সাধারণ মানুষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সবার প্রিয় সিলেটের সাতকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০১৬, ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ সিলেটের সাতকরা খাওয়ার বাসনা ছিলো খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার সেই বাসনা পূর্ণ হয়েছে সিলেট সফরে। সাতকড়া নামেও যেমন, তেমনি তার ঘ্রাণ।
উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেটের মানুষের ভোজন বিলাস হয় সাতকরায়। সমৃদ্ধ এ ফসলের সুনাম ছড়িয়েছে দেশে-বিদেশে। ফলে সিলেট থেকে বিদেশেও রফতানি হয়ে থাকে এ ফল। শুধু তাই নয়, এখন সাতকরার আচার জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে সিলেটের বাইরেও।
সিলেটের মানুষ ‘তিতা’ এ ফল কেন খায়? এমন প্রশ্নের আপনা-আপনি উত্তর পেয়ে যাবে, কেউ যদি ভোজন বিলাসের অনুষঙ্গ করেন সাতকরার আচার। তবে সাতকরার আচার কীভাবে তৈরি করবেন, তাও জানা থাকা দরকার।
সাতকরা আচারের প্রস্তুত প্রণালীতে কী কী লাগে সেই বর্ণনা দিয়েছেন রাশেদা আক্তার। সিলেটের এ নারী উদ্যোক্তা নিজেই আচার তৈরি করে বিক্রি করেন। শুধু সাতকরা-ই নয়, তার তৈরি আম, জলপাই, বরই, কাঁঠাল, নাগা মরিচ, মাশরুম, মিক্সড আচার ও চাটনি সিলেটের নামি-দামী দোকানগুলোতে বিক্রি হয়।
আর সাতকরার আচার তৈরিতে লাগে লবণ, মশলা, পাঁচফোড়ন, চিনি, সরিষা তেল ও সিরকা। প্রথমে সাতকড়া ধুয়ে নিন। তারপর পিস পিস (স্লাইচ) করে কেটে নিতে হবে। কাটা সাতকরা প্রায় আধা ঘণ্টা রোধে শুকিয়ে নিতে হবে। বেশি শুকালে শক্ত হয়ে যাবে। এবার একটি কড়াইতে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর একটি পরিচ্ছন্ন পাত্রে সিরকা ঢেলে তেলের মতো গরম করে নিতে হবে। তার সঙ্গে পাঁচ কেজি সাতকরার আচার তৈরিতে ২৫০ গ্রাম সিরকা দিতে হবে। সিকরা গরম হয়ে এলে দিতে হবে পাঁচফোড়ন, রশুন, জিরা, আদা ও পরিমাণ মতো লবণ।
এগুলো কষে আসলে তখন কড়াইয়ে সরিষা তেল দিতে হবে। ৫ কেজি সাতকরায় আড়াই কেজি সরিষা তেল লাগবে।
সাতকরার তেতো ভাবটা কমাতে দিতে হবে ১০০ গ্রাম চিনি। কেউ কম চিনি খেতে চাইলে কেজিতে ৫০ গ্রাম অর্থাৎ ৫ কেজিতে ২৫০ গ্রাম চিনি দিতে পারেন। মসলা বিশেষ কালার হয়ে এলে তখন স্লাইচ করা সাতকরা হাড়িতে ঢেলে দিলেন। চুলায় প্রায় আধা ঘণ্টা আগুনে তাপ দিতে হবে। মসলা ভাল করে মিশে গেলে নামিয়ে নিলেন। এবার চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করুন। ব্যস হয়ে গেলো সাতকরার আচার।
আচারতো তৈরি হলো, এবার জেনে নিন রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি। একটি জীবানুমুক্ত কাচের বৈয়াম নিয়ে তাতে সাতকরার তৈরি আচার রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাশেদা আক্তার বলেন, প্লাস্টিকের বৈয়ামে কখনও আচার রাখবেন না। এতে আদ্রতা শোষণ করে এবং ছত্রাক ধরে আচার নষ্ট হয়ে যায়। অনেক গৃহিনীরা বৈয়াম থেকে আচার হাত দিয়ে তুলেন। অনেকে আবার বৈয়ামের মুখ খুলে রোদে শুকাতে দেন এতে আচারে ছত্রাক ধরে নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্লাস্টিকের বৈয়ামগুলোতে দেওয়া আচার রোদে শুকানো হলে জলীয় বাষ্প হওয়া পানি বৈয়ামের ভেতরে থেকে যায়। এ থেকে ছত্রাক সৃষ্টি হয়।
ফলে গৃহিনীরা আচার দিলে চার/পাঁচ মাসের বেশি রাখতে পারেন না। আর সঠিক পদ্ধতিতে আচার তৈরি করলে বছর দেড়েক রাখা যাবে- বলেন রাশেদা।
পরিবেশন: সাতকরার আচার পরিবেশন করা যায় দুই ভাবে। মাছ, মাংস ও ডাল রান্নার সময় দুই টুকরো সাতকরার আচার তরকারিতে দিলে রান্না তরকারি সুস্বাদ হয়ে উঠবে। নতুবা ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস, ডালের সঙ্গে সাতকরা যুক্ত করে খেলে এর স্বাদই আলাদা। আর শুধু সাতকরার আচার খেলে কিছুটা তেতো ভাব লাগবেই।