ডাগ আউটের লড়াইয়ের অপেক্ষায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:০১:১৮,অপরাহ্ন ২৮ জুলাই ২০১৬
লন্ডন অফিস:
আগামী মাসের ১৩ তারিখ শুরু হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ। এরই মধ্য শুরু হয়ে গেছে দলগুলোর ম্যানেজারদের কথার লড়াই। দলগুলো সাফল্য পেতে মরিয়া প্রথমেই এবার মাঠের কৌশল ঠিক করে দিতে ভিড়িয়েছে দুনিয়া সেরা কোচদের ।
গার্দিওলা, মরিনহো, ক্লোপ,কন্তে,ওয়েঙ্গার, রেনেইরি,পচেত্তিনোদের লড়াইটা যে এবার জম্পেশ হবে তা শুরুতেই অনুমান করা যাচ্ছে। এনচেলত্তি ও দিয়েগো সিমিয়নে ছাড়া ফুটবল দুনিয়ার আলোচিত সব ম্যানেজারই এখন প্রিমিয়ার লীগের দখলে। মাঠের লড়াই থেকে ডাগ আউটের কোচদের লড়াই দেখতে উন্মুখ হয়ে আছে ফুটবল ভক্তরা । আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইংলিশদের তেমন সাফল্য না থাকলেও প্রিমিয়ার লীগ যে দুনিয়া সেরা তাতে কারো দ্বিমত নেই। দর্শক,মাঠ,দল সব মিলিয়ে পৃথিবী শ্রেষ্ট লীগ বলা যায় প্রিমিয়ার লীগকে। তার উপর দলগুলোর মাঠের পারফরমেন্স তাদের দিয়েছে আলাদা মর্যাদা । এখানে কাড়ি কাড়ি টাকা খরছ করেও সাফল্য পাওয়া যায়না । তার উদাহরন তো গত মৌসুমে লেস্টার সিটির শিরোপা জয়। অন্যান্য লীগ গুলোতে যেখানে দুই থেকে তিনটি দল থাকে শিরোপা দৌড়ে সেখানে প্রিমিয়ার লীগে ৮/১০ টি দল লড়াই করে শেষ পর্যন্ত । এবারো প্রত্যেকটি দল বেশ আটঘাট বেঁধেই নেমেছে শিরোপার জন্য। আর এর জন্য প্রত্যেকটি দলই তাদের ডাগ আউটের সেনানীকে নিয়োগ দিয়েছেন বুঝে শুনেই। বায়ার্ন থেকে বার্সেলোনার সাবেক ম্যানেজার জোসেফ গার্দিওলাকে নিয়ে এসেছে মানচেষ্টার সিটি । সিটির প্রধান প্রতিপক্ষ মানচেষ্টার ইউনাইটেড তাদের কে টেক্কা দিতে নিয়ে এসেছে গত মৌসুমে চেলসি থেকে বরখাস্ত মরিনহোকে । সাফল্যে না হোক অন্তত ডাগ আউটে তো সিটির সাথে লড়াই করা যাবে । ঠোঁট কাটা স্বঘোষিত স্পেশালওয়ান শুধু গার্দিওলা সাথে নয় ইংল্যান্ডে প্রায় সব ম্যানেজারের সাথে টুকটাক লড়াই করেছেন। আর্সেন ওয়েঙ্গার, আর্সেনালের এই ম্যানেজারকে একজন নিখাদ ভদ্রলোক বলেই জানে সবাই। ইংল্যান্ডে টানা ২০ বছর কাটিয়ে দেয়া ওয়েঙ্গার কখনো কারো সাথে শারীরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হননি। কিন্তু মরিনহো গত মৌসুমে তাকে এতোটাই ক্ষেপিয়েছিলেন যে ওয়েঙ্গার মরিনহোকে ধাক্কা মারতে কার্পন্য করেননি । লিভারপুল গত মৌসুমে মাঝখানে নিয়ে আসে বরুশিয়া ডর্টমূন্ডের সাবেক ম্যানেজার ইয়োর্গেন ক্লোপকে। ইউরোপের অন্যতম হাইপ্রোফাইল এই ম্যানেজার তার কোচিং দক্ষতা দিয়ে ধুকতে থাকা লিভারপুলকে অনেকটাই বদলে দিয়েছেন। তার প্রমান গত মৌসুমে লিভারপুলের দুইটি ফাইনালে খেলা । আর ডাগ আউটে তার লাফালাফিতো সবার নজর কেড়েছে। লিভারপুলের সমর্থকদের জাগিয়ে তুলতে তার গোল উদযাপনের দৃশ্যটাই প্রতিপক্ষ ম্যানেজার খেলোয়াড়দের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের সাবেক ম্যানেজার সাম এলারডাইস গত মৌসুমের একটি ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্বেলনে তাকে একজন নরম জার্মানী বলে তিরস্কার করেন। সিটি,ইউনাইটেড,লিভারপুল হাইপ্রোফাইল ম্যানেজার নিয়োগ দিবে আর চেলসির মালিক আব্রাহামোবিচ বসে থাকবেন তা কি করে হয়? রাশিয়ান এই ধনকুবের ইতালীর জাতীয় দলের ম্যানেজার এন্তোনিয় কন্তেকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ভাগিয়ে এনেছেন। আর যারা ইউরোপিয়ান কাপে স্পেনকে হারানোর পর তার উদযাপনের দৃশ্য দেখেছেন তাদের আর বুঝতে বাকি নেই লড়াইয়ের মনোভাব নিয়েই তিনি ইংল্যান্ড এসেছেন। তার ক্যারিয়ারে কখনো এভাবে উত্তেজিত হতে কেউ দেখেনি । লেস্টার সিটির ক্লদিও রেনেইরির বয়স হয়েছে। বুড়ো বয়সে তার ক্যারিয়ারের সমস্ত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গত মৌসুমে শিরোপা জিতেছেন। এই ইতালিয়ান নিচের সারির একটি দলকে নিয়ে শিরোপা জিতে চমকে দিয়েছিলেন গোটা ফুটবল দুনিয়াকে। ডাগ আউটে কারো সাথে লড়াই করার মতো মানুষ নন রেনেইরি। তবে এবার যে তার দল আর তার দিকে সবার আলাদা দৃষ্টি থাকবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। টটেনহামের মরিশিয়ো পচেত্তিনো গত মৌসুমে লেস্টারের পিছু পিছু ছুটেছিলেন একেবারে শেষ পর্যন্ত।
এস্পানিউল ও সাউদাম্পটনের সাবেক এই ম্যানেজার সবার নজরে আছেন এই মৌসুমেও। আর্জেন্টাইন এই তরুন ম্যানেজারের ডাগ আউটে লড়াই করার কোন পুর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও এবার তার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই। একের পর এক কঠিন ম্যাচে কতক্ষন নিজেকে ধরে রাখা যাবে তা বড় প্রশ্নই । মরিনহো-গার্দিওলা, মরিনহো-ওয়েঙ্গার, ক্লোপ-কন্তে লড়াইগুলো যে কত রোমাঞ্চকর হবে তা সহজেই অনুমেয়। এদের বাইরে এভারটনের রোনাল্ড কোম্যান, ক্রিস্টাল প্যালেসের এলান পারডিউ, স্টোক সিটির মার্ক হিউজেস, ওয়েস্ট ব্রোমের টনি পুলিস, নামগুলো বেশ আলোচিত। এরা কখনো ছোট দলের ম্যানেজার বলে একটুও নমনীয় থাকার পাত্র নন। বরং ম্যাচের পুর্বে তাদের দেওয়া ব্রিফিংগুলো থাকে আক্রমণাত্মক।এই প্রথম আলোচিত হাই প্রোফাইল প্রায় সব ম্যানেজার একই লীগে একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছেন। ইংলিশদের পাশাপাশি তাবৎ বিশ্বের ফুটবল প্রেমিকরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন প্রিমিয়ার লীগের ।