সিলেটের নদী-হাওরে ধরা পড়ছে রূপালী ইলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০১৬, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিলেটের সিলেটের নদী, খাল, বিল, হাওর জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় আড়াই’শ জাতের মিষ্টপানির মাছ। এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি সিলেটের মৎস্য উৎপাদনের অন্যতম ক্ষেত্র। দেশীয় মাছের সুতিকাগার বলা হয় এই হাকালুকিকে। সিলেটের মৎস্য ভাণ্ডারে অনেকদিন থেকেই লোনা পানির মাছ ইলিশের আনাগোনা চলছে। প্রতিবছর ডিমপাড়ার মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মেঘনার বুক ছুঁয়ে সিলেটের নদীতে প্রবেশ করে। ইদানিং সিলেটের কুশিয়ারা, সুরমা ও মনু নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ।
আগাম বন্যা হওয়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর হাওর হাকালুকিতে ইদানিং প্রচুর ইলিশ প্রবেশ করায় জেলেরাও মেতে উঠেছে ইলিশ ধরার প্রতিযোগিতায়। প্রতিদিন শত শত ইলিশ জেলেদের বেড়জালে ধরা পড়ছে।
এক সময় বৃহত্তর সিলেট খাল-বিল-হাওরে বেষ্টিত ছিলো। জলাশয় দখল বা ভরাটের মহামারি ছিলো না। যখন কুশিয়ারা বুকে ছিলো যৌবন তখন আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন মোড়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তো। কুশিয়ারা এবং মনুনদীর সঙ্গমস্থল মৌলভীবাজারের অবলুপ্ত মনুমুখ নৌবন্দরকে ঘিরে ৫০ এর দশক পর্যন্ত ইলিশের হাট বিদ্যমান ছিলো। সিলেটের শেরপুর এবং হবিগঞ্জের মারকুলি ঘাটেও চাহিদামাফিক ইলিশ পাওয়া যেতো, সুরমা নদীতেও রূপালী ইলিশে ভরে উঠতো জেলেদের জাল। কিন্তু ৬0 এর দশক থেকে বৈরী পরিবেশ, স্থানে স্থানে খাল-নদী ভরাট, পানি প্রবাহে বাধার কারণে ক্রমেই সিলেট অঞ্চলের জলাশয়ে ইলিশের উপস্থিতি হ্রাস পেতে শুরু করে। বিশেষত, পানি দূষণ, নদী কেন্দ্রিক গঠে কল-কারখানা, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার নির্গত বর্জ্য ইলিশের আগমনকে ব্যহত করে। বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। বিশেষ করে আগাম বন্যায় সিলেটের নদীতে নতুন পানি প্রবেশ করায় জেলেদের জালে ইলিশের জাটকা ও মধ্যমানের ইলিশ ধরা পড়ছে। হাকালুকি হাওরেও ইলিশের রূপালী ঝিলিক নাড়িয়ে দেয় জেলেদের মন।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ নৃপেন্দ্র কুমার দাস বলেন, দিন বদলের পরিক্রমায় লুপ্ত অতীত এখন সম্ভাবনাময় বর্তমান হয়ে হাতছানি দিচ্ছে। সিলেট অঞ্চলের কুশিয়ারা নদী একসময় ছিলো ইলিশের অন্যতম চারণক্ষেত্র। ভারতের বরাক নদীর শাখা সিলেটের কুশিয়ারা নাম ধারণ করে একপর্যায়ে বিবিয়ানা ও ভেঁড়া মোহনায় রূপান্তরিত হয়ে মেঘনার সাথে মিশেছে। তাই সঙ্গত কারণে মেঘনা নদী থেকে মৌসুমকালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উজানমুখী হয়ে ছুটে আসতো কুশিয়ারা অববাহিকায়। একসময় বৈরী পরিবেশের কারণে ইলিশের উজান অভিযাত্রা ব্যহত হলেও এখন ফিরে আসছে অনুকূল পরিবেশ। তাই ইলিশের উপস্থিতি বৃদ্ধি পচ্ছে কুশিয়ারাতে। বিশেষত নদীর ভাটিতে ড্রেজিং শুরু হওয়ায় এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু হওয়াতে কুশিয়ারা তলের জলজ পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, যা ইলিশ উপস্থিতির ক্ষেত্রে সহায়ক।
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৫টি উপজেলায় ১৮১ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ও সুবিস্তৃত হাকালুকি হাওরের অথৈ জলরাশি ছোটো-বড়ো ৩টি সংযোগ নদী দিয়ে কুশিয়ারায় নির্গত হচ্ছে। সংযোগ নদীসমূহের স্রোত ঠেলে দলবদ্ধ ইলিশ ছুটে আসছে হাকালুকি হাওরে। হাওরের ৭/৮টি জলাশয় আছে, যেখানে পানির গভীরতা ২৫/৩০ ফুট পর্যন্ত। এই গভীর জলাশয়েই থিঁতু হবার পথ খুঁজছে ঝাঁকে ঝাঁকে আগত ইলিশ। আগত এই ইলিশের ঝাঁক থেকে দলছুট অবস্থায় কিছু কিছু ইলিশ ধরা পড়ছে শিকারিদের বেড়জালে।
এক সময় ইলিশ ছিলো ‘গরীবের খাবার’। সামর্থহীনরা বাজার থেকে অন্যান্য মাছের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে ইলিশ কিনতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে এ চিত্র পুরোপুরি বিপরীত। গরীবের ইলিশ এখন শোভা পায় বড় লোকের ‘ড্রাইনিং টেবিলে’। গত কয়েক বছর ধরে সিলেট অঞ্চলের জলাশয়ে প্রচুর ইলিশ ধরাপড়ায় আবারো সিলেটে ইলিশ সহজলভ্য হয়ে উঠবে এমনটাই আশা করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।