এবার বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে বিএনপি নেতা মওদুদকে
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ আগস্ট ২০১৬, ৬:১২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
রাজধানীর গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটের একটি বাড়ি নিয়ে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা বাড়ি আত্মসাতের মামলা বাতিল করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে তার ভাই মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন (নামজারি) করার জন্য হাইকোর্টের দেওয়া রায়ও বাতিল করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এর ফলে বাড়িটি মওদুদ আহমদের ভাইয়ের নামে নামজারি করতে হবে না এবং ভাইয়ের নামে দখল করা বাড়িটি মওদুদকে ছাড়তে হবে বাড়ি ছাড়তে হবে। তিন দশক ধরে এ বাড়িতে বসবাস করে আসছেন মওদুদ আহমেদ।
হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার (২ আগস্ট) এই রায় দেন।
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা মওদুদ আহমেদকে ওই বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে।
রাজউক এখন বাড়িটি নিজেদের তত্ত্বাবধানে নেবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।
রায়ের পর টুটুল বলেন, মওদুদের ভাইয়ের নামে ওই প্লটের বায়না চুক্তিতে তারিখ দেখানো হয়েছিল ১৯৮৫ সালের ১০ আগস্ট। কিন্তু ওই বাড়ির মালিক অস্ট্রেলীয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজ মারা যান ১৯৮৫ সালের ৩০ মার্চ। অর্থাৎ বায়নানামাটি ছিল ‘ভুয়া’।
৩০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ওই বাড়ি অবৈধভাবে দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মওদুদ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ।
দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৪ সালের ২৬ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দিলে ওই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক তা আমলে নেন।
অভিযোগে বলা হয়, গুলশানের যে বাড়িটিতে মওদুদ আহমদ ও তার পরিবার থাকছেন, তার প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির কাছ থেকে এই বাড়ির মালিকানা এহসান ‘লাভ করেন’। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তার স্ত্রী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।
পরের বছর থেকে মওদুদ পরিবার নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এরপর ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ তার ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মনজুরের নামে একটি ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
মওদুদ ওই অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে ফৌজদারি রিভিশন আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে গতবছর ২৩ জুন হাই কোর্ট তা খারিজ করে দেয়।
হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে মওদুদ আপিলের আবেদন করলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করে। এর ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগে মওদুদের আপিলের শুনানি হয়।
এদিকে মওদুদের এক আবেদনে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট হাই কোর্ট গুলশানের ওই বাড়ি তার ভাই মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন এবং ডিক্রি জারি করতে নির্দেশ দেয়। রাজউক হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চাইলে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করে। এরপর চলতি বছর শুনানি নিয়ে আদালত বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন, এবং দুটি বিষয়েরই একসঙ্গে নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ।