সিলেট ছাত্রলীগে শনির দশা!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুলাই ২০১৬, ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ একের পর এক অঘটনের কারণেই আলোচিত-সমালোচিত সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। বহিষ্কার, স্থগিতাদেশ তাদের পিছু ছাড়ছে না। আর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের প্রতি চরম অসন্তোষ ছাত্রলীগের শিক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের।
জেলা ছাত্রলীগ : পংকজ পুরকায়স্থ সভাপতি থাকাবস্থায় একের পর এক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতে থাকে। পংকজের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় হিরণ মাহমুদ নিপুর যুগ।সিপিবি-বাসদের সমাবেশে হামলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগে নিপুকে করা হয় বহিষ্কার। নতুন কমিটিতে সভাপতি হয়ে আসেন শাহরিয়ার আলম সামাদ আর সাধারণ সম্পাদক হন এম রায়হান চৌধুরী। ছোটোখাটো ঘটনায় সভাপতি সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক জড়িত থাকলেও তা খুব বেশি প্রকাশ পায়নি। তবে নেতাকর্মীদের সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপ শেষপর্যন্ত কমিটিকে ঠেলে দেয় স্থগিতের দিকে। এখনও পরিষ্কার নয়; জেলা কমিটির স্থগিতাদেশ কেন্দ্র প্রত্যাহার করবে কি না? নাকি নতুন কোনো কমিটি আসবে?
এদিকে, সম্প্রতি, নিপুর মাধ্যমে চতুর্থ ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ গত বৃহস্পতিবার ফের আসে আলোচনায়। ওই দিন বিকেলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরন মাহমুদ নিপুর কারামুক্তি নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে কারারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান নেতাকর্মীরা। এ সময় ৪ জন চিত্রসাংবাদিকও আহত হন। ওই রাতেই অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ পারভেজ মঈন। পর দিন শুক্রবার স্থগিত থাকা কমিটির সহসভাপতিসহ চারজন এবং সিলেট এমসি কলেজ ও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের চার নেতাসহ ৮ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। এমন পরিস্থিতিতে ‘শনির দশা’ থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছে না জেলা ছাত্রলীগ।
সূত্র মতে, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পংকজ হয়েছিলেন বহিষ্কৃত, নিপুর পুরো কমিটি বাতিল এবং সামাদ-রায়হানের কমিটি এখন রয়েছে স্থগিত।
২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শাহরিয়ার আলম সামাদকে সভাপতি ও রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের ১০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি দেওয়া হয়। পরে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর সেই কমিটি পূর্ণতা পায়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার চার মাস পূর্ণ না হতেই কমিটি স্থগিত করে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এ ব্যাপারে স্থগিত কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ বলেন, জেলা ছাত্রলীগ সব সময় ষড়যন্ত্রের শিকার। বিভিন্ন অঘটনের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্বে আসার পূর্ব থেকেই একের পর এক অঘটন ঘটছে। অঘটনের মূল কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর পদে আসার আকাক্সক্ষা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিলেটের সন্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কেউ বলতে পারে না কবে জেলা ছাত্রলীগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হবে।
মহানগর ছাত্রলীগ : ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ১ বছর ৯ দিন অতিবাহিত হলেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এমন এ অবস্থায় গত ১৯ জুলাই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এতে ত্যাগী নেতাদের মাঝে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে। পদপ্রাপ্ত নেতারা বিভিন্ন বলয় থেকে ওঠে আসায় এমন সমন্বয়হীনতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়নি বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন। এ সব কারণে সিলেট ছাত্রলীগে বিরাজ করছে স্থবিরতা। তাদের তেমন কোনো কর্মসূচিও নেই।
তবে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার জানিয়েছেন, কমিটি খুব শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ হবে। বিলম্বের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীরা প্রবেশের চেষ্টা করছে। তাই আমরা যাচাই-বাছাই করে ত্যাগী, শিক্ষিত ও নিবেদিত নেতাদের কমিটিতে স্থান দিতে চাচ্ছি। তিনি বলেন, একজনকে কমিটিতে আনতে হলে অবশ্যই তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হয় আর সেজন্যই আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহানগর ছাত্রলীগের আগের কমিটি ২৭টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করে। ২৭টি ওয়ার্ডের কমিটির মেয়াদ থাকায় আমরা আর নতুন কমিটি করা লাগছে না।
দীর্ঘ চার বছর পর গত বছরের ৪ জুলাই সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা না করেই তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ঢাকা ফিরে যান। পরে ২০ জুলাই ঢাকা থেকে সিলেট মহানগর কমিটির চার সদস্যের নাম ঘোষণা করেন। এ কমিটির মেয়াদ ছিল এক বছর। যা ৯ দিন শেষ হয়েছে।
ওই সময় নতুন কমিটির সভাপতি হন আব্দুল বাসিত রুম্মান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার। সাংগঠনিক সম্পাদক হন সজল দাস অনিক ও সৈকত চন্দ্র রিমি। তখন কথা ছিল শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কিন্তু ১ বছর ৯ দিনেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির দেখা নেই। এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতা একসাথে বসে কোনো বৈঠকও করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।