জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপি-জামায়াত জড়িত থাকতে পারে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০১৬, ৬:২০ অপরাহ্ণ
সুরমা ডেস্কঃ
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দেশে বিএনপি-জামায়াত জোট জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিটি ঘটনার পর তারা (বিএনপি) শর্তজুড়ে দিয়ে বলে, তাদের শর্ত মানলেই এসব জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ হয়ে যাবে! এসব সন্ত্রাসী হামলা ও জঙ্গিদের নিয়ে বিএনপির নেতারা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে মনে হয় তারাই প্রচ্ছন্নভাবে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ জনগণও মনে করে, তারাই এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি এদের অর্থদাতা, অস্ত্রদাতা, মদতদাতাসহ নেপথ্যে থাকা সকলকে খুঁজে বের করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে তিনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়ে কল্যাণপুরে জঙ্গিদের দমন করায় আল্লাহর রহমতে দেশ ও জাতি আরেকটা বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। এরা আরো একটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটানোর জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত সাহসীকতার সঙ্গে জঙ্গিদের দমন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, যার যার অবস্থান থেকে ইতিমধ্যে সারা দেশেই জনগণের মধ্যে জঙ্গিবাদবিরোধী দৃঢ় অবস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্বল্পসময়ে আমরা সারা দেশে যে গণসচেতনতার সৃষ্টি ও জাতীয় ঐক্য গড়তে সক্ষম হয়েছি, তা পুরো বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার গঠনের পর থেকেই জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। তবে বর্তমানে এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে এমন হামলার ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, আমরা একটি রাজনৈতিক পক্ষের অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবিলা করে দেশে যখন শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি তখন এমন হামলার ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি আরো বলেন, ইসলাম শান্তি ও পবিত্র ধর্ম। অথচ শান্তির এই ধর্মের নামে মানুষকে জঘন্যভাবে হত্যা করে সারা বিশ্বের সামনে সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে সংসদ নেতা বলেন, একটি রাজনৈতিক দল আছে যাদের জন্মই হচ্ছে হত্যা-ক্যু ও অবৈধ ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। এরাই (বিএনপি) মার্শাল অর্ডিন্যান্স দিয়ে যুদ্ধাপরাধী ও নিষিদ্ধ জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। তারা এখন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মদত দিচ্ছে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত যারাই ধরা পড়ছে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে যাচ্ছে তারা কোন রাজনৈতিক দল থেকে এসেছে, তাদের উত্থান কোথায় থেকে। অর্থাৎ এরাই (বিএনপি-জামায়াত জোট) সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মদত দিয়ে যাচ্ছে।
খুতবাহ তৈরি করে দেয়া হয়নি: তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সারা দেশের মসজিদগুলোতে খুতবাহ তৈরি করে দেয়া হয়নি। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কোরআন ও হাদিসসমূহের উদ্ধৃতিগুলো পুস্তিকা ও লিফলেট আকারে দেয়া হয়েছে। কোরআন শরীফে বিভিন্ন সুরায় জঙ্গি এবং সন্ত্রাস ও খুন-খারাবির বিরুদ্ধে যে সমস্ত উক্তি রয়েছে, নবী করিম (স.) বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে যে সমস্ত কথা বলেছেন, এই যে খুন-হত্যা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তিনি যে কথা বলেছেন, তিনি মানবতার পক্ষে কথা বলেছেন, ইসলাম যে শান্তির ধর্ম হিসেবে যে সমস্ত উক্তি, হাদিস-কালামে যে সমস্ত উক্তি শান্তি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রয়েছে- সেগুলো নিয়ে ছোট পুস্তিকা করা হয়েছে। এটার সংক্ষিপ্ত একটা লিফলেটও বের করা হয়েছে এবং সেটাই মসজিদে মসজিদে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, খুতবাহ’র বিভিন্ন স্তর আছে। অন্তত পক্ষে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে উদ্ধৃতিগুলো রয়েছে সেগুলো যেন পাঠ করা হয়। মসজিদের ইমাম সাহেবরা যে বয়ান দেন বা আমাদের ধর্মীয় গুরুরা যখন কথা বলেন- তাদের কিন্তু একটা জনমত সৃষ্টি করার সুযোগ আছে। তারা যেন জনমত সৃষ্টি করতে পারেন সেজন্যই দেয়া হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের আমলেই জঙ্গিবাদের উত্থান: সংসদে অনুপস্থিত সরকারি দলের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত। এদের স্বাধীনতার সূচনালগ্ন থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী এ চক্রের অব্যাহত ষড়যন্ত্র আজও থেমে নেই। দশম জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে নারকীয় তাণ্ডব চালায়। তাদের পেট্রল বোমার আঘাতে কোলের শিশুও রেহাই পায়নি, যা এদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে জামায়াত আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজেদেরকে সংগঠিত করেছে। মিডিয়াতেও তারা আধিপত্য বিস্তার করে। ফলে তাদের মতাদর্শের কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সুযোগ পেলেই সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখা যায়। মূলত ওই সরকারের আমলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। তারা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিবাদী ও অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করার অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়।
গুলশানে জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেট্রল বোমা মেরে, হরতাল ও অবরোধ করে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সফলতা না পাওয়ায় তারা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে নিরপরাধ বিদেশি নাগরিকদের টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করে। তারা ব্লগার, প্রগতিশীল লেখকদের হত্যার মাধ্যমে দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত পহেলা জুলাই গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালানো হয়েছে। যা এদেশের ইতিহাসে এক ঘৃণ্যতম ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে সন্ত্রাসীদেরকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করতে পারে এমন সব প্রচারিত বিষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের পরিচালিত সহিংস ঘটনা ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করার মতো মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মিডিয়া সোচ্চার আছে। তারা প্রকৃত ঘটনা দেশবাসীকে অবগত করেছে। যার ফলে এরূপ সহিংস ও অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত নামক অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ: স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নোত্তরে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ পরবর্তী লেখাপড়া প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। বছরের পর বছর সেশন জট থাকতো, সময়মতো ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে পারতো না। চাকরির বয়স পার হয়ে যেত। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়স প্রথমে ২৫ বছর এবং পরে ২৬ বছর করা হয়েছে। সেখান থেকে ৪ বছর বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে। ত্রিশ বছর করার পরেও যদি কেউ চাকরি না পায় তাহলে তা দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, এখন সেশন জট নেই, ২২-২৩ বছরের মধ্যে মাস্টার্স শেষ হয়ে যায়। চার বছর বাড়ানো হয়েছে, আর কত বাড়াতে হবে? তাহলে কি তারা পৌঢ় বয়সে চাকরি নেবে? ত্রিশের পর তা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। আর যারা পারে, তারা সব সময়ই পারে। যারা পারে না, তারা কোনো সময়েই পারে না। কথায় আছে- ‘যে নয়তে পারে না, তারা নব্বইতেও পারে না।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি: জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের অবসরের বয়স ৫৯ থেকে বৃদ্ধি করে ৬০ বছর করা হয়েছে। গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ করা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো গণকর্মচারীদের জন্য বৈশাখী ভাতা চালু করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে সকল স্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ এবং অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। চিকিৎসা ও শিক্ষা সহায়তাসহ অন্যান্য ভাতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা হয়েছে।