অস্তিত্ব থাকছে না রাগীব আলীর!
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ আগস্ট ২০১৬, ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ: সিলেট নগরীর উপকণ্ঠে তারাপুর চা বাগানে ‘অবৈধভাবে’ গড়ে তোলা মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কোনো স্থাপনায়ই আর অস্তিত্ব থাকছে না শিল্পপতি রাগীব আলীর। চা বাগানের জমিতে গড়ে তোলা তার সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে যাচ্ছে শিগগিরই।
রোববার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘তারাপুর চা বাগান উদ্ধারে দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নসংক্রান্ত’ বৈঠকে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে উচ্চ আদালতের নির্দেশ ও জেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তির পরও সরিয়ে না নেয়ায় এসব অবৈধ স্থাপনা ‘পতিত’ সম্পত্তি হিসেবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করার বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে।
বৈঠকে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নার্সিং ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ সময় চাইলেও উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন জেলা প্রশাসক।
বৈঠক শেষে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘জালিয়াতির মাধ্যমে দখলকৃত দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধভাবে নির্মিত রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থানান্তরের ব্যাপারে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার (অ্যাটর্নি জেনারেল) পরামর্শ চাইবে জেলা প্রশাসন।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থী ও রোগীদের নানা অসুবিধার কথা তুলে ধরেন। এজন্য তারা স্থাপনা সরিয়ে নিতে সময় প্রার্থনা করেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত ছয় মাস সময় পেরিয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।’
বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদিন। বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেবজিৎ সিনহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নুরুল হুদা ও জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএও) মুহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ, বিভাগীয় পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও জিপি অ্যাডভোকেট খাদেমুল মিল্লাত মো. জালাল, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী, সিলেট বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. গৌরমনি সিনহা, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আবদুস সালাম, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান, অন্যদিকে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. তায়েফ আহমদ, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবদুল জলিল, অধ্যাপক ডা. প্রদ্যোত কুমার ভট্টাচার্য, অধ্যাপক ডা. একেএম দাউদ ও অধ্যাপক ডা. এমএ সবুর।
বৈঠক সূত্র জানায়, দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন এ বৈঠক আহ্বান করে। বৈঠকের পর্যালোচনায় বলা হয়, রায়ের ৬ মাস মেয়াদ ও জেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তির পরও অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নেয়ায় সঙ্গত কারণেই ওই ‘পতিত’ সম্পদের মালিক রাষ্ট্র। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তি বিশেষের নামে না রেখে অন্য কোনো নামকরণ করারও প্রস্তাব হয়। তাছাড়া তারাপুর থেকে রাগীব আলীর নির্মিত কলেজ ও হাসপাতালের স্থাপনা অন্যত্র সরাতে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে বিধায় কলেজের লেখাপড়া ও হাসপাতালের চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয় সেই লক্ষ্যে আপাতত সেসব প্রতিষ্ঠান সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার ব্যাপারে অভিমত প্রকাশ করা হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি টিম শিগগিরই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে অংশ নেয়া ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী জানান, ‘রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার সময় প্রার্থনা করে বক্তব্য রাখেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তারাপুর চা বাগানের দখলকৃত জায়গা থেকে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থাপনা সরানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
তিনি বলন, ‘গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও হাসপাতালের মালিক রাগীব আলী তা সরিয়ে না নেওয়ায় তিনি স্থাপনার মালিকানা ছাড়ছেন কি-না, তা পরিষ্কার নয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বৈঠকে শেষপর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় হাসপাতালের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক।’
এদিকে তারাপুর চা বাগানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে সময় প্রার্থনা করে রোববার সুপ্রিমকোর্টে একটি আবেদন জানানো হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রমতে, রাগীব আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ আবেদন জানান। আদালত গত ৬ মাসে রায় বাস্তবায়নে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা ৩ দিনের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেন।
তারাপুরের শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউ দেবতার সেবায়েত ডা. পংকজ গুপ্ত শংকর জানান, তারাপুরের ব্যাপারে ইসকনের করা অপর পিটিশনের শুনানিও রোববার সুপ্রিমকোর্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।
উল্লেখ্য, ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে প্রতারণার মাধ্যমে দখল করা তারাপুর চা বাগান থেকে রাগীব আলীর অবৈধ দখল উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে চা বাগান ধ্বংস করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা, আবাসিক প্রকল্প উচ্ছেদ এবং চা বাগানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সবুজায়নসহ ১৭ দফা নির্দেশনা দেন আদালত। রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইয়ের রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ রায় দেন।