যৌথ অভিযানে আরএসও নেতা ও সৌদি নাগরিকসহ গ্রেপ্তার ৩
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০১৬, ২:২১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক :
মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরএসও নেতা ছালাহুল ইসলামসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে বিজিবি ও পুলিশের একটি যৌথ দল। আজ শনিবার কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র উপকূলের বাহারছড়া এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন সৌদি নাগরিকও রয়েছেন। তবে তাঁর নাম জানা যায়নি।
আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-এর নেতা ছালাহুলের বাড়ি মিয়ানমারের মংডু শহরের নাকপুরা কুয়ার বিল গ্রামে। ১৯৮৮ সালে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে টেকনাফে অনুপ্রবেশ করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্টে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সফর করেন।
ওই সব দেশের আর্থিক সহযোগিতায় ছালাহুল কক্সবাজার সরকারি কলেজের পেছনে পাহাড়ি পাঁচ একর জমিতে (দক্ষিণ মুহুরীপাড়ার) ইমাম মুসলিম (রা.) ইসলামিক সেন্টার নামে বিশাল মাদ্রাসা তৈরি করেন। একই সঙ্গে ওই সেন্টারের পরিচালকও।
বিজিবি টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর গ্রামের জনৈক ছৈয়দ করিমের বাড়িতে জঙ্গি নেতারা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করছে বলে যৌথ বাহিনীর কাছে খবর ছিল। বেলা একটার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ ইকবালের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী বাড়িটি ঘিরে ফেলে। যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন বাড়ির মালিক ছৈয়দ করিম ও একজন সৌদি নাগরিক। পরে ছৈয়দ করিমের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর বাড়ির শৌচাগার থেকে জঙ্গি নেতা ছালাহুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এ সময় টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ও তাঁর ভাই বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, ওই বৈঠকে জঙ্গি তৎপরতা, রোহিঙ্গাদের অর্থ প্রদান এবং এলাকায় মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণের নামে ১৪ কোটি টাকা বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু কৌশলে ওই টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অভিযানের সময় সাংসদ আবদুর রহমান বদি ঘটনাস্থলে গিয়ে ছালাহুলসহ সৌদি নাগরিককে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেছিলেন। অভিযানের সময় ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া জন প্রতিনিধি দুই ভাই সাংসদ বদির ঘনিষ্ঠজন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, সাংসদ বদি ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের পক্ষে নানা কথা বলেছেন। ‘আমরা তাঁকে (বদিকে) বলেছি আমাদের কাজ আমাদেরকেই করতে দিন।’ এরপর তিনি চলে যান। রোহিঙ্গা ও জঙ্গি তৎপরতায় অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা কিংবা বিনিয়োগ আছে কি না তার অনুসন্ধান চলছে। এ প্রসঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও সাংসদ বদির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের ২০ মার্চ জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকায় দায়ে টেকনাফের হ্নীলা আল জামেয়া দারুসসুন্নাহ মাদ্রাসা থেকে ছালাহুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ওই সময়ও তিনি সেখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে গোপন বৈঠক করছিলেন।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ জানান, জঙ্গি নেতা ছালাহুল ইসলামসহ গ্রেপ্তারকৃত তিন ব্যক্তিকে এখনো থানায় হস্তান্তর করা হয়নি। তাঁদের বিজিবি ব্যাটালিয়নে আনা হয়েছে।
আজকের যৌথ বাহিনীর অভিযানে ছিলেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর রাসেল, টেকনাফ থানা-পুলিশের এসআই গৌতম রায় সরকারসহ অনেকে। সূত্র: প্রথম আলো