বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা নারী-পুরুষ যে দেশের
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০১৬, ৫:২০ অপরাহ্ণ
সুরমা ডেস্কঃ বিশ্বব্যাপী উচ্চতা নিয়ে করা সবচেয়ে বড় একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নেদারল্যান্ডসের পুরুষ ও লাটভীয় নারীরা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ। গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে, গত শতকে ইরানি পুরুষ ও দক্ষিণ কোরীয় নারীদের উচ্চতা সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষদের মধ্যে থাকলেও ২০১৪ সালে দেশটির পুরুষরা বিশ্বের মধ্যে ৩৭তম ও নারীরা ৪২তম অবস্থানে রয়েছে। ১০০ বছর আগে এ দেশেটির পুরুষরা উচ্চতায় বিশ্বে ৩য় স্থানে ও নারীরা ৪র্থ স্থানে ছিলেন।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে গবেষণাটি করা হয়েছে এবং ইলাইফ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এ গবেষণায় আরো দেখা গেছে, গেল ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে কিছু দেশের মানুষের উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ ঠিক একশ বছর আগে গবেষণা শুরুর সময় এসব জাতির উচ্চতা দ্রুত বাড়ছিল।
সম্পদশালী দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম প্রথম দেশ যার নাগরিকদের উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধারার অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড ও জাপান অন্যতম। তবে স্পেন ও ইতালি এবং লাতিন আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মানুষের উচ্চতা বৃদ্ধি এখনও অব্যাহত আছে।
অন্যদিকে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চল ও উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের গড় উচ্চতা গেল তিন থেকে চার দশকের মধ্যে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
গবেষণা থেকে জানা গেছে, পুষ্টি ও পরিবেশগত বিষয়গুলো মানুষের উচ্চতার ক্ষেত্রে জোরালো প্রভাব ফেলে, তবে কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে বংশগতিও একটি ভূমিকা রাখে। সাধারণত তুলনামূলক ভালো খাবার ও ভাল পরিবেশে বড় হওয়া শিশু ও কিশোররা লম্বা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাচ্চা পেটে থাকার সময় মায়ের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টিও তার শিশু কতোটা লম্বা হবে সেক্ষেত্রে একটা প্রভাব রাখতে পারে।
উচ্চতার সঙ্গে জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, লম্বা মানুষজন বেশি দিন বেঁচে থাকে, ভালো পড়াশোনার সুযোগ পায় এবং বেশি আয় করে। তবে লম্বা হওয়ার কিছু ঝুঁকিও আছে। এ ধরনের মানুষদের গর্ভাশয় এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি।
ইম্পেরিয়াল কলেজের জনস্বাস্থ্য বিষয়ের অধ্যাপক মাজিদ ইজ্জাতি বলেন, “এই গবেষণা গেল শতকে জাতিগুলোর স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের একটি ধারণা দিয়েছে।”
গবেষণায় ৮০০টি শক্তিশালী গবেষক দল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছে। এক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়া লোকজনের তথ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক জনজরিপ থেকে শুরু করে রোগতত্ত্বসহ বিভিন্ন তথ্যউৎস ব্যবহার করা হয়েছে।
১৯১৪ থেকে শুরু করে ২০১৪ পর্যন্ত ১৮ বছর বয়সীদের তথ্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণাটি সম্পন্ন করেছেন। তারা দেখেছেন, এই সময়ের মধ্যে ইরানি পুরুষদের গড় উচ্চতা ১৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং দক্ষিণ কোরীয় নারীদের উচ্চতা ২০ দশমিক ২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এই একশ বছরে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের গড় উচ্চতা ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষদের গড় উচ্চতা ৬ সেন্টিমিটার ও নারীদের গড় উচ্চতা ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এই সময়ে চীনা পুরুষদের গড় উচ্চতা ১১ সেন্টিমিটার ও নারীদের গড় উচ্চতা ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
২০১৪ সালে বিশ্বের সবচেয় খাটো পুরুষ হচ্ছে পূর্ব তিমুরের। তাদের গড় উচ্চতা ১৬০ সেন্টিমিটার। অপরদিকে একই বছর বিশ্বের সবচেয়ে খাটো নারীরা গুয়াতেমালার, তাদের গড় উচ্চতা ১৪৯ সেন্টিমিটার।
বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ডাচ পুরুষদের গড় উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৮২ দশমিক ২ সেন্টিমিটার, আর লাটভীয় নারীদের গড় উচ্চতা ১৭০ সেন্টিমিটার।