শাবিপ্রবির প্রতিষ্ঠাতা ভিসির ইন্তেকাল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০১৬, ৩:০৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ: শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স বিভাগের ডীন ও ভাষা সৈনিক, ডঃ.প্রফেসর ছদরুদ্দীন আহমদ চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন। -ইন্না্লি্ল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শনিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় ঢাকার ল্যাব-এইড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করে। রোববার গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ী বড় মোকাম ঈদগাহ্ মাঠে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী একাধারে শিক্ষাবিদ, পদার্থ বিজ্ঞানী, ভাষাসৈনিক, গবেষক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। এছাড়া তিনি পরিবেশ আন্দোলনের সাথেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। সিলেট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন এবং এমসি কলেজ থেকে আইএসসি সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে কৃতিত্বের সহিত অনার্স ও মার্স্টাস শেষ করেন।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষকতা দিয়ে শুরু এই বরেণ্য শিক্ষাবিদ দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছাড়াও আর তিনটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের একজন ছিলেন তিনি।
১৯৬৬ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে ‘এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্বীকৃত জার্নালে তাঁর ৪০টিরও অধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এই শিক্ষাবিদের। এছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন দক্ষ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
১৯৮৯ সালে থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে নিজস্ব জায়গায় ও ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে তাঁর দক্ষ প্রশাসকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৩ জন শিক্ষক ও ২১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটি প্রথম থেকেই সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বেশ কয়েকটি ব্যাচ পাস করে বের হয়েই দেশের একমাত্র সেশনজটমুক্ত বিশ^বিদ্যালয় হিসাবে দেশে বিদেশে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করে । বিদেশী শিক্ষার্থীরাও ছুটে আসেন প্রথম থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অগ্রদুত এই শিক্ষাবিদকে ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী ২৪তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে।
এছাড়া ছদরুদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতা পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রধান, শহীদ হাবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির সদস্য, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের প্রশাসক, সিন্ডিকেট সদস্য, সিনেট সদস্যসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিল সদস্য, অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ডিন অব স্টাডিজ (একাডেমিক ভাইস চ্যান্সেলর), সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০০৬ সাল থেকে সিলেট অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন কন্যা সšতানের জনক। তাঁর বড় মেয়ে নাসেহা চৌধুরী, ছোট মেয়ে নাইমা চৌধুরী ঢাকায় বসবাস করছেন। মেজো মেয়ে প্রফেসর ড. নাজিয়া চৌধুরী বর্তমানে শাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর।