, সর্বশেষ তিনি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। এই পদে আসীন থাকাবস্থায় তিনি ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হন ঢাকার বনানী থেকে। এখনো তিনি নিখোঁজ। দীর্ঘ ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে ফিরে পাওয়ার আশায় আছেন তার স্বজনেরা। তার অনুগত রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীরা সুরমানিউজকে বলেন, এখনো দুই শুন্যপদ আছে। এখনো আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি। আর আমাদের ধারণা ছিল ইলিয়াসকে সাংগঠনিক সম্পাদক বা যুগ্ম মহাসচিব পদে রাখা না হলেও তাকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হতে পারে। নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল সিলেটের রাজনীতিকে চাঙ্গা রাখতে শেষ পর্যন্ত ইলিয়াস আলীকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা হবে। কিন্তু তাকে দলের কোনো পদ দেয়া হয়নি। তবে ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদি লুনাকে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা করায় দলের নেতাকর্মী খুশি হলেও ইলিয়াস আলীকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে না রাখায় হতাশ হয়েছেন নেতাকর্মীরা।