আলেম-উলামার পদভারে মুখরিত ছিল ফুলতলী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুলাই ২০১৬, ১:০৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলিমে দ্বীন, উস্তাযুল উলামা শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলীর নিকট থেকে ইলমে হাদীসের সনদ ও পাগড়ী গ্রহণের লক্ষ্যে গতকাল আলেম-উলামার পদভারে মুখরিত হয়েছিল ফুলতলী। এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে দশটায় আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর মাযার যিয়ারতের মাধ্যমে সনদ বিতরণ মাহফিল শুরু হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন মাহফিলের মধ্যমণি, সনদ গ্রহণকারী উলামায়ে কিরামের মহান উস্তায আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী। তিনি বলেন, বর্তমানে কিছু বাতিলগোষ্ঠী মানুষ হত্যা করে জান্নাতে যেতে চায়। এরা খারিজীদের উত্তরসূরী। বাতিল ফিরকা খারিজীরা গুপ্ত হত্যা শুরু করেছিল। তারা নামাযরত অবস্থায় হযরত যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রা.) কে হত্যা করেছিল।
তারা মনে করে বিরোধীদের হত্যা করলেই জান্নাত পাওয়া যাবে। এটা ইসলাম এবং দ্বীনের পথ নয়। আমরা সে পথে নই। যারা প্রকৃত ইসলামী আদর্শ লালন করে তারা মানুষ হত্যা করতে পারে না।
খারিজীদের একটি দল তাবাররুকও অস্বীকার করে। অথচ রাসূল (সা.) হজ্জের কার্যাবলী শেষ করে মাথা মুণ্ডন করত নিজ হাতে আপন চুল মুবারক সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে বিতরণ করেছেন। যদি তাবাররুক শিরক হতো তাহলে তিনি এরূপ করতেন না।
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) স্বীয় টুপির মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চুল মুবারক রাখতেন। তাবাররুকের তাযীম করতে গিয়ে একজন সাহাবী কি শিরক করে ফেললেন? ইমাম বুখারী (র.) নিকটও আল্লাহর রাসূলের চুল মুবারক ছিল। তিনি তা জামার মধ্যে রাখতেন। তিনি বলেন, আউলিয়ায়ে কিরাম সারাজীবন শান্তির শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা তাদের উত্তরসূরি। তাদের শিক্ষাই আমরা প্রচার করব। আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের শিক্ষাকে সমাজে তুলে ধরতে হবে, সমাজকে বাতিল আকীদা-বিশ্বাস থেকে দূরে রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ও বাদে দেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার আরবী প্রভাষক মাওলানা নজমুল হুদা খানের পরিচালনায় মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইছামতি কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ শায়খুল হাদীস আল্লামা হবিবুর রহমান, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক আল্লামা কবি রূহুল আমীন খান, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শুয়াইবুর রহমান। মাহফিলে বক্তব্য রাখেন মাওলানা মুফতী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, সোবহানীঘাট হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ও বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শায়খুল হাদীস আল্লামা হবিবুর রহমান বলেন, ইলমে হাদীস একটি গুরুত্বপূর্ণ আমানত। তিনি হাদীস শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যারা হাদীস শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং শিক্ষা দেন তারা রাসূলে পাক (সা.) এর খলীফা বা প্রতিনিধি। তিনি বলেন, হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী আমাদের ইলমে কিরাতের ইমাম, তরীকতের ইমাম, হাদীসেরও ইমাম। তাঁর মতো দ্বীনের এমন খাদিম বিরল।
মাওলানা রূহুল আমীন খান বলেন, ফুলতলী দরবারে ইলমে কিরাত, ইলমে হাদীস ও ইলমে তরীকতের সমন্বয় রয়েছে। এখানে এ তিন সিলসিলা ধারাবাহিকভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) পর্যন্ত যুক্ত। তিনি বলেন, আল কুরআনের নির্দেশ হলো তোমরা আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গীন হও। আমরা কিভাবে আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গীন হবো? এর জবাব হলো, হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর আখলাক ধারণ করেছেন। তাঁর অনুসরণ করলেই আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গীন হওয়া যাবে। যারা ইলমে হাদীসের সনদ নিচ্ছেন আল্লাহর রাসূলের শিক্ষা ও আদর্শের সাথে তাদের নিবিড় সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন।
মাওলানা নজমুদ্দীন চৌধুরী বলেন, আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী একজন প্রচার বিমুখ মানুষ। শৈশবে হযরত বদরপুরী (র.) তাঁর মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন তিনি ওলী হবেন। বদরপুরী (র.) এর কথা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তিনি সারাজীবন এতীম-অনাথ, গরীব-অসহায় মানুষের খিদমত করেছেন। অসহায় মানুষের প্রতি দরদ তাঁর জন্মজাত। তিনি বহুবার গরীব মানুষকে নিজের পরনের জামা দান করেছেন। এমনকি বিছানার চাদর পরে পরনের লুঙ্গি পর্যন্ত দান করেছেন। তাঁর মতো এমন মানুষের তুলনা হয় না। অসহায় দুঃস্থ মানবতার খিদমতের পাশাপাশি শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি ইলমে হাদীসের দারসও দিয়েছেন। আজকে যারা তাঁর নিকট থেকে পাগড়ী নিচ্ছেন তারা অত্যন্ত ভাগ্যবান।
মাহফিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, মুহাদ্দিস ও শিক্ষকসহ কামিল উত্তীর্ণ হাজারো উলামায়ে কেরামকে সনদ ও পাগড়ী প্রদান করা হয় যারা ইতোপূর্বে হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৗধুরী ফুলতলীর নিকট ইলমে হাদীসের দারস নিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, হাফিয মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা আব্দুল মান্নান আইনপুরী, মাওলানা শুয়াইবুর রহমান, সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান, বুরাইয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল কাদির, সোনাতলা সিরাজুল ইসলাম সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাফিজুর রহমান, ইকড়ছই সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ছমির উদ্দীন, রাখালগন্্জ সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হবিবুর রহমান, আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা একেএম মনোওর আলী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী, হবিগনজ দারুচ্ছুন্নাত আলিয়া মাদরাসার মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল মোছাব্বির, মাথিউরা সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল আলিম, শ্রীমঙ্গল আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহবুব আহমদ সালেহ, সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ নুমান, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রহীম, জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নুরুল ইসলাম, ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা এখলাসুর রহমান, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা শামসুল ইসলাম, ছাতক জালালিয়া আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল আহাদ, সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ছালিক আহমদ, সুন্দাদিলের মাওলানা কাজী আলাউদ্দিন আহমদ, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ.উ.ম আব্দুল মুনঈম, হুলিয়ারপাড়া সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, বুরাইয়া কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা নুরুর রহমান প্রমুখ।