সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজঃ নিজস্ব শিক্ষক ছাড়া সব আছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০১৬, ৬:২০ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ টিলা ঘেরা সবুজ ক্যাম্পাস। সুন্দর সব ভবন, পরিপাটি শ্রেণিকক্ষ। আছে আধুনিক গবেষণাগার, বড় গ্রন্থাগার, ছাত্র ও ছাত্রীদের হল। এমন ক্যাম্পাস সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের। এখানে ঢুকলেই শিক্ষার্থীদের মন ভালো হয়ে যাওয়ার কথা।
কিন্তু কলেজটিতে গত সোমবার গিয়ে জানা গেল, এখানকার শিক্ষার্থীদের মন ভালো নেই। কারণ, সরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব কোনো শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নেই। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো কলেজটিতে শিক্ষকের ৩৯টি পদ থাকলেও বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মাত্র চারজন শিক্ষক আছেন প্রেষণে। সিলেটের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অতিথি ও খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে চালানো হয় বাকি পাঠদান। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজটিতে এখন শিক্ষার্থী ৪৫৭ জন।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আলী মুহাম্মদ হামজা ও ফয়জুল ইসলাম বললেন, বাইরের শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানোর কারণে সময়সূচি অনুযায়ী ক্লাস হয় না। যেমন সোমবার তাঁদের তিনটি ক্লাস হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়েছে মাত্র একটি।
আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বললেন, কখনো বিকেলে কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে ক্লাস হয়। এতে ছুটির দিনেও ক্লাস করতে হয়। কলেজটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সময় থেকে পৌনে নয় বছর ধরেই এমন অবস্থা।
কলেজটিতে ৩ জন অধ্যাপক, ৭ জন সহযোগী অধ্যাপক, ১২ জন সহকারী অধ্যাপক, ১৫ জন প্রভাষক ও ১ জন শারীরিক শিক্ষা শিক্ষকসহ ৬৭ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও নিজস্ব কোনো জনবল নেই। বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রেষণে এনে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
প্রেষণে রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা মুন্সিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিম বললেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এমসি কলেজসহ সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মানী দিয়ে এনে ক্লাস নেওয়া হয়। জনবলই এখানে মূল সমস্যা। তবে আশার কথা, জনবলের অনুমোদন হয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালের শুরু থেকেই নিজস্ব শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
কলেজের প্রশাসনিক সূত্র বলেছে, সিলেট শহরের টিলাগড়ের আলুরতল এলাকায় আট একর জায়গা নিয়ে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০০৫ সালের অক্টোবরে। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি। ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ দিয়ে এর যাত্রা শুরু। এখন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়েও বিএসসি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেল, একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি কম্পিউটার ভবন, একটি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ভবন ও একটি সিভিল ভবন রয়েছে। প্রতিটি ভবনই চারতলা। এ ছাড়া তিনতলা গ্রন্থাগার ভবন, অধ্যক্ষের দোতলা বাসভবন, শিক্ষকদের জন্য চারতলার দুটি আবাসিক ভবন ও কর্মচারীদের জন্য পাঁচতলা একটি আবাসিক ভবন রয়েছে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করলেন, এখানে অবকাঠামোর প্রতি যত নজর দেওয়া হয়েছে, তার সামান্যতমও দেওয়া হয়নি শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবলের প্রতি। অথচ শিক্ষকই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ামক শক্তি।
বর্তমানে অধ্যক্ষ হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আবদুল হালিম। সোমবার দপ্তরে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
চূড়ান্ত পর্বের ছাত্র মাহিন নূর ইসলাম বললেন, খণ্ডকালীন শিক্ষকদের সম্মানী দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে। এ জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রেজিস্ট্রেশন ফি (ছয় মাস পর) ৩ হাজার ৪০০ টাকা থাকলেও এখন করা হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকা। পরিবহন খাতে টাকা নেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাস নেই। গবেষণাগার থাকলেও লোকবলের অভাবে ঠিকমতো ব্যবহৃত হয় না। গ্রন্থাগারও সব সময় খোলা থাকে না।
অরক্ষিত ছাত্রী হল: ক্যাম্পাসেই ছাত্রদের জন্য ৩৬০ আসনের দুটি পাঁচতলা ছাত্রাবাস আছে। ছাত্রীদের জন্য ৮০ আসনের পাঁচতলা একটি হল আছে। কিন্তু সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় ছাত্রী হলটি অনেকটাই অরক্ষিত থাকে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সোমবার বিকেলে ছাত্রী হলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক ও ভবনের কলাপসিবল ফটক খোলা। মূল ফটকে দারোয়ান নেই। কলাপসিবল ফটকে দুজন যুবককে দেখা গেল। ফটকের বাইরে থেকে প্রশ্ন করলে তাঁরা বললেন, হলে ইন্টারনেট সংযোগের কাজে এসেছেন। হলের একজন ছাত্রী বলেন, ক্যাম্পাসে প্রবেশের মূল ফটকের নিরাপত্তা প্রহরীর হাতেই মূলত ছাত্রী হলের চাবি থাকে। ফলে রাতে কোনো ছাত্রী অসুস্থ হলে সমস্যা হয়।