বৃটেনে বিদেশী শিক্ষার্থীদের কাজ বন্ধ ও ভিসাসহ অন্যান্য সুবিধা সীমিত করছে সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:২৫:১৫,অপরাহ্ন ২৪ জুলাই ২০১৬
লন্ডন প্রতিনিধি: থেরেসা মে’র নেতৃত্বাদীন নতুন ব্রিটিশ সরকার বিদেশী স্টডেন্ট ভিসায় আরো শর্ত আরোপ করতে যাচ্ছে। এতে করে বৃটেনে আসা শিক্ষার্থীরা আরও কিছু কড়াকড়ির সম্মুখিন হতে পারেন। এই নিয়মে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করার পাশাপাশি তাদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সীমিত করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতকোত্তর কোর্সের মেয়াদ আরও সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। এসব কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে বেশ আগেই আলোচনা শোনা যাচ্ছিল। সর্বশেষ গেল ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের ওয়েবসাইটে এসব নিয়ম কার্যকরের ঘোষণা দেয়া হয়।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্য ইইউ ছাড়ার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা করা হচ্ছিল যে- যুক্তরাজ্যে ইইউভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীদের আগমন কমবে এবং ইইউর বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি পোষাতে হবে। যে কারণে ইইউর বাইরের শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে তাদের জন্য ভিসানীতি সহজ করাও প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। কিন্তু সরকারি নীতি বাস্তবে সেই প্রত্যাশার বিপরীতই মনে হচ্ছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী এতদিন সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত (পাবলিক ফান্ডেড) কলেজগুলোতে ভর্তি হলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা করে কাজ করার সুযোগ পেতেন। নতুন নিয়মে সেই সুযোগ রহিত করা হয়েছে। আগস্ট থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে।
এ কারণে শুধু ইউনিভার্সিটি এবং সরাসরি ইউনিভার্সিটির অধীন কলেজে (অ্যামবেডেড কলেজ) পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য কেবল সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ অবশিষ্ট রইল।
কলেজে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য আরেকটি বড় পরিবর্তন হলো, নতুন কোনো কোর্সে ভর্তির জন্য তারা যুক্তরাজ্যে থেকে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করতে পারবেন না। কোর্স সম্পন্ন হলেই তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। নতুন কোর্সের জন্য নতুন করে আবেদন করে তাদের পুনরায় যুক্তরাজ্যে আসতে হবে। এই নিয়মটি কার্যকর হবে নভেম্বর থেকে।
স্নাতকোত্তর কোর্সের (ফার্দার এডুকেশন লেভেল) জন্য এত দিন সর্বোচ্চ তিন বছর নির্দিষ্ট ছিল। তা কমিয়ে নতুন নিয়মে দুই বছর করা হয়েছে।
এর ফলে স্নাতক সম্পন্ন করার পর কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য দুই বছরের বেশি ভিসা পাবে না। কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে পড়া সব বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য নভেম্বর থেকে এই নিয়মটি কার্যকর হবে। ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা এক কোর্স সম্পন্ন করে সমপর্যায়ের কোর্সের জন্য পুনরায় ভর্তি হতে পারবেন না।
পেশাগত দক্ষতার জন্য জরুরি প্রমাণ করতে পারলেই কেবল তারা সেটি করতে পারবেন। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের ডিফেডেন্ড হয়ে যারা যুক্তরাজ্যে আসেন (সাধারণত স্বামী বা স্ত্রী), তাদের কাজের ক্ষেত্রে এত দিন কোনো বিধিনিষেধ না-থাকলেও আসছে নভেম্বর থেকে তারা কেবল দক্ষ বলে বিবেচিত হয় (স্কিলড ওয়ার্ক), এমন কাজই করতে পারবেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ৬ বছর যাবৎ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে ব্রিটিশ ভিসানীতিতে নজিরবিহীন সব কড়াকড়ি আরোপ করেন। সেই থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঠিক পরের দিনই শিক্ষার্থী ভিসায় নতুন কড়াকড়ির ঘোষণা এল। সরকারে এই ঘোষনার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাউথ এশিয়াসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে আসা স্টুডেন্টরা।