আবাসন সমস্যায় সিলেট নগরীর ৫ লাখ শিক্ষার্থী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুলাই ২০১৬, ৭:১০ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আবাসন সমস্যায় সিলেট নগরীর প্রায় ৫ লাখ শিক্ষার্থী। নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থার প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে ছাত্রীদের অনেক বেশী দুর্ভোগ পোহতে হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে শহরে পড়ালেখা করতে আসা এসব শিক্ষার্থী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়ালেখা করছেন। তাদের আবাসনের দাবিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বরাবরই উপেক্ষিত। এ সমস্যা সমাধানে নতুন হোস্টেল (হল) নির্মাণ করার উদ্যোগ তহবিল সংকট ও সরকারি অনুদান না পাওয়ায় বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এমনকি শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২৫ ভাগ আবাসিক সুবিধা ভোগ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আড়াই হাজার আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। আবাসিক ৫টি হলের মধ্যে ৩টি ছাত্র ও ২টি ছাত্রী হল রয়েছে। যদিও মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে ৯টি আবাসিক হল নির্মাণের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তথ্য অনুসারে, শাবি শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৬০৭৮ জন। ৩টি ছাত্র হলে আসন রয়েছে মাত্র ১০৫২টি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ২৫১৮ জন, কিন্তু দুটি ছাত্রী হল ও তিনটি হোস্টেলে সব মিলিয়ে ১৩৭২টি আসন রয়েছে। ফলে শতকরা ৪৫ শতাংশ ছাত্রী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে প্রথম বর্ষে এসে আসন পাওয়াতো দূরের কথা উল্টো বৎসরে ১০ গুণ বেশি টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা হোস্টেলগুলোতে থাকতে হচ্ছে ছাত্রীদের।
এমসি কলেজের সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ৪০৩ জন। ৫টি ব্লক নিয়েই চলছে কলেজের ছাত্র হোস্টেল। কদিন আগে হোস্টেল পুড়ে যাওয়ায় বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় আবাসিক ছাত্রদের। সংস্কারের পর ফের ছাত্ররা ফিরে হোস্টেলে। এছাড়া রয়েছে ছাত্রীদের জন্য একটি ৩ তলাবিশিষ্ট হল- যা এখনও পুরোপুরিভাবে ব্যবহার উপযোগী হয়নি। দুই বছর আগে নতুন দুটি ছাত্র এবং ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মদনমোহন কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাসটি ভেঙে ফেলা হয় বছর কয়েক আগে। এরপর নতুন করে নির্মাণ করা হলেও তা শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণে কোনো কাজে আসছে না।
সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ৩ হাজার ছাত্রীর বিপরীতে মাত্র ৪৫০-৪৭৫ জন আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারিভাবে অনুমোদিত সিটের সংখ্যা ৩৬০টি। বাধ্য হয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত সিটের সঙ্গে অতিরিক্ত ৯০-১১৫ সিট বরাদ্দ করেছেন ছাত্রীদের আবাসন সমস্যার কথা চিন্তা করে। সিলেট সরকারি কলেজের ২ হাজার ২০০ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে হলের সিট সংখ্যা মাত্র ৮৭টি। অতিরিক্ত ১৩টি সিট নিয়ে বর্তমানে ১০০ জন হলে অবস্থান করছেন। সিলেটের ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫টি মেডিকেল কলেজে রয়েছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। যাদের অধিকাংশই আবাসন সংকটের শিকার হচ্ছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাঠদানের ব্যবস্থা করলেও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের চাহিদামাফিক আবাসন ব্যবস্থা করতে পারছেন না।
এছাড়াও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, তপশিল ছাত্রাবাস, উমেশ চন্দ্র নির্মলাবালা ছাত্রাবাস, মুন মুন মহিলা হোস্টেল, সিলেট কমার্স কলেজের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা, দিলারা হান্নান হল প্রাইভেট লিমিটেড ছাত্রছাত্রীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে কিছুটা ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা করে দিয়েই দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব ব্যবস্থায় খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ।