‘জঙ্গি’ ফিরলো বউ নিয়ে !
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫০:৫২,অপরাহ্ন ২৫ জুলাই ২০১৬
সুরমা নিউজ ডেস্ক :
যশোর পুলিশের প্রকাশিত তালিকায় এক নম্বরে থাকা ‘জঙ্গি’ কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্না ঘরে ফিরে এসেছেন। তবে খালি হাতে নয়। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন সদ্য বিয়ে করা বউকে।
সোমবার ভোরে নববধূকে নিয়ে যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার নিজ বাড়িতে ফেরেন মুন্না। তিনি ওই এলাকার আবদুস সোবহানের ছেলে।
এরপর বেলা ১১টার দিকে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীকে নিয়ে মুন্না কোতোয়ালি থানায় হাজির হন। থানায় অবস্থানকালে মুন্না সাংবাদিকদের বলেন, দুই বছর আগে টেলিভিশনে খেলা দেখা নিয়ে মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে ঢাকায় চলে যান। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না তার। গত শনিবার (২৩ জুলাই) মোবাইল ফোনে বিয়ে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে জানতে পারেন পুলিশের সন্দেহভাজন জঙ্গি তালিকায় তার নাম রয়েছে।
এদিকে, বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে শনিবার রাতে পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় চলে যান। পরদিন রোববার (২৪ জুলাই) দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকার মনির খানের মেয়ে ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন।
জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করে কামরুজ্জামান মুন্না বলেন, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে ঢাকায় যাওয়ার পর কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকায় একটি ডেকোরেটরের দোকানে কাজ নেন। এরপর পুরান ঢাকার ইসলামবাগে মাইশা প্লাস্টিক কোম্পানিতে চাকরি নেন। সেখানে থাকার সুবাদে ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে মেয়ের পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। এরপর মেয়ের পরিবার থেকে বলা হয় অভিভাকরা না এলে বিয়ে হবে না। এরপর মুন্না বাড়িতে যোগাযোগ করে বিয়ের কথা জানান। দুই বছর পর ছেলের সন্ধান পেয়ে মুন্নার স্বজনরা ঢাকায় যায়। এরপর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।
তার ছোটভাই যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্র আবদুল আহাদ জানান, মুন্না নিখোঁজের বিষয়ে তারা যখন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে আসেন তখন যা লিখতে চেয়েছিলাম, পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পুলিশ নিজ ইচ্ছামতো জিডি লিখেছে, যেখানে আমার ভাইকে জঙ্গি হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।’ আবদুল আহাদ আরও জানান, যেহেতু ভাই ফিরে এসেছে, তাই আরেকটি জিডি করতে চাই। জিডি লিখেও এনেছি। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত ডিউটি অফিসার জিডি নেননি।
এদিকে মুন্না থানায় আসার খবরে বেলা পৌনে একটার দিকে কোতোয়ালি থানায় আসেন যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। তিনি থানার অফিসার, মুন্না ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।
থানায় এসপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুন্নার পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করে বলা হয়েছিল সে নিখোঁজ, জঙ্গি তৎপরতায় সংযুক্ত হতে পারে। পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা তার খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারে প্রায় তিন বছর তার খোঁজ নেই। ফলে তাকে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত বলে ধরে নেয় পুলিশ।’
পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ‘এখন মুন্না পুলিশ হেফাজতে থাকবে। তার তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে নির্দোষ বুঝতে পারলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তাকে আইনগত সহায়তাও দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, রোববার (২৪ জুলাই) জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় পুলিশ পাঁচজন জঙ্গির ছবি সংবলিত পোস্টার হস্তান্তর করেছে কমিটির সদস্যদের মধ্যে। ওই পোস্টারে যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার আবদুস সোবাহানের ছেলে কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্নার (২৪) নাম ও ছবি রয়েছে।
এদিকে মুন্না নববধূ নিয়ে ফিরে আসায় পুলিশের ‘মনগড়া’ জঙ্গির সন্দেহে পাঁচজনের পোস্টার ও তালিকা প্রকাশ ঘটনায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানানো হয়েছে।