দেশেই আছে দুই শীর্ষ জঙ্গিনেতা তামিম ও মেজর জিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০১৬, ৯:০১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক :
পুরস্কার ঘোষিত পলাতক দুই শীর্ষ জঙ্গি তামিম আহমেদ চৌধুরী ও চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক দেশের ভেতরেই কোথাও আত্মগোপনে রয়েছে। তারা নিজেদের চেহারা ও সাজসজ্জার পরিবর্তন করে সতর্কভাবে চলাফেরা করে থাকতে পারে- এ রকম ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে তাদের বিষয়ে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিমানবন্দরগুলোতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে তাদের প্রত্যেককে ধরিয়ে দিতে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের অবস্থান শনাক্তে জোরদার চেষ্টা চালাচ্ছে। তামিমের অন্তত ১২ সহযোগীকেও ধরার জন্য অভিযান চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। পলাতক এই ১২ জন ‘নব্য জেএমবি’র দ্বিতীয় সারির নেতা বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্রগুলো।
চেহারা ও সাজসজ্জার পরিবর্তন : জঙ্গি নির্মূলে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পলাতক তামিমের ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি রয়েছে। বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া তার সহযোগীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই দাড়ি খুবই প্রিয় তার। অনেক ঝামেলার পরও সে ওই দাড়ি কাটেনি। বেশিরভাগ সময় সে সাধারণ মানুষের মতো রিকশায় চলাফেরা করে। তবে প্রায় সময়ই তার মুখে মুখোশ (মাক্স) থাকে।’ ওই কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, চাকরিচ্যুত জিয়া ইদানীং নিজের দাড়ি কেটে ফেলেছে। বেশিরভাগ সময় জিন্স প্যান্ট ও র্টি-শার্ট পরে সে। জুতা বা কেডসের বদলে সাধারণ স্যান্ডেল ব্যবহার করে।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বুধবার জানান, পুরস্কার ঘোষিত দুই জঙ্গি নেতার দেশের বাইরে চলে যাওয়ার কোনো তথ্য পুলিশের কাছে নেই। ধারণা করা হচ্ছে, তারা দেশেই রয়েছে। এ দু’জনের অবস্থান শনাক্তে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য থাকলে সাধারণ মানুষকে তা দেওয়ার আহ্বান জানান শীর্ষ এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তামিম চৌধুরী নব্য জেএমবির মূল হোতা। তার নিচের স্তরে অন্তত ১২ জন রয়েছে। তাদের বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিতও করা হয়েছে। এখন তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তামিম চৌধুরী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নতুনধারা নব্য জেএমবির হোতা। গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার হামলা তামিমের পরিকল্পনা ও নির্দেশেই হয়। এ ছাড়া কল্যাণপুরের আস্তানায় জঙ্গি সদস্যদের রেখে ঢাকায় আরও বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তামিমের নব্য জেএমবি। অপরদিকে জিয়া নিষিদ্ধ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) অন্যতম প্রধান সমন্বয়কারী ও সামরিক প্রধান। যার পরিকল্পনায় গত কয়েক বছর ধরে দেশে প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগারদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক এ দু’জনকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেন।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘তামিম চৌধুরী ও জিয়াকে ধরতে কয়েক মাস ধরে অভিযান চলছে। তাদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণার পর দেশের প্রত্যেক ইমিগ্রেশন ও স্থলবন্দরগুলোতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে যাতে পালাতে না পারে সে বিষয়েও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক রয়েছে।’
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তামিম চৌধুরী নব্য জেএমবির প্রধান হলেও তার নিচে আরও অন্তত দুটি স্তর রয়েছে। দ্বিতীয় স্তরটি টার্গেট করা যুবকদের দলে ভেড়ানোর পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বাসস্থানের ব্যবস্থা, অস্ত্র সংগ্রহ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করে। তৃতীয় ও সর্বশেষ স্তরটি সরাসরি হামলায় অংশ নেয়। বিভিন্ন সময়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এখনও এ ধরনের অন্তত ১২ জন পলাতক রয়েছে।’
নব্য জেএমবির ১২ পলাতক :নব্য জেএমবির পলাতক ১২ জনের মধ্যে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জুনায়েদ খান ও তার ভাই ইব্রাহীম হাসান খান অন্যতম। এ ছাড়া আজাদুল কবিরাজ, মামুন, খালেদ, মানিক, ইকবাল ও রিপনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অপর চারজনের নামের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এগুলো তাদের সাংগঠনিক নাম হতে পারে। এ বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এরা মূলত তামিম চৌধুরীর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে থাকে। তাদের হয়ে সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছিল গুলশান ও শোলাকিয়ায় নিহত জঙ্গিরা। এই গ্রুপটিই কল্যাণপুরে অভিযানে নিহত নয় জঙ্গির অন্তত পাঁচজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করে তুলছিল। অপর তিনজন মধ্যমসারির নেতা ও প্রশিক্ষক ছিল। এখনও একজনের পরিচয় মেলেনি।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত ডিসি সাইফুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন সময়ে নব্য জেএমবির মধ্যম ও মাঠপর্যায়ের সদস্যদের গ্রেফতার করা গেছে। আরও অনেকে পলাতক রয়েছে। পুরস্কার ঘোষিত তামিম চৌধুরীকে গ্রেফতার করা গেলে তার উপরে আর কেউ আছে কি-না তা বোঝা যাবে।-সমকাল